আবুল কালাম আজাদ ॥ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সারাদেশে ছুটি ঘোষণা করা হলেও হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার ২৪টি চা বাগানের প্রায় ৪০ হাজার চা শ্রমিক পাচ্ছেন না ছুটি। তাদের দেওয়া হচ্ছে না সচেতনতামূলক কোনো পরামর্শও। এসব শ্রমিকদের ব্যাপারে বাগান কর্তৃপক্ষ রয়েছে নিরব ভূমিকায়। যে কারণে শ্রমিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। ছুটির জন্য চা শ্রমিক বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও না পেয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে সব চা বাগান বন্ধ করে দিবেন জানিয়েছেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় যুগ্ন সম্পাদক নৃপেন পাল।
জানা যায়, ছুটির দাবিতে গত শুক্রবার অনশন করেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে চা শ্রমিকরা। লস্করপুর ভ্যালীর বিভিন্ন বাগানের শ্রমিক এবং বাংলাদেশ টি এস্টেট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন বিভাগীয় শ্রম দপ্তরে উপ-পরিচালক বরাবর ছুটির আবেদন করেছেন। তারা বলছেন করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সরকার সবাইকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন, বন্ধ করে দিয়েছে সব যান চলাচল ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট থেকে সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। কার্যত দেশে চলছে অঘোষিত লকড ডাউন। কিন্তু চা বাগানের কর্মচারীদের ছুটি দেওয়া হচ্ছে না। তারা অবিলম্বে ছুটির ঘোষণা দাবি করেন।
কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিনের মতোই সকাল থেকে চা-শ্রমিকরা এসে কাজে যোগদান করেছে। রুটিন অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে শ্রমিকরা। তারা জানান, তাদের ছুটি নেই। তাই কাজে এসেছেন। আর কাজ না করলে খাবার জুটবে কই থেকে। মালিক ও বড় বাবুরা ঘরে বসিয়ে টাকা দেবে না। করোনা ভাইরাস নিয়ে তারা বলেন, এটার কথা শুনেছি। তবে উপরওয়ালা আমাদের রক্ষা করবেন।
উপজেলার একাধিক সামাজিক ও সচেতন ব্যক্তিরা জানান, খুব দ্রুত সম্ভব চা শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে ঘরে থাকা ও করোনা ভাইরাস সম্বন্ধে সচেতন করতে হবে। অন্যথায় যদি কোনো একজন শ্রমিক আক্রান্ত হয়ে যান। তাহলে পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করবে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক নৃপেন পাল জানান, আমরা চা শ্রমিকদের ছুটির দাবি জানিয়েছি। কিন্তু বাগান কর্তৃপক্ষ এখনও এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানায়নি। আজ সোমবারের মধ্যে চা বাগান বন্ধ ঘোষণা না করলে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে আমার ভ্যালীর সকল চা বাগান বন্ধ করে দিব। কাল থেকে কোন চা শ্রমিক আর কাজে যাবে না।
চা শ্রমিক আদিবাসী ফোরামের সভাপতি স্বপন সাওতাল জানান, উপজেলার লস্করপুর ভ্যালীর ২৪টি চা বাগানে নিয়মিত অনিয়মিত প্রায় ৪০ হাজার চা শ্রমিক কাজ করছেন। এসব বাগানে প্রতিদিনই কাজ করছেন শত শত চা শ্রমিক। তারা জীবণের ঝুকি নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু ওই শ্রমিকদেরকে করোনা ভাইরাস সমন্ধে সচেতন থাকার পরামর্শও দিচ্ছেন না কেউ। এগিয়ে যাচ্ছে না কোন সামাজিক সংগঠনও। তাছাড়া চা বাগানের মালিক পক্ষ থেকেও নেয়া হয়নি কোন উদ্যোগ। দেশের সব কিছু বন্ধ ঘোষণা করা হলেও এখনো ছুটি পায়নি উপজেলার চা শ্রমিকরা। ফলে ওই সকল বাগান ও চা শ্রমিকদের মাঝে বাড়ছে করোনার ঝুঁকি। পাশাপাশি বাগান মালিকদের এমন আচরণের কারণে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে। চা বাগানে ছুটির দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে চা বাগানের শ্রমিকরা দাবি জানিয়ে আসছে। মালিকপক্ষের কাছে ছুটির জন্য আবেদন নিবেদন করছেন বাগানের শ্রমিকরা।
এ বিষয়ে ভ্যালীর সভাপতি ও চন্ডিছড়া চা বাগান সিনিয়র ব্যবস্থাপক মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, বাগান বন্ধের বিষয়ে সরকার থেকে তারা কোন নির্দেশনা পাননি। এ পর্যন্ত সরকারের তরফে কোনো প্রকার সহযোগিতা আসেনি। এছাড়া বাগান এলাকায় বহিরাগত মানুষের আনাগোনা বন্ধ রয়েছে বলেও তিনি জানান। তিনি জানান, চা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে কখনোই এ ভাইরাস ছড়াবে না যদি বহিরাগতরা বাগানে না আসে। কারণ বাগানে শ্রমিকরা ছাড়া আর কেউই নেই। তাই চা শ্রমিকদের নিরাপদ রাখতে আমরা চা বাগানে বহিরাগতদের আসতে নিষেধ করে দিয়েছি। তিনি জানান, আমরা চা শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার তাই করছি, তাদের মাস্ক দিচ্ছি, সাবান দিচ্ছি, সচেতনতার জন্য লিফলেট বিতরন করা হয়েছে। সর্দারদের প্রশিক্ষন দেওয়া হয়েছে এবং সকল শ্রমিকদের হাত ধুয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া সন্ধা ৬টার পর বাগানে কোন প্রকার মদের দোকান বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। বাইরের কেউ যাতে না আসে সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে। ৬টার পর বাগানের অভ্যান্তরের সকল দোকানপাঠ বন্ধ রাখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সত্যজিত রায় দাশ জানান, চা শিল্প রয়েছে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এ বিষয়ে এখনও আমরা কোন নির্দেশনা পাইনি। তবে বিষয়টি নিয়ে বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।