হবিগঞ্জের নাট্যসংগঠক রুমা মোদক মন্তব্য করলেন- হিন্দু বিধবা নারীরা স্বামীর সম্পত্তির অধিকার পেলেন, তাইলে অবিবাহিত বা স্বামী পরিত্যক্ত নারীর কি হবে?? সম্পত্তির অধিকার পেতে হলে আগে বিয়ে করতে হবে, তারপর বিধবা হতে হবে! পিতার সম্পত্তিতে কন্যাসন্তানের অধিকার এখন সময়ের দাবি
স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের হিন্দু বিধবা নারীরা স্বামীর সব সম্পত্তিতে (অকৃষি-কৃষি) ভাগ পাবেন বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বুধবার এ সংক্রান্ত একটি মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ রায় দেন হাইকোর্টের বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক বেঞ্চ।
বিধবারা স্বামীর সব সম্পত্তির ভাগ পাওয়ার অধিকার রাখে না দাবি করে ১৯৯৬ সালে খুলনা কোর্টে মামলা করেন এক নারীর দেবর জ্যোতিন্দ্রনাথ মন্ডল। বিচারিক আদালত ওই মামলার রায়ে বলেন, বিধবারা স্বামীর অ-কৃষি জমিতে অধিকার রাখলেও কৃষি জমির অধিকার রাখেন না।
এরপর সে রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা হয়। পরে উভয়পক্ষের দীর্ঘ শুনানি এবং বিশেষজ্ঞ আইনজীবীদের মতামত নিয়ে হাইকোর্ট তার রায়ে বললেন, হিন্দু বিধবা নারীরা অ-কৃষি জমির মতো স্বামীর কৃষি জমিরও মালিক হবেন। হাইকোর্টের এ রায়ের ফলে এখন থেকে কৃষি জমিসহ স্বামীর সব সম্পত্তিতে স্ত্রীরা ভাগ পাবেন।
৮৩ বছর ধরে স্বামীর কৃষি জমিতে কোনো প্রাপ্য ছিল না হিন্দু বিধবাদের। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে এই অসঙ্গতি দূর করে রায় দিলেন হাইকোর্ট। বুধবারের এ রায়ের ফলে হিন্দু নারীরা সেই উত্তরাধিকারের স্বীকৃতি পেলেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অপরদিকে, এ রায়ের পর হবিগঞ্জের নাট্যসংগঠক রুমা মোদক তাঁর ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দেন। তাতে তিনি মন্তব্য করেন- হিন্দু বিধবা নারী স্বামীর সম্পত্তির অধিকার পেলেন। লক্ষ্য করবেন ‘হিন্দু বিধবা নারী’। তাইলে অন্য নারীদের কি হবে? অবিবাহিত বা স্বামী পরিত্যক্ত নারীর?? সম্পত্তির অধিকার পেতে হলে আগে বিয়ে করতে হবে, তারপর বিধবা হতে হবে?? বিষয়টা একটু বিশ্লেষণ করা যাক। ১৯৩৭ সালে প্রণীত আইন অনুযায়ী হিন্দু মেয়েরা পিতার কিংবা স্বামীর কারো সম্পত্তির উত্তরাধিকারী নয়। বিবাহিতা কিংবা অবিবাহিতা নারী সর্বত্রই সে আশ্রিতা। আর স্বামী পরিত্যক্ত, অবিবাহিত বা সেপারেটেড হলে (হিন্দু আইনে ডিভোর্স নেই) তাঁর দাঁড়াবার কোন জায়গাই নেই। আমি একাধিক স্বামী পরিত্যক্ত, অবিবাহিত নারীকে জানি, জন্মদাতা পিতার ভিটাতেই ভয়াবহ মানবেতর আর অসম্মানের জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। ভাইয়ের সংসারে গৃহকর্মীর মতো আশ্রিতা হয়ে দিন পার করছেন, আর আতংকে থাকছেন কখন তাকে উৎখাত করা হয়!
রুমা মোদক বলেন- এতোদিন বিধবারা শুধু স্বামীর ভিটায় বাস করতে পারতেন, উত্তরাধিকারী ছিলেন না। ফলে সহজেই তাঁকে বাস্তুহারা করা যেতো। আশেপাশে লক্ষ্য করলে দেখবেন সন্তানহীন, কিংবা কন্যা সন্তান সহ বিধবা নারীরা স্বামীর ভিটা ত্যাগ করে বাপ/ভাইয়ের কাছে আশ্রিতার জীবনকেই মেনে নিতে বাধ্য হন। আজ যে ঐতিহাসিক রায়টি হলো তাতে বিধবারা স্বামীর বসত-ভিটায় শুধু বাস করা নয়, উত্তরাধিকারী হলেন। উত্তরাধিকারী হলেন স্বামীর কৃষি জমিরও। এখন আর চাইলেও তাঁকে উৎখাত করা সম্ভব নয়। তিনি উত্তরাধিকারী হলেন, অর্থাৎ বিক্রির অধিকারও পেলেন। এ রায় বৈপ্লবিক। একবিংশ শতাব্দীর কলংকমোচন। পিতার সম্পত্তিতে কন্যাসন্তানের অধিকার এখন সময়ের দাবি। দ্রুত এই আইনটি করেও আরেকটি কলঙ্কমোচন করা হবে প্রত্যাশা করি। স্বামী পরিত্যক্ত বা অবিবাহিত কোন নারী পিতার ভিটায় অনাহুত আশ্রিতার জীবন কাটাতে বাধ্য হবেন না।