উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বললেন, নদী থেকে বালু তোলা বা আনলোড করতে কাউকে অনুমতি দেয়া হয়নি
এস কে কাওছার আহমেদ, আজমিরীগঞ্জ থেকে ॥ আজমিরীগঞ্জে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজের বাহানা দিয়ে নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। গত কয়েক বছর পূর্বে বালু উত্তোলন করার দায়ে ড্রেজার মেশিনে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন তৎক্ষালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাইমা খন্দকার। তাছাড়া অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে একই এলাকায় ড্রেজার মেশিন ভাংচুর করেছিলেন সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা সালেহা সুমি। সর্বশেষ সাবেক উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) উত্তম কুমার দাস নদীতে অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করে ভ্রাম্যমান আদালত মাধ্যমে জেল জরিমানা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের অংশে কুশিয়ারা নদী থেকে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মেঘনা নদী পর্যন্ত নৌপথে কোন সরকারি ইজারাকৃত বালু মহাল নেই। ইজারাকৃত বালু মহাল না থাকায় আজমিরীগঞ্জ এবং কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের মধ্যাঞ্চলের নদী থেকে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু। বালু উত্তোলন করে নৌকা দিয়ে এনে আনলোড করা হয়। আজমিরীগঞ্জের কাকাইলছেও এর বদরপুর, বদলপুরের পিরোজপুর গ্রাম সহ তার আশপাশ এলাকায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে হাওর রক্ষা বাঁধ। কিন্তু অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে কৃষকের ফসল রক্ষা বাঁধ নদী ভাঙ্গনের হুমকিতে পড়বে বলে আশঙ্কায় রয়েছেন নদীর তীরে বসবাসরতরা।
বালু উত্তোলনকারীদের দাবি, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে পৌরসভার ড্যাম্পিং স্টেশন নির্মাণের জন্য বালু তোলা হচ্ছে। অপরদিকে উপজেলা প্রশাসনের দাবি, বালু উত্তোলনের জন্য কাউকে কোন অনুমতি দেয়া হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, পৌর এলাকার সমীপুরের ভাটি এলাকা সংলগ্ন কাকাইলছেও সড়ক হয়ে কালনী নদীর পাড় থেকে কৃষি জমির উপর দিয়ে প্রায় কয়েক শত মিটার পাইপ বসিয়ে ড্যাম্পিং স্টেশনে বালু ফেলা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পৌরসভার ডাম্পিং স্টেশনের ভবন নির্মাণ ও ভবনে যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণের কাজ দরপত্র আহবানের মাধ্যমে শুরু করা হয়। দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি যে প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন করছে সেই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নের সৌলরী গ্রামের বাসিন্দা মোসাব্বির চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি বালু সরবরাহ ও ভরাটের দায়িত্ব নেন। এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কালনী নদীতে আনলোড মেশিন বসিয়ে বালু ভরাটের কাজ শুরু করেন তিনি।
বালু উত্তোলনের বিষয়ে মোসাব্বির চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পৌর কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই আমি বালু ভরাটের কাজ করছি।
পৌর এলাকার বাসিন্দা রেজুয়ান রহমান ও দুলাল মিয়া সহ একাধিক ব্যক্তি জানান, গত কয়েক বছরে নদী ভাঙ্গনের ফলে আমাদের অনেকের ফসলি জমি, কারো বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন যদি আবারো বালু উত্তোলন করা হয় তবে যা আছে তাও নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, উক্ত প্রকল্পটি জনস্বাস্থ্যের আওতাধীন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে এবিএম নামক একটি কোম্পানি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুয়েল ভৌমিক বলেন, পৌরসভার ডাম্পিং স্টেশনের রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। তবে বালু তোলা বা আনলোড করতে কাউকে অনুমতি দেয়া হয়নি।