স্টাফ রিপোর্টার ॥ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী চুনারুঘাটের কৃতিসন্তান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। গতকাল বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) রাতে তিনি বঙ্গভবনে শপথ নেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের পৈত্রিক নিবাস চুনারুঘাট উপজেলার নরপতি গ্রামে। তার পিতা সৈয়দ মহিবুল হাসান জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং আবদুস সাত্তারের মন্ত্রিসভায় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
যদিও জন্মেছেন ঢাকার ধানমন্ডিতে ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জানুয়ারি। বাবা সৈয়দ মহিবুল হাসান, মা সুরাইয়া হাসান। বাবা-মায়ের একমাত্র কন্যা তিনি এবং পরিবারে সবার ছোট। পরবর্তীতে সহপাঠী আইনবিদ ব্যবসায়ী আবু বকর সিদ্দিক এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ৩ সন্তানের জননী। মেয়ে নেহলা, দুই ছেলে যাবির ও জিদান। তিনি চুনারুঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ লিয়াকত হাসানের চাচাতো বোন।
১৯৬৮ সালে জন্ম নেয়া সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার পান। এর আগে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ‘পরিবেশ পুরস্কার’ লাভ করেন তিনি। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ‘গোল্ডম্যান এনভায়রণমেন্টাল প্রাইজ’ পেয়েছেন রিজওয়ানা। ২০০৯ সালে টাইম সাময়িকীর ‘হিরোজ অফ এনভায়রণমেন্ট’ খেতাব পান এই আইনজীবি ও পরিবেশকর্মী।
এছাড়া ২০১২ সালে রামোন ম্যাগসেসাই পুরস্কার পান রিজওয়ানা। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে যোগ দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)-তে। বেলা’র সংগঠক ও প্রধান মহিউদ্দিন ফারুকের মৃত্যুর পর রিজওয়ানা বেলা’র প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব নেন। বেলা’র হাত ধরেই লড়াই করেছেন পরিবেশের ক্ষতিসাধনকারী নানা চক্র আর ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে।
১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা পুরান ঢাকায় পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে প্রচারকাজ চালাচ্ছিলেন। তখন বেলা’র মাধ্যমে জনস্বার্থে আদালতে মামলা করেন রিজওয়ানা। আদালত এই কাজকে জনস্বার্থের বিপরীত বলে রায় দেন। এরপর থেকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ এমন কাজ বন্ধে উদ্যোগ নেয়। পরে জাহাজ ভাঙা শিল্পের মাধ্যমে পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনা ব্যবসায়ীদের বিপক্ষে লড়াই শুরু করেন এই পরিবেশকর্মী।
বেলার প্রধান নির্বাহী ছাড়াও তিনি ফেডারেশন অফ এনজিওস ইন বাংলাদেশ-এর সহ-সভাপতি এবং এনজিও এরডিআরএস এর সভাপতি। এ ছাড়া তিনি ‘নিজেরা করি’ সংগঠন ও এসোসিয়েশন অফ ল্যান্ড রিফর্মস এন্ড ডেভলপমেন্ট এর একজন সদস্য। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে ফ্রেন্ডস অফ আর্থ ইন্টারন্যাশনাল এর নির্বাহী সদস্য; এনভায়রণমেন্টাল ল’ এলায়েন্স ওয়ার্ল্ডওয়াইড এবং এনভায়রনমেন্টাল ল’ কমিশন অফ দ্যা আইইউসিএন এর সদস্য। পাশাপাশি দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করছেন সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অফ এনভায়রণমেন্টাল এক্টিভিস্ট (সানস্)-এ।
রিজওয়ানা হাসান ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হলেও পরে বিভাগ পরিবর্তন করে আইন বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে এলএলএম সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশের বাইরে বেশ কয়েকটি ফেলোশিপ কোর্স সম্পন্ন করেছেন। ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আইজেনহাওয়ার ফেলোশিপ করেন।