ভারতের ত্রিপুরা থেকে ধেয়ে আসছে বানের পানি ॥ খোয়াই নদীতে প্লাবন

আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ তিনদিনের টানা বর্ষণ, পাহাড়ী ঢল ও ভারতের ত্রিপুরা থেকে ধেয়ে আসা বানের পানিতে খোয়াই নদীতে প্লাবন দেখা দিয়েছে। নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড়ী ঢলে বাড়ছে করাঙ্গী ও সুতার নদীর পানি। এদিকে খোয়াই, করাঙ্গী ও সুতাং নদীর পানিতে নদী এলাকার কমপক্ষে ২০টি গ্রামের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ছে। এসব গ্রামের আউশ ফসল, বীজতলা ও অসংখ্য পুকুর পানিতে ডুবে গেছে। খোয়াই নদীর পাকুড়িয়া অংশে সিরাজ মিয়ার খামারের নিকট ভাঙ্গনের আশঙ্কা রয়েছে। খোয়াই নদীর বাল্লা সীমান্তে পানি বিপদসীমার ১৭৫ সেঃ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পাড় ভেঙ্গে ঝুকির মধ্যে রয়েছে ওই এলাকার ৮/১০টি গ্রাম। যে কোন সময় নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়তে পারে ওই এলাকা।
এদিকে পাহাড়ী ঢলের কারণে পুরাতন ঢাকা সিলেট মহাসড়কের চুনারুঘাট থেকে সাতছড়ি পর্যন্ত কমপক্ষে ৬টি স্থানে সড়কে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ গতকাল সকাল থেকে বৃষ্টির মধ্যে সড়ক ভাঙ্গন রক্ষায় কাজ শুরু করেছে। তারা বালির বস্তা ফেলে পাহাড়ী ঢল থেকে সড়কটির ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করছেন। অপরদিকে উপজেলা সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান রয়েছে হুমকির মুখে। পাহাড়ী ঢলে উদ্যানের ছড়ার পানিতে পাহাড় ভেঙ্গে পড়ছে। পাহাড় ভেঙ্গে পুরাতন মহাসড়কের ৩টি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এছাড়া পার্কের ট্রেইল রয়েছে আশঙ্কাজনক অবস্থায়। যে কোন সময় পার্কের ট্রেইল ঢলে ভেঙ্গে নিয়ে যেতে পারে। ভেঙ্গে নিয়ে যেতে পারে পুরাতন মহাসড়ক।
গতকাল রবিবার সকালে সরজমিনে দেখা যায়, পুরাতন মহাসড়কের চন্ডিছড়া, রামগঙ্গা, চাকলাপুঞ্জি ও সাতছড়ি এলাকায় কমপক্ষে ৬টি স্থানে পাহাড়ী ঢলে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি বাড়লে যে কোন সময় এসব স্থানে সড়ক ভেঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। গতকাল সকাল থেকেই সড়ক ও জনপথ বিভাগের লোকজন চন্ডিছড়া, রামগঙ্গা ও সাতছড়ি এলাকায় ভাঙ্গন রোধে কাজ শুরু করেছেন। শ্রমিকরা বালুভর্তি বস্তা ফেলে রাস্তা ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করছেন। কিন্তু অবিরাম বৃষ্টির কারণে কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। সরজমিনে দেখা যায়, সড়কের চুনারুঘাট থেকে সাতছড়ি পর্যন্ত চন্ডিছড়া থেকে রামগঙ্গা, রামগঙ্গা থেকে চাকলাপুঞ্জি ও সাতছড়ি এলাকায় পাহাড়ী ঢলে পানিতে মারাত্মকভাবে সড়কে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় সওজ বিভাগ লাল পতাকা সম্বলিত নিশানা দিয়ে যানবাহনকে সতর্ক করেছে। কিন্তু ঝুঁকি নিয়েই এ সড়কে যান চলাচল অব্যাহত রয়েছে।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জহিরুল ইসলাম জানান, আমরা এ সড়কের ঝুকিপূর্ণ স্থানগুলোকে আগে থেকেই কাজ করেছি। গতকালও আমরা খবর পেয়েই আমাদের শ্রমিক লাগিয়ে দিয়েছি। তারা বালির বস্তা দিয়ে ভাঙ্গন এলাকায় কাজ করছেন। তিনি জানান, বৃষ্টি কমলে আমরা এসব স্থান স্থায়ীভাবে মেরামতের কজা করবো। উক্ত সড়ক নিরাপদ করতে সবগুলো ভাঙ্গন স্থায়ীভাবে রোধ করা হবে বলেও জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন ইকবাল বলেন, রাতেই আমি বিষয়টি জানতে পেরে সকাল থেকেই ভাঙ্গনরোধের কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছি। আজ রবিবার সকাল থেকে কাজও শুরু হয়েছে। তিনি জানান, চুনারুঘাটে খোয়াই নদীর পানি বাড়ছে। এছাড়া উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে আমি জানতে পেরেছি। আমরা সতর্ক অবস্থায় আছি। বন্যার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহনের সকল প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের।
এদিকে উপজেলার সাটিয়াজুরী, রানীগাও, মিরাশী, গাজীপুর, আহমদাবাদ, দেওরগাছ, পাইকপাড়া, শানখলা ও উবাহাটা ইউনিয়নের কমপক্ষে ২০টি গ্রামের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সাটিয়াজুরী এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামে করাঙ্গী নদীর পানি প্রবেশ করেছে। সুতাং নদীর পানিতে শানখলা ও পাইকপাড়া ইউনিয়নের অনেক গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকার মানুষ কার্যত এখন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাসুদুল ইসলাম জানান, আমরা বন্যার বিষয়ে পর্যবেক্ষন করছি। অনেকে স্থানেই এখন পানি প্রবেশ করলেও বড় ধরনের বন্যান কোন আশঙ্কা নেই।
শানখলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান তরফদার জানান, তার ইউনিয়নের ১০/১২টি গ্রামের ফসলাদি ও রাস্তাঘাট পানির নিচে রয়েছে। বিশেষ করে পাহাড়ি ঢলে লালচান্দ, মহিমাউড়া, মির্জাপুর, জোয়ারলালচান্দ, রমাপুরসহ বেশ সকয়েকটি গ্রামের রোপা আউশ ও বীজতলা এবং ফসলাদি পানিতে তলিয়ে গেছে। তিনি এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছে বলেও জানান।
সাটিয়াজুরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ জানান, তার ইউনিয়নের ১০/১২টি গ্রামের নি¤œাঞ্চল এখন পানিতে তলিয়ে রয়েছে। রোপা আউশ ধান ও বীজতলা এবং রাস্তাঘাট পানির নিচে থাকায় মানুষজন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। অনেকের বাড়িঘরেও পানি উঠতে শুরু করেছে। করাঙ্গী নদীতে পাহাড়ী ঢলের পানি বাড়ছে বলেও তিনি জানান।