আজ জাতীয় বীমা দিবস

মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬০ সালের ১ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানের আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগদান করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর জন্য এটা ছিল রাজনীতির বাইরে প্রথম কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা। তাই এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১ মার্চকে বীমা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
১৭ মার্চ থেকে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছে সরকার। ওইদিন থেকে আগামী বছরের ১৭ মার্চ পর্যন্ত সময়কে মুজিববর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ১৯৬০ সালের ১ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানের আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগদানের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ১ মার্চকে জাতীয় বীমা দিবস ঘোষণার প্রস্তাব করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। তাদের প্রস্তাবে ১ মার্চকে বীমা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
দেশের বীমা শিল্পে মেটলাইফ শীর্ষে ঃ বীমা হল অর্থের বিনিময়ে জীবন, সম্পদ বা মালামালের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির ন্যায়সঙ্গত ও নির্দিষ্ট ঝুঁকির স্থানান্তর। এর মাধ্যমে ব্যক্তি বা বীমা প্রতিষ্ঠান অর্থের (প্রিমিয়ামের) বিনিময়ে মক্কেলের আংশিক বা সমস্ত সম্ভাব্য ঝুঁকি গ্রহণ করে থাকে। এটি অনিশ্চিত ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার একটি অংশ। বীমা কোম্পানিগুলোকে প্রিমিয়াম প্রদানের মাধ্যমে বীমাকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সব ধরনের সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে মুক্ত থাকে এবং অসংখ্য বীমাকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে বীমা কোম্পানিগুলো মূলধন বৃদ্ধি করে। বীমাকারী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে অর্থ সঞ্চয় করে সম্ভাব্য ঝুঁকির দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা যায়। বীমা প্রক্রিয়া, ক্ষয়ক্ষতির ধরণ এবং ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিছু মূলনীতি মেনে চলতে হয়।
বীমা হলো একটি চুক্তি। ইহা দুই পক্ষের মধ্যে একটি আইন সম্মত চুক্তি। একপক্ষ অন্য পক্ষকে ক্ষতিপূরণ দিবে বলে নিশ্চয়তা দিয়ে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। অন্যপক্ষ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট হারে প্রিমিয়াম প্রদানের নিশ্চয়তা দিয়ে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। প্রথম পক্ষ বীমাকারী এবং দ্বিতীয় পক্ষ বীমাগ্রহীতার মধ্যে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং প্রিমিয়াম প্রদানের নিশ্চয়তা সম্বলিত একটি চুক্তি। জীবন বীমার ক্ষেত্রে ক্ষতি পূরণ হয় না, মানুষের জীবনের কোন মূল্য পরিমাণ করা যায় না। তাই জীবন বীমার ক্ষেত্রে আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করা হয়ে থাকে।
যেকোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বীমা শিল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বীমা জনসাধারণের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় (প্রিমিয়াম) সংগ্রহ করে মূলধন গঠনে সাহায্যে করে। মানুষের জীবন, ঋণ ও সম্পত্তির ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। এরূপ নিশ্চয়তা পাওয়ার ফলে লোকজন তাদের কার্যক্ষেত্রে নিরাপত্তা অনুভব করে এবং কার্যে মনোনিবেশ করতে পারে। ফলশ্রুতিতে ব্যক্তিক উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এভাবে ব্যক্তিক উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে জনসাধারণের জীবন যাত্রার মান উন্নত হয় এবং সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দিন দিন বড় হচ্ছে জীবন বীমা ব্যবসার বাজার। বেড়েছে এ খাতের কোম্পানির সংখ্যাও। সংখ্যায় বাড়লেও এ ব্যবসার সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে মেটলাইফ। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) তথ্য অনুযায়ী জীবন বীমা ব্যবসার প্রায় ৩৫ শতাংশ একাই নিয়ন্ত্রণ করছে মেটলাইফ।
আইডিআরএ’র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) জীবন বীমা খাতের ৩২টি কোম্পানি প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে মোট ৩ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকার। এর ৩৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ বা ১ হাজার ৩২১ কোটি ৫১ লাখ টাকাই সংগ্রহ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান মেটলাইফ।
বাংলাদেশের বীমা বাজারে মেটলাইফের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৫২ সালে। বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের ৫০টি দেশে ব্যবসা রয়েছে কোম্পানিটির। বাংলাদেশের জীবন বীমা ব্যবসার সিংহভাগ মেটলাইফের নিয়ন্ত্রণে। হবিগঞ্জে ২০০২ সালে বাদল এজেন্সির মাধ্যমে মেটলাইফের যাত্রা শুরু হয়। তারা অত্যন্ত সুনামের সাথে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা পরিচালনা করে গ্রাহকদের অবিচল আস্থা অর্জন করে। এ আস্থা অর্জন সম্ভব হয়েছে দীর্ঘ ৬৭ বছর ধরে প্রতিশ্রুতি মোতাবেক বীমা দাবি পূরণ ও গ্রাহককেন্দ্রিক উন্নত সেবাদানের মাধ্যমে। উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহকসেবা আরো উন্নত করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।