মৌলভীবাজারে জুতার দোকানে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৫ জন নিহত ॥ হবিগঞ্জ থেকে দুই বছর বয়সী কন্যাকে নিয়ে দিবা রায় মৌলভীবাজারে গিয়েছিলেন স্বামীর ভাগ্নির বিয়েতে, ফিরলেন লাশ হয়ে

এসএম সুরুজ আলী ॥ মৌলভীবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে হবিগঞ্জ পৌর এলাকার একই পরিবারের মা মেয়েসহ ৫ জন আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। নিহতরা হলেন- হবিগঞ্জ শহরের উমেদনগরের সজল রায়ের স্ত্রী দিবা রায় (২৬), তার দুই বছর বয়সী কন্যা বৈশাখী রায়, তার বড় বোন দিপ্তী রায় (৪৮), বড় বোনের স্বামী সুভাষ রায় (৬৫) ও ভাগ্নী প্রিয়া রায় ওরফে টিয়া রায় (২৫)। গতকাল সকাল পৌনে ১০টায় মৌলভীবাজার শহরের এম সাইফুর রহমান সড়কের পিংকী সু স্টোর নামের একটি জুতার দোকানে এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট দুপুর ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ভবনের ভেতর থেকে পাঁচজনের মরদেহ বের করা হয়। উমেদনগরের সজল রায়ের ভাতিজা হবিগঞ্জ পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের প্রচার সম্পাদক তাপস রায় জানান, সজল রায় তার দুই বোনকে মৌলভীবাজারে একই পরিবারের দুই ভাইয়ের কাছে বিয়ে দিয়েছেন।
গত ২০ জানুয়ারি সজল রায়ের স্ত্রী দিবা রায় তার দুই বছর বয়সী কন্যাকে নিয়ে মৌলভীবাজারে স্বামীর বড় বোন জয়ন্তি রায়ের মেয়ে পিংকীর বিয়েতে যান। ২২ জানুয়ারি অনেকটা ধুমধামের মধ্যে পিংকীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর বরের বাড়িতে বৌভাত খেয়ে আসেন তারা। বৌ-ভাত অনুষ্ঠানের পর কয়েকদিন ধরে দিবা রায় তার মেয়ে বৈশাখীকে নিয়ে সেখানেই অবস্থান করছিলেন। গতকাল সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ করে জয়ন্তি রায়ের বাসায় আগুন লেগে যায়। এ সময় জয়ন্তি রায়ের স্বামী সুবাস রায়ের পিংকী স্টোরের জুতার দোকানের সাটার বন্ধ ছিল। মুহূর্তের মধ্যে আগুন দোকান থেকে ছড়িয়ে উপরের দোতলায় আধাপাকা ঘরে লেগে যায়। দোতলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন সুবাস রায়। এ সময় আগুনে পুড়ে মারা যান সুভাষ রায়, তার মেয়ে প্রিয়া রায় ওরফে টিয়া রায় ও তার শ্যালকের স্ত্রী দিবা রায়, দিবা রায়ের মেয়ে বৈশাখী রায় এবং শ্যালিকা ছোট ভাইয়ের স্ত্রী দিপ্তী রায়। গুরুতর আহত হয়েছেন দিপ্তী রায়ের স্বামী প্রণয় রায় মনা। মনা রায়কে প্রথমে মৌলভীবাজার ২৫০শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাঁকে আইসিইউ সম্পৃক্ত একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানাস্তরিত করা হয়।
অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ৪টি ইউনিট প্রায় ২ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে একে একে উদ্ধার করা হয় ৫টি লাশ। মৌলভীবাজার লাইফ লাইনে চিকিৎসাধিন প্রণয় রায় মনা জানান, তখন তিনি তাদের দোকানের কাঠের ২য় তলায় ঘুমিয়ে ছিলেন। তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী আগুন আগুন বলে চিৎকার দিলে তিনি ঘুম থেকে উঠেন। তিনি জানান, বিদ্যুতের বোর্ড থেকে আগুনের সুত্রপাত। মৌলভীবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স উপ-পরিচালক মোঃ আব্দুল্লাহ হারুন পাশা জানান, ঘরের ভিতরে একটি গ্যাসের রাইজার ছিলো। তাদের ধারণা বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে রাইজারে আগুন লাগে। তিনি জানান, দোতলায় এবং পেছনের বাসায় তারা থাকতেন। তাদের বের হওয়ার রাস্তা ছিলো দোকানের ভিতর দিয়ে। সামনের দিকে আগুন লাগায় তারা বের হতে পারেননি।
মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মল্লিকা দে জানান, এটি একটি মর্মান্তিক ঘটনা। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা করা হবে বলেও তিনি জানান। একই সাথে অগ্নিকান্ডের বিষয়টি তদন্তও করা হবে। মৌলভীবাজার সিআইডি ইন্সপেক্টর বিকাশ দাশ জানান, ঘটনার পর পরই পুলিশের সাথে সাথে সিআইডির পুরোটীম ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেন। মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি তদন্ত পরিমল দেব জানান, ঘটনাস্থলে এসে আমরা মনা রায়কে উদ্ধার করি। পেছনের বিল্ডিংএ তাদের অন্যান্য লোকজনকে পেছন দিয়ে বের করে আনেন। পরে অগ্নিকান্ডে নিহত ৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেন। প্রতিবেশী ঝুনু রায় জানান, সুভাষ রায়ের বড় মেয়ে প্রিয়াংকা রায়ের বিয়ে হয় গত ২২ জানুয়ারি। বিয়ে উপলক্ষে অনেক আত্মীয় স্বজন এসেছিলেন তাদের বাড়িতে। সুভাষ রায়ের শ্যালকের পরিবারও তাদের বাসায় ছিলেন। মৌলভীবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাশ চৌধুরী জানান, সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার সৈয়ারপুর সার্বজনীন শশ্মনঘাটে তাদের দাহ সম্পন্ন হয়েছে। এ ব্যাপারে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন জানান, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এডিএম তানিয়া সুলতানাকে প্রধান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে সুভাষ রায় সহ তার পরিবার ও স্বজন মিলিয়ে ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করে সাইফুর রহমান সড়কের ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান বন্ধ রেখেছেন।