এসএম সুরুজ আলী
ঐতিহ্যবাহী হবিগঞ্জ জেলার অনেক সূর্য সন্তান মহান মুক্তিযুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। স্বাধীনতার পূর্বে এ জেলার নারীরা রাজনীতিতে তেমন সম্পৃক্ত ছিলেন না। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে হাতে-গোণা কয়েকজন নারী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। কিন্তু তারা আলাদাভাবে কোন ধরণের সভা-সমাবেশ করতে পারতেন না। দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করতেন। নব্বই পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন জেলার বেশ কয়েকজন নারী। শ্রমিক রাজনীতিতেও নারীরা নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। জাতীয় নির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে নারীরা প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করছেন। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে নারীনেত্রীরা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশগ্রহণ করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে চুনারুঘাটের দেওরগাছ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সামছুন্নাহার। প্রত্যেক ইউনিয়ন ও পৌরসভায় সংরক্ষিত আসনে নারীরা কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হচ্ছেন। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হবিগঞ্জের ৮টি উপজেলায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির ৩২ জন নারী নেত্রী নির্বাচনে অংশ নেন। এর মধ্যে ৬টি উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের ৬ জন নেত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। মাধবপুর উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপি নেত্রী অ্যাডভোকেট সুফিয়া আক্তার হেলেন ও নবীগঞ্জে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজমা আক্তার নির্বাচিত হয়েছেন। জেলা পরিষদে সংরক্ষিত আসনে ৫ জন নারী সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। রাজনীতি ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোতেও নারীরা অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন। নারীরা সরকারি দলের কর্মসূচির পাশাপাশি সরকার বিরোধী কর্মসূচিগুলোতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করছেন। সরকার বিরোধী কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনারও শিকার হয়েছেন নারীরা। তবে রাজনীতি করতে গিয়ে নারী নেত্রীদের মধ্যে কখনও কোন ধরণের সহিংসতামূলক কোন ঘটনা ঘটেনি। রাজনীতিতে মূল্যায়ন ও কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করে যোগ্যতার ভিত্তিতে সমঅধিকার পেতে চান নারীনেত্রীরা
হবিগঞ্জ জেলায় বিশেষ করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মহিলা সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার কারণে মহিলা আওয়ামী লীগ তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী একটি সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মহিলা লীগ ছাড়াও আওয়ামী লীগের যুব মহিলা লীগের কমিটি রয়েছে এ জেলায়। জেলায় যুব মহিলা লীগের বিভিন্ন ইউনিট গঠন করা হয়েছে। আওয়ামী মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ নেত্রীরা দলীয় ও সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। পাশাপাশি বিএনপি মহিলা দলের জেলাসহ বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি রয়েছে। মহিলা দলের নেত্রীদের দাবি আগের তুলনায় হবিগঞ্জ জেলায় মহিলাদল তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী। তারা দলীয় সকল কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন।
জাতীয় মহিলা পার্টির জেলা কমিটিসহ কয়েকটি উপজেলা কমিটি থাকলেও মহিলা সংগঠন তেমন শক্তিশালী নয়। তারপরও জাতীয় পার্টির বিভিন্ন সভা-সমাবেশে মহিলা নেত্রীদের অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।
আওয়ামী মহিলা লীগ হবিগঞ্জ জেলা শাখার সভানেত্রী হিসেবে জমিলা বেগম ও মিনা জালাল সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। মিনা জালাল মারা যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান ইসমত আরা জলি। মহিলা লীগের কমিটির অন্যতম সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবু জাহিরের সহধর্মীনি আলেয়া জাহির।
জমিলা বেগম ঃ জমিলা বেগম হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সভাপতি। তিনি হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর এলাকার বাসিন্দা হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সভাপতি মরহুম অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান চৌধুরীর স্ত্রী। তিনি বিভিন্ন সময় জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকার দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রায় ২৩ বছর ধরে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এছাড়াও জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন। তিনি জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ১৯৭৩ সালে একবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাত হয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কয়েকবার শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে জমিলা বেগমের।
জমিলা বেগম বলেন, আমার বাবা নবীগঞ্জের পাইকপাড়া গ্রামের মরহুম আলহাজ¦ আরিফ উল্লাহ বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ^াসী ছিলেন। কিন্তু তিনি কোন কমিটিতে ছিলেন না। এক বড় ভাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। পরিবারের লোকজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার কারণে আমিও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে যাই। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমার বয়স ছিল ১৮ বছর। এ সময় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করি। পরবর্তীতে যখন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুর রহমান চৌধুরীর সাথে আমার বিয়ে হয় তখন আমি রাজনীতিতে আরো আগ্রহী হই। আমার স্বামী আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে আমাকে উৎসাহিত করে তার সাথে নিয়ে যেতেন। এ সময় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আমি ও আমার দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা শায়েস্তানগরের হাজী জালালের স্ত্রী মিনা জালালসহ হাতেগোনা কয়েকজন মহিলা অংশগ্রহণ করতেন।
রাজনীতিতে মহিলারা উৎসাহিত ছিলেন না। কোথায় কোন মিছিল সমাবেশ হলে বা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আসলে মহিলাদের বাসা-বাড়ি থেকে এনে নিয়ে যেতে হতো। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ, প্রাক্তন পানিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক সম্মেলনের মাধ্যমে আমাকে সভাপতি ও মিনা জালালকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা মহিলা লীগের কমিটি গঠন করে দেন। এ সময় কিছু মহিলা আগ্রহী হয়ে মহিলা লীগের কমিটিতে ঢুকেন। তবে এ সময় হবিগঞ্জে অন্যান্য দলের মহিলা সংগঠন ছিল না।
জমিলা বেগম বলেন- ২০০৯ সালে আবারও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মহিলা লীগ সংগঠিত হতে থাকে। বর্তমানে হবিগঞ্জ জেলা মহিলা লীগ তৃণমূল পর্যায়ে একটি শক্তিশালী সংগঠন। মহিলা লীগের প্রতিটি উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন কমিটি রয়েছে। এছাড়াও যুব মহিলা লীগের কমিটি রয়েছে। এখন কর্মসূচি পালন করলে আগের মত বাসা-বাড়ি গিয়ে মহিলাদের আনতে হয় না। নিজ তাগিদে তারা সভা-সমাবেশে চলে আসেন। মহিলারা রাজনীতিতে সুসংগঠিত হওয়ার কারণে সরকার তাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। মহিলা নেত্রীরা জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। হবিগঞ্জের অনেক মেয়েরা বিভিন্ন রাজনীতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এগুলো দেখে এখন অনেক ভাল লাগে। মহিলারা রাজনীতি করতে গিয়ে কোন প্রতিহিংসার শিকার বা পারিবারিক বাধায় পড়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবারে জমিলা বেগম বলেন- রাজনৈতিকভাবে কোন প্রতিহিংসার শিকার হয়নি। তবে ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে আমার স্বামী অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান চৌধুরী আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাননি। তখন অনেকটা ক্ষোভে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় আমি দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করি। এতে আমার স্বামীর সাথে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। অনেকদিন দু’জনের মধ্যে কথাবার্তাও হয়নি। নির্বাচন শেষ হওয়ার পরই আমাদের সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। তবে আমার স্বামী আজিজুর রহমান চৌধুরী আওয়ামী লীগের একজন প্রকৃত কর্মী ছিলেন। রাজনীতি করতে গিয়ে তিনি অনেক কিছু বিসর্জন দিয়েছেন। অ্যাডভোকেট চৌধুরী আব্দুল হাই যখন এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তখনও আমার স্বামী আজিজুর রহমান আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু জোটগত সিদ্ধান্তের কারণে তাকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হয়েছিল। বর্তমানে বিভিন্ন দলের রাজনীতির কারণে আত্মীয়তার সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে এমন প্রশ্নের জবাবে জমিলা বেগম বলেন- আমার বড় বোন মরহুম মঞ্জিলা বেগমও রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতি করতেন। আমি আর আমার ছোট ভাই অ্যাডভোকেট আবুল ফজল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। বর্তমানে অ্যাডভোকেট আবুল ফজল জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে। আমার বোনের ছেলে জি কে গউছ বিএনপির রাজনীতি করার কারণে আমার বোন মঞ্জিলা বেগম বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। রাজনৈতিক আদর্শ ভিন্ন থাকলেও আমাদের ভাই/বোনদের মধ্যে সু-সম্পর্ক ছিল। কোনদিন দু’বোনের সম্পর্কের মধ্যে ভাটা পড়েনি। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমার বোনের পরিবারের সাথে অনেকটা দূরত্ব বেড়েছে। বোনের সন্তানরাও আমাদের বাসায় আগের মত আসেন না। আমরা তাদের বাসায় সেভাবে যাওয়া-আসা করি না। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই, রাজনীতি ভিন্ন মতের হতে পারে। কিন্তু রক্তের বন্ধন বা আত্মীয়তার সম্পর্কটা যেন অটুট থাকে। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীবান্ধব। তিনি নারীদের সকল ধরণের সহযোগিতা করছেন। কাজেই পুরুষদের বুঝতে বাকি নেই, নারীদের রাজনীতিতে যে প্রয়োজন আছে। ভবিষ্যতে রাজনীতিতে মহিলারা আরো অগ্রসর হবেন বলে আশাবাদী তিনি।
আলেয়া জাহির ঃ আলেয়া জাহির হবিগঞ্জ জেলা মহিলা লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি। তিনি হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহিরের সহধর্মীনি। আলেয়া জাহির দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সাথে জড়িত। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছেন। বিশেষ করে তার স্বামী অ্যাডভোকেট আবু জাহিরের ৩টি নির্বাচনেই তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। নির্বাচনের সময়ে প্রতিদিন সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করে আওয়ামী লীগ ও নৌকা প্রতিককে বিজয়ী করার জন্য তিনি মহিলাদের উদ্বুদ্ধ করেন। তার নেতৃত্বেও সুসংগঠিত হচ্ছে মহিলা লীগ। মহিলা লীগের অনেক নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মহিলা লীগের কোন নেত্রী সমস্যায় পড়লে আলেয়া জাহির তাদের আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেন। আলেয়া জাহির জানান, ১৯৯২ সালে বিয়ের পর থেকে আমি মহিলা লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। মহিলা লীগের সকল কর্মকান্ডে আমি অংশগ্রহণ করছি। মহিলা নেত্রীদের নিয়ে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্যের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় আজ মহিলা লীগ তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠেছে। আলেয়া জাহির বলেন রাজনীতির মাধ্যমে জনগণের কাছে গিয়ে তাদের সেবা করা যায়। আর জনসেবাকে আমি ইবাদত মনে করি। রাজনীতিবিদের সহধর্মীনি না হলে অথবা নিজে রাজনীতির সাথে জড়িত না হলে তা বুঝতাম না। জননেত্রী শেখ হাসিনার আমলে নারীর শান্তিপূর্ণভাবে রাজনীতি করতে পারছেন। যে কারণে আগের চেয়ে নারীরা এখন রাজনীতিতে অগ্রসর হচ্ছেন। নারীদের রাজনীতিতে আরো এগিয়ে আসা প্রয়োজন। আমরা চাইবো, আগামী দিনে যেন নারীরা রাজনীতিতে বলিষ্ট ভূমিকা রাখেন।
আওয়ামী যুব মহিলা লীগ ঃ ২০০৩ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা যুব মহিলা লীগের কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান চৌধুরী ও জেলা মহিলা লীগের সভাপতি নেত্রী জমিলা বেগমের কন্যা বেগম মেহেরুন্নেছা চৌধুরী মজু। আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন হুমায়রা পারভীন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের সম্মেলনে আবারও সভাপতি হন বেগম মেহেরুন্নেছা চৌধুরী মজু। সাধারণা সম্পাদক হন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক চৌধুরীর কন্যা তাহমিন রুবানা হক চৌধুরী। মজু চৌধুরী জানান, পারিবারিকভাবেই আমরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে আমি আজ যুবমহিলা লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছি। আমি ও আমার সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে যুবমহিলা লীগ হবিগঞ্জে অনেকটা সুসংগঠিত। আমাদের বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর কমিটি রয়েছে। যে কোন সময় মিটিং হলে আমরা সু-সংগঠিত হতে পারি। বেগম মেহেরুন্নেছা চৌধুরী মজু শায়েস্তানগরের বাসিন্দা এপিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিনের স্ত্রী।
রেবা চৌধুরী ঃ রেবা চৌধুরী হবিগঞ্জ জেলা মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি ও জেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি শহরের মাস্টার কোয়ার্টার এলাকার বাসিন্দা ললিত মোহন চৌধুরী ও জ্যোৎ¯œা চৌধুরীর কন্যা। তিনি ১৯৮৫ সালে লালমাটিয়া কলেজে পড়ার সময় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। পরবর্তীতে তিনি জাতীয় শ্রমিক লীগের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হন। তিনি চাকুরীর পাশাপাশি আওয়ামী শ্রমিক লীগকে সুংগঠিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। শ্রমিক লীগ নেত্রী রেবা চৌধুরী জানান, ২৩ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছি। দলের সকল কর্মসূচিতে আমি অংশগ্রহণ করছি। প্রথম যখন আমরা রাজনীতি শুরু করি তখন মহিলারা রাজনীতিতে অগ্রসর ছিলেন না। মহিলারা পারিবারিক গন্ডির বাহিরে যেতেন না। পরিবারের সিদ্ধান্ত মেনেই তারা চলতেন। সে সময়ে আমরা যখন সভা-সমাবেশ করতাম মহিলাদের বাসায় গিয়ে বুঝিয়ে নিয়ে আসতে হতো। এখন মহিলারা আর ঘরের মধ্যে বসে থাকছেন না। পুরোদমে রাজনীতি করছেন। যে কারণে পদ-পদবী নিয়ে মহিলাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হচ্ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভবিষ্যতে নারী নেতৃত্বে আরো বিকাশ ঘটবে। রেবা চৌধুরী বলেন- মহিলা শ্রমিক লীগের বিভিন্ন উপজেলা ও পৌরসভা কমিটি রয়েছে। ৪১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা মহিলা শ্রমিক লীগের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন রিনা আক্তার। এছাড়াও সহ-সভাপতি যথাক্রমে রেবা বেগম, বিষ্ণু সরকার, পারুল বেগম, শুক্লা সরকার, মেমরাজ বেগম ও রাহেলা বেগম দায়িত্ব পালন করছেন। ভবিষ্যতে শ্রমিক লীগের কমিটি আরো সুসংগঠিত করার জন্য আমি আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
অ্যাডভোকেট রুখসানা জামান চৌধুরী ঃ অ্যাডভোকেট রুখসানা জামান চৌধুরী বিএনপি’র রাজনীতির সাথে দীর্ঘদিন ধরে সম্পৃক্ত। শুধু বিএনপিই নয়, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। জেলা বিএনপি সদস্য, জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকার দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি হবিগঞ্জ পৌরসভার সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার স্বামী অ্যাডভোকেট খালিকুজ্জামান চৌধুরী হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি। অ্যাডভোকেট রুখসানা জামান চৌধুরী ১৯৯৬ সালে হবিগঞ্জ মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ছিলেন। সে সময় তিনি বিএনপি’র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। এরপর বিএনপি’র আন্দোলন সংগ্রামসহ সকল কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে আসছেন। বিভিন্ন স্থানীয় জাতীয় নির্বাচনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। বিগত পৌরসভা নির্বাচনে তিনি বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আলহাজ¦ জি কে গউছের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসন থেকে বিএনপি’র দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। অ্যাডভোকেট রুখসানা জামান চৌধুরী জানান, দেশের আগের রাজনীতি আর বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনেকটা ভিন্ন। আমরা যখন রাজনীতির সাথে জড়িত হই, সে সময়ে হাতেগোণা কয়েকজন মহিলা রাজনীতি করতেন। যারা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ও ভদ্র। তাদের মনের মধ্যে কোন ধরণের প্রতিহিংসা ছিল না। তারা যতটা সম্ভব দলীয় কর্মকান্ডে সামাজিকতা বজায় ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে অংশগ্রহণ করেছেন। বর্তমানে সেই রাজনীতি আর দেশে নেই। সবখানে দলীয়করণ, বিরোধী দলীয় মহিলা নেত্রীদের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আর সরকারি দলের নারী রাজনীতিবিদদের সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন- দেশের রাজনীতিতে নারীরাও এখন এগিয়ে আসছেন ঠিক কিন্তু ভাল মহিলারা এখনও রাজনীতি করতে চান না। কয়েকজন ভাল মহিলা রাজনীতিতে থাকলেও সরকার বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে মামলা মোকদ্দমার শিকার হয়ে নিরব হয়ে যাচ্ছেন। হাতে-গোনা কয়েকজন মহিলা মামলা মোকদ্দমার শিকার হয়ে রাজনীতি করছেন। সরকারী দলের ন্যায় বিরোধীদলের নারীদের সুযোগ-সুবিধা দিলে রাজনীতিতে নারীদের আরো সম্পৃক্ততা বাড়তো বলে মনে করেন রুখসানা জামান চৌধুরী।
এখনও হবিগঞ্জে যে কোন দলের সভা-সমাবেশ করলে গ্রাম থেকে মহিলাদের আনতে হয়। আজ যারা এই দলের সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করেছেন, কাল তারাই আবার অন্য দলের সভায় অংশগ্রহণ করছেন। তবে অতীতের চেয়ে এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে মহিলারা সম্পৃক্ত হচ্ছেন অনেকটা বেশি। আমরাও চাই একটা গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে মহিলাও রাজনীতিতে আসুক। রাজনীতির মাধ্যমে তারা দেশে সেবামূলক কাজে নিযুক্ত হোক।
অ্যাডভোকেট ফাতেমা ইয়াসমিন ঃ ফাতেমা ইয়াসমিন পেশায় একজন আইনজীবী। তিনি শহরের নরসিংহ আখড়া এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মরহুম খুর্শেদ মিয়ার কন্যা এবং নানু মিয়ার সহধর্মীনি। তিনি ছাত্রজীবনে বৃন্দাবন কলেজে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সালে ছাত্রদলের ব্যানার থেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে শিক্ষকতা পেশার সাথে জড়িত হন। সরকারি চাকুরী করার কারণে তিনি রাজনীতি থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি শিক্ষকতা পেশা বাদ দিয়ে আইন পেশার নিয়োজিত হন। সে সময় থেকে তিনি আবারও বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জড়িত হন। এরপর থেকে তিনি বিএনপির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি রাজনীতি করতে গিয়ে মামলা ও হামলার শিকার হয়েছেন। বর্তমানে তিনি হবিগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
অ্যাডভোকেট ফাতেমা ইয়াসমিন জানান, ছোট বেলা থেকে জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ^াসী ছিলাম। এ কারণে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমানে আদর্শে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ি। ২০১০ সালে জেলা বিএনপির সদস্য মনোনীত হই। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে জেলা মহিলাদলের সাধারণ সম্পাদিকা হিসেবে নির্বাচিত হই। আমার পূর্বে জেলা মহিলা দলের সভাপতি নাজনীন হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অ্যাডভোকেট মুনিরা বেগম। দীর্ঘদিন কাজ করার পর জাতীয়তাবাদী মহিলাদল হবিগঞ্জে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী। আমাদের সকল উপজেলা ও পৌরসভা কমিটি রয়েছে। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড কমিটি রয়েছে। তিনি বলেন- কমিটি গঠন করতে গিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারিনি। আমাদেরকে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হচ্ছে। সরকারি দলের মহিলাদের যে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে আমাদের সে সুযোগ-সুবিধা দিলে আমরা আরো সুংগঠিত হতে পারতাম। বর্তমান সরকারের আমলে নারীরা নানাভাবে নির্যাতিত। কোথাও আমরা কাজ করতে গেলে সরকারের লোকজন আমাদের উপর আক্রমণ করে। গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পূর্বে শায়েস্তাগঞ্জে আমাদের উপর হামলা করা হয়েছে। নির্বাচনের পরে গরুর বাজার কেন্দ্রে নাশকতার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় আমাকে ও জেলা মহিলাদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দা লাভলী সুলতানা ও পৌর মহিলা দলের সভাপতি সুরাইয়া আক্তার রাখিকে আসামী করা হয়। ওই মামলা থেকে আমরা জামিনে মুক্ত আছি। সব নারীদের সমধিকার নিশ্চিত করলে নারীরা রাজনীতিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আরো অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারতো। আমাদের দাবি একটাই মহিলাদের সকল অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। রাজনীতি করতে গিয়ে সরকারি দল মহিলা লীগের নেতাকর্মীদের সাথে বিরোধ হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- আজ পর্যন্ত মহিলা লীগের নেতাকর্মীদের সাথে কোন ধরণের সমস্যা হইনি। রাজনীতি করতে গিয়ে তাদের সাথে কোথাও এক টেবিলে বসা হয়নি। রাজনীতি করতে গিয়ে পারিবারিক বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- পারিবারিক বাঁধার সম্মুখীন হলে শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে রাজনীতিতেই আসতাম না। আমার পরিবার থেকে সব সময়ই সহযোগিতা পেয়েছি। পাশাপাশি মহিলা দলকে সংগঠিত করার জন্য বিএনপি’র নেতাকর্মীদের কাছ থেকে আন্তরিক সহযোগিতা পেয়েছি। এখনও পাচ্ছি। আমরা রাজনীতিতে আরো অগ্রসর করতে চাই। এ জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করি।
রতœা বেগম ঃ রতœা বেগম হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর এলাকার বাসিন্দা ইসহাক মিয়া ও জুনু আরা বেগমের কন্যা। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির মহিলা সংগঠন জাতীয় মহিলা পার্টির হবিগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক। তিনি ২০১১ সাল থেকে জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। এরপর থেকে দলটির জেলা কমিটির মহিলা বিষয়ক সহ-সম্পাদিকার পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। রতœা বেগম জানান, পল্লীবন্ধু এরশাদের রাজনীতি আমি ছোট বেলা থেকে পছন্দ করতাম। এক পর্যায়ে বর্তমান জেলা মহিলা পার্টির সভাপতি রাবেয়া বেগমের মাধ্যমে আমি মহিলা পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত হই। এরপর দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে আসছি। দলীয় কর্মসূচিই নয়, ডেমোক্রেসী ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত নারীদের রাজনীতিতে শক্তিশালীকরণ বিষয়ের দুয়েকটি সেমিনারেও অংশগ্রহণ করেছি। রাজনীতি করতে গিয়ে দলের জেলার সিনিয়র নেতাদের সাংগঠনিক বিষয়ে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। আমরা বিভিন্ন উপজেলায় মহিলা পার্টির কমিটি গঠন করেছি। বিগত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয়ভাবে আমাদের দলের সাংগঠনিক কোন কর্মসূচি না থাকায় আমরাও স্থানীয়ভাবে কোন কর্মসূচি গ্রহণ করিনি। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমাদের মহিলা পার্টির বাহুবল উপজেলা সভানেত্রী হাসিনা বেগম লাঙ্গল প্রতিক নিয়ে অংশগ্রহণ করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আমরা দলের মধ্যে মহিলাদের পার্টিতে সম্পৃক্ত করে পল্লীবন্ধু এরশাদের হাতকে শক্তিশালী করতে চাই। হবিগঞ্জের রাজনীতিতে নারীরা আরো অগ্রসর হোক এমন প্রত্যাশাই আমাদের।