সকালে বাহুবলের হাফিজপুর মির্জাটুলা থেকে সিএনজি অটোরিকশায় মিরপুর বাজারে যাচ্ছিল কিরন। সন্ধ্যায় তাকে নবীগঞ্জ বাঁশবাজার এলাকায় অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে নবীগঞ্জ শহরজুড়ে কল্লা কাটা আতঙ্ক দেখা দেয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নবীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে কল্লা কাটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। পদ্মা সেতুতে কল্লা লাগবে এমন গুজবে কান না দিতে সরকারের পক্ষ থেকে বার বার বলা হলেও মানুষের আতঙ্ক কাটছে না। এরই মধ্যে নেত্রকোনায় এক শিশুর কাটা মাথা ব্যাগ থেকে উদ্ধার ও কাটা মাথা বহনকারীকে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে এক কিশোরকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনাটি নবীগঞ্জে আতঙ্ক আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
নবীগঞ্জ থেকে মোঃ নাবিদ মিয়া জানান, বানিয়াচং উপজেলার কুতুবখানির নুরুল ইসলামের পুত্র কিরন মিয়া ওরফে মোচ্ছাব্বির (১৫) বাহুবল উপজেলার হাফিজপুর মির্জাটুলা গ্রাম থেকে শুক্রবার সকাল ৯টায় সিএনজি অটোরিকশাযোগে মিরপুর বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। সারাদিন পার হয়ে গেলেও কিরন মিরপুর বাজারে তার মামাতো ভাইয়ের দোকানে যায়নি। তবে সন্ধ্যার দিকে তাকে নবীগঞ্জ পৌর বাঁশবাজার এলাকায় পাওয়া গেলে পরিচয় জানার পর খবর দেওয়া হয় কিরনের পরিবারের লোকজনকে। খবর পেয়ে কিরনের বাড়ির লোকজন নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। এদিকে নবীগঞ্জ পৌর বাঁশবাজার অজ্ঞান অবস্থায় এক কিশোরকে উদ্ধার করা হয়েছে এ খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে নবীগঞ্জ শহরজুড়ে সাধারণ মানুষদের মধ্যে নানা আলোচনা ও কল্লা কাটা আতঙ্ক দেখা দেয়। অজ্ঞান কিশোরকে দেখতে আশপাশের গ্রামের লোকজন নবীগঞ্জ হাসপাতালে ভিড় জমান। প্রত্যক্ষদর্শী এক বাঁশ বিক্রেতা জানান, সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ তারা দেখতে পান একটি সিএনজি থেকে ওই কিশোরকে ফেলে গাড়িটি দ্রুতগতিতে চলে যায়। এসময় বাঁশ বিক্রেতারা অজ্ঞান কিশোরকে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। জ্ঞান ফিরে ঘটনার বর্ণনা দেয় কিশোর কিরন। সে জানায়, মির্জাটুলা বাজার থেকে সকাল ৯টায় মিরপুর বাজারে যাওয়ার জন্য একটি সিএনজিতে উঠে। পরে হঠাৎ করে কিভাবে কে বা কারা তাকে একটি রুমাল দিয়ে মুখ চেপে ধরে। এরপর আর কিছু বলতে পারে না। জ্ঞান ফিরে দেখে নবীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি আছে।
এদিকে, নেত্রকোনায় কাটা মাথা উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে ওই জেলার পুলিশ। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে নেত্রকোনা জেলার পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের নিউটাউন অনন্ত পুকুরপাড় এলাকায় শিশু সজীবের কাটা মাথা ব্যাগে করে নিয়ে যাওয়ার সময় রবিন নামের এক যুবককে আটক করে জনতা। এ সময় গণপিটুনিতে নিহত হয় রবিন। সে মাদকাসক্ত ছিল। তার বাড়ি পৌর শহরের কাটলী এলাকায়। রবিন পেশায় এজন রিকশাচালক। ধারণা করা হচ্ছে, রবিন মনের পুরোনো কোনো জেদ বা বিকৃত মানসিকতা থেকেই সজীবের সঙ্গে নির্মম ও বর্বরোচিত এ ঘটনা ঘটিয়েছে। পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরেও এ ঘটনা ঘটতে পারে। এটি শুধুই একটি হত্যাকান্ড। এর সঙ্গে ছেলে ধরা বা পদ্মা সেতু-সংক্রান্ত গুজবের কোনো সম্পর্ক নেই।’
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে নেত্রকোনা শহরের কাটলী এলাকা দিয়ে রবিন হাতে ব্যাগ নিয়ে দৌড়াচ্ছিল। এলাকায় তাকে নতুন মনে করে স্থানীয় লোকজন তার নাম-পরিচয় জানতে চান। রবিন আমতা আমতা করতে থাকলে লোকজন জিজ্ঞাসা করেন, তার ব্যাগের ভেতরে কী আছে? রবিন বলে, তার ব্যাগের ভেতরে ভাঙাড়ির জিনিস আছে। তাকে সন্দেহ হলে ওই ব্যাগটি দেখতে চান স্থানীয়রা। কিন্তু সে ব্যাগটি না দেখাতে চাইলে স্থানীয়রা ব্যাগ নিয়ে টানাহেঁচড়া করতে থাকে। একপর্যায়ে ব্যাগের ভেতর থেকে শিশুর কাটা মাথা ছিটকে পড়ে। এর পরই রবিনকে ধাওয়া দেয় লোকজন। একপর্যায়ে শহরের নিউটাউন এলাকার অনন্ত পুকুরপাড়ে তাকে পিটুনি দেন এলাকাবাসী। এতে ঘটনাস্থলেই রবিনের মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সজীবের কাটা মাথা ও রবিনের লাশ উদ্ধার করে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠায়।