আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা

হবিগঞ্জের মুখ রিপোর্ট ॥ আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। এ কারণে ২৫ জানুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার আইনশৃঙ্খলা নিরাপত্তা-সংক্রান্ত কমিটির সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ নির্দেশনার কথা জানান। সভায় তিনি পরীক্ষার বিভিন্ন তথ্য তুল ধরে বলেন, এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট ২০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৭৯ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। তার মধ্যে ১০ লাখ ২২ হাজার ৩৩৬ জন ছাত্র ও ১০ লাখ ২৩ হাজার ৪১৬ জন ছাত্রী। এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে মাসব্যাপী দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ডা. দীপু মনি আরও বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। গত বছর সারা দেশে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৩৩। সে তুলনায় এবার ৮৭ হাজার ৫৫৪ জন পরীক্ষার্থী কমে গেছে। তার মধ্যে ৪৬ হাজার ৭৮ জন ছাত্র ও ৪১ হাজার ৪৭৬ জন ছাত্রী। এবার সারা দেশে ৩ হাজার ৫১২টি কেন্দ্রে মোট ২৮ হাজার ৮৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করবে। সভায় জানানো হয়, গত বছরের তুলনায় এবার মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২০২টি ও কেন্দ্র ১৫টি বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার নিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬ লাখ ৮১ হাজার ৬৮৮ ও অনিয়মিত ৩ লাখ ৬১ হাজার ৩২৫। বিশেষ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা (১ থেকে ৪ বিষয়ে ফেল) ২ লাখ ৮২ হাজার ৫৯৪ এবং বিদেশি ৮টি কেন্দ্রে মোট ৩৪২ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। সাধারণ ৯টি বোর্ডে ১ ফেব্রুয়ারি তত্ত্বীয় পরীক্ষা শুরু হবে। চলবে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ব্যবহারিক পরীক্ষা ২৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে ১ ফেব্রুয়ারি তত্ত্বীয় পরীক্ষা শুরু হয়ে চলবে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ব্যবহারিক পরীক্ষা ৩ মার্চ পর্যন্ত চলবে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডেও একই সময়ে তত্ত্বীয় পরীক্ষা শুরু হয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। ব্যবহারিক পরীক্ষা ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত চলবে। সভায় বলা হয়, ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বিজ্ঞান শাখায় ৫ লাখ ৫ হাজার ২৬ জন, মানবিকে ৭ লাখ ৯০ হাজার ৬২৭ জন ও ব্যবসায় শিক্ষায় ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫৮৭ জনসহ মোট ১৬ লাখ ৩৫ হাজার ২৪০ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অন্যান্য বারের মতো এবারও পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থীর দেরি হলে তার বিস্তারিত তথ্য পরীক্ষা শেষে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে পাঠাতে হবে। ট্রেজারি থেকে নির্দিষ্ট তারিখের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সব সেট কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে। পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে এমএমএসের মাধ্যমে প্রশ্নপত্রের সেট কোড জানিয়ে দেয়া হবে। কেন্দ্র সচিব ছাড়া অন্য কেউ পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। তিনি বলেন, এবার এসএসসি পরীক্ষায় বাংলা দ্বিতীয় ও ইংরেজি প্রথম এবং দ্বিতীয় পত্র ছাড়া সব বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা হবে। নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা এবং ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়ে এনসিটিবির নির্দেশনা অনুসারে ধারাবাহিক পরীক্ষার নম্বরের সঙ্গে মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বর অনলাইনের মাধ্যমে বোর্ডে পাঠাতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, আগামী বছর কোচিং সেন্টারের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ বিষয়ে স্থায়ী একটি সমাধানের মাধ্যমে বর্তমান সিদ্ধান্তের পরিবর্তন আসতে পারে। কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে এমন প্রশ্নে ডা. দীপু মনি বলেন, পরীক্ষার আগে কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। কিন্তু পরীক্ষার আগে প্রশ্ন ফাঁস, জালিয়াতি ও অনিয়মে কোচিং সেন্টারের কিছু অসাধু ব্যক্তির জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এ কারণে বাধ্য হয়ে পাবলিক পরীক্ষার আগে কোচিং বন্ধের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। ক্লাসে শিক্ষকরা মনোযোগ সহকারে পড়ান না বলেই শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এ কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনের আওতায় আনা হবে। এর মাধ্যমে শিক্ষকদের পাঠদান কার্যক্রম মনিটরিং করা হবে। এতে শিক্ষকদের জবাবদিহিতা বাড়বে এবং পাঠদানের প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠবেন। এ লক্ষ্যে শিক্ষা নীতিমালায় বিষয়গুলো নতুনভাবে অন্তর্ভূূক্ত করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন আটকে থাকা শিক্ষা আইন বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পাঠদানে আনন্দপূর্ণ করে তুলতে কারিকুলামে আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে। মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে, বিষয় ও পরীক্ষা কমানো হচ্ছে।