মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ হবিগঞ্জ আড়াইশ’ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে স্যালাইনের স্ট্যান্ড হিসেবে বাঁশ ব্যবহার করা হচ্ছে। সরেজমিন হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে এ চিত্র দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে শহরের গানিংপার্ক এলাকার আহমেদ আবিদুর রহমান জানান, গত বুধবার তার এক নিকটাত্মীয়কে পিঠে ব্যাথার অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য আড়াইশ’ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাকে পেইং ওয়ার্ডের যে বেড দেয়া হয় তাতে দেখা যায় বেডের সাথে একটি কাঠের লম্বা টুকরো বাধা রয়েছে। ওই কাঠের টুকরোয় রয়েছে সুচালো লোহা গাথা। হাতে পায়ে যে কোন সময় ওই লোহা গেথে রোগী কিংবা রোগীর স্বজনরা আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারেন। এ ব্যাপারে কথা বলে জানা যায়, ওই ওয়ার্ডে স্যালাইন দেয়ার কোন স্ট্যান্ড না থাকায় বিকল্প হিসেবে এই কাঠের টুকরো বাধা হয়েছে। ওই কাঠের টুকরোয় স্যালাইন ঝুলিয়ে রাখা হয়। এছাড়া হাসপাতালের বিভিন্ন বেডে বাধা রয়েছে লম্বা বাঁশের টুকরো।
হাসপাতালে আগত এক রোগীর স্বজন জানান- রোগীকে স্যালাইন দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কারণ হাসপাতালে স্ট্যান্ড সংকট রয়েছে। তাই অনেকে বাধ্য হয়ে নিজ উদ্যোগে বাঁশ এনে বেডের সাথে বেঁধে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ মুমিন উদ্দিন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান- বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি এখনই খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।
হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য রোগী নিয়ে গিয়ে বাঁশের ব্যবহার দেখে জাতীয়তাবাদী আইন ছাত্র ফোরাম হবিগঞ্জ জেলা শাখার সদস্য সচিব ফেসবুকে “হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে স্যালাইনের স্ট্যান্ড হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে বাঁশ!!” শিরোনামে তার মন্তব্য তুলে ধরেন। নি¤েœ তার মন্তব্য সংকলিত করে তুলে ধরা হলো-
গতকাল রাত্রে আমার এক আত্মীয় (রোগীকে) নিয়ে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলাম। কর্তব্যরত ডাক্তার আমার রোগীকে দেখে হাসপাতালে ভর্তির করার জন্য পরামর্শ দিলেন। কি আর করা রোগীকে নিয়ে গেলাম নিচতলায় মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করার জন্য।
হাসপাতালে দালালদের কথা নতুন করে কি আর বলবো। রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পর থেকে উনারা আমার পিছু ছাড়েনি। শেষ পযন্ত ঐ দালাল চক্রের কাছে পরাজিত হইতে হয় হাসপাতালে আসা রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের।
যাই হোক আসা যাক আমার মূল কথায় আমার রোগীকে নিয়ে ওয়ার্ডে যাওয়ার সাথে সাথেই চোখে পড়ল বাঁশ, অধিকাংশ চিকিৎসাধীন রোগীর সিট বেডের সাথে ঝুলানো আছে একটি করে ২-৩ হাত লম্বা বাঁশ। স্বাভাবিকভাবে মনে প্রশ্ন জাগলো এই সব বাঁশের মানে কি?
এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজতে আমার বেশি সময় লাগল না। ওয়ার্ডে কর্তব্যরত সেবিকা আমাকে বললেন ভাই আপনার রোগীকে দ্রুত স্যালাইন দিতে হবে। সাথে সাথে খোঁজতে শুরু করলাম স্যালাইন দেওয়ার স্টেন। কোথাও খুজিয়া পাইলাম না এই মহামূল্যবান জিনিসটি। এই মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে মোট রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩০ জন। দুঃখজনক হলেও সত্য এত সব রোগীর জন্য স্যালাইন দেওয়ার নেই কোন স্যালাইনের স্টেন। স্যালাইন দেওয়ার জন্য রোগীদের ভরসার মাধ্যম হিসাবে ব্যাবহার করতে হচ্ছে বাঁশ অথবা জানালার লোহার গ্রিল। শিশু ওয়ার্ডের চিত্রও প্রায় একই রকম।
আমি হতাশা নিয়ে অনেক খোঁজাখুজি করেও হাসপাতালে একখানা স্টেন বা বাঁশ পাইলাম না। পরে জানিতে পারিলাম স্যালাইনে ব্যবহারিত বাঁশগুলো রোগীরা নিজেরাই সংগ্রহ করিয়া আনিয়াছে। আমি একটি বাঁশ একজন রোগীর কাছ থেকে ধার এনে আমার রোগীর স্যালাইন স্টেন হিসাবে ব্যাবহার করিলাম। এই হল বর্তমানে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের হাল চিত্র!
বিঃদ্রঃ যাঁরা চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে যাবেন দয়া করে সাথে একখানা ২-৩ হাত লম্বা বাঁশ নিয়া যাবেন বলাতো যায় না বাঁশের প্রয়োজন হতে পারে।। পরিশেষে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে দায়িত্বশীল প্রশাসনের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি।