বরফের রাজ্য সিকিম ভ্রমণ ২

ডাঃ শেখ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ

সবাই খুব ক্ষুধার্ত। নাসিফ আমার ছোট ছেলে কফি খাবার ইচ্ছা পোষণ করায় গ্যাংটকের পথেই পেলাম কফি শপ OASIS CAFE। কফি খাবার পর সবার মাথা ব্যথা কমার বদলে যেন বেড়ে গেল। আমার সিলেটের SIP COFFEEএর থেকে ১ কোটি গুণ ভালো।
গাড়ি যতই এগুচ্ছে ততই আমরা উপরে উঠছি সেই সাথে শীতের তীব্রতা টের পাচ্ছি। ছেলেদের দিকে খেয়াল রাখছি কিন্তু ওদের দেখে মনে হচ্ছিল শীত এখনও ওদের স্পর্শ করতে পারছে না। রাস্তার দুই পাশে দূর পাহাড়ের বাড়ি আর সাথে বিভিন্ন শিক্ষামূলক বিলবোর্ড দেখতে দেখতে রাত ৭টা৩০ মিনিট নাগাদ পৌঁছে গেলাম ধুমপানমুক্ত, প্লাস্টিকমুক্ত এবং আবর্জনামুক্ত ভারতের অন্যতম পরিচ্ছন্ন শহর সিকিম রাজ্যের রাজধানী গ্যাংটক…
গ্যাংটক হোটেল ডোমা প্যালেস এ চেক ইন এর পর লক্ষ্য করলাম বেশ শীত লাগছে…স্ত্রী এবং দুই ছেলেকেও দেখে বুঝতে পারলাম তাদেরও অনেক শীত লাগছে!! এর মধ্যে মরার উপর খাড়ার ঘা রুমে কোনো রুম হিটার নেই। রিশিপসনে কল করলে বলা হলো ৪০০ রুপি দিয়ে রুম হিটার নিতে হবে। এটা ওদের ব্যবসায়িক পলিসি বুঝতে পেরে বাধ্য হয়েই রুম হিটার নিতে হলো। সারাদিন ভ্রমণের পর স্বাভাবিকভাবেই সবাই খুবই ক্লান্ত থাকায় রাতের খাবার তাড়াতাড়ি সেরে সবাই রাত ১০টার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
আমার পরিবারের সবাই আর্লি রাইজার তাই ভোর ৬টার আগেই সবার ঘুম ভেঙ্গে গেল বটে গরম বিছানা থেকে কারও নামার ইচ্ছা ছিল না। কারণ বেশ শীত বুঝতে পারছিলাম সবাই। গুগলে সার্চ করে দেখলাম তাপমাত্রা 2 ডিগ্রি C…
একটু চিন্তিত ছিলাম সেই তরুণ দম্পতির জন্য কারণ তাদের কোনো খবর পাচ্ছিলাম না। এর মধ্যে পরবর্তী যাত্রার জন্য মাহিন্দ্র জীপ এসে হাজির। নাস্তা খেয়ে হোটেল রুমে যখন নিজের জন্য কফি বানাচ্ছি ঠিক সেই মুহূর্তে রুমের দরজায় কেউ নক করলেন। দরজা খুলে দেখি সেই হাস্যোজ্জল তরুণ দম্পতি দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের উপর যে এতো ধকল গেলো সেটা তাদের চেহারা দেখে একদমই বোঝা যাচ্ছে না। তারা আর বেশি সময় নষ্ট করলেন না। জলদি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে আধা ঘন্টার মধ্যে তারা রেডি পরবর্তী যাত্রার জন্য…শক্তিশালী পর্যটক হয়তো একেই বলে!!!
জীপে সবাই বসার পর শুরু হলো আমাদের যাত্রা। এবার আমাদের গন্তব্য পূর্ব সিকিম থেকে উত্তর সিকিমের পর্যটনকেন্দ্র লাচুং।
চোখে ডুপ্লিকেট রে-বান সানগ্লাস, কালো জ্যাকেট ভেতরে লাল গেঞ্জি আর পায়ে ডুপ্লিকেট সাদা এডিডাস স্নিকার পরা ড্রাইভার সাহেব মিঃ তাশি আমাদের লাগেজ দেখে বললেন একদিনের জন্য লাচুং যাচ্ছি তাই এতো বড় বড় লাগেজ উনি উনার জীপে তুলতে পারবেন না। আমরাও ভাবলাম কথা ঠিক আছে তাই সবাই শুধু পরনের কাপড় আর একটি ব্যাগে রাতে ঘুমানোর কাপড় নিয়ে উঠে বসলাম তাশি সাহেবের জীপে..নেপালী শেরপা জাতির তাশি সাহেবের ভাবগাম্ভীর্য দেখলে উনাকে সাহেবই বলতে হয়।