নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও নিজ জন্মস্থান হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার হরিতলা গ্রামের হাজার হাজার মানুষের অনি:শেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বিশ্ব বিশ্রুত যোগ সাধক ড. স্বামী শিবানন্দ। এ যেন ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসার এক আবেগময় দৃশ্য। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবার মুখে একই সুর এতদিন আমাদের ছেড়ে কোথায় ছিলেন স্বামীজী।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বাহুবলের হরিতলা গ্রামের কৃতি সন্তান যোগ সাধক মানব হিতৈষী পরম বৈষ্ণব ১২৮ বছর বয়সী পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত ড. স্বামী শিবানন্দ’জীকে ৪নং বাহুবল সদর ইউনিয়নের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান আজমল হোসেন চৌধুরী গণসংবর্ধনা প্রদান করেন।
বাহুবলের মৌড়ি গ্রামের মন্দির প্রাঙ্গণে সকাল ১০টায় এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা ও সভাপতিত্ব করেন বাহুবল সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আজমল হোসেন চৌধুরী। সংবর্ধনা সভায় স্বামী শিবানন্দ’জীর সাথে হবিগঞ্জ থেকে যোগদান করেন প্রখ্যাত বাগ্মী শিক্ষাবিদ প্রফেসর নিখিল রঞ্জন ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট সাংবাদিক টিপু চৌধুরী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দিপুল কুমার রায়।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে সর্বপ্রথম এই ৩ জন শিবানন্দ’জীর জন্মস্থান ও হবিগঞ্জ হতে স্বামীজীর নবদ্বীপে চলে যাবার সমস্ত তথ্য উপাত্ত খুঁজে বের করেন। চেয়ারম্যান আজমল হোসেন চৌধুরী ড. স্বামী শিবানন্দ’জীকে গ্রামের প্রবেশ মুখ হতে সভাস্থল পর্যন্ত লাল গালিচা বিছিয়ে নিয়ে যান। গ্রামের মুখে স্বামীজীকে দর্শনের সাথে সাথেই হাজারো নরনারী উলুধ্বনি শংখ ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মুখরিত করে তোলে। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে পুষ্প বৃষ্টি দিয়ে ঘরের ছেলেকে সবাই বরণ করে নেয়। অবাক বিস্ময়ে গর্বিত বুকে অতল ভালোবাসায় এ সময় ছলছল করছিল গ্রামবাসীর দু নয়ন।
সভা প্রাঙ্গণে ঘরের ছেলেকে এক নজর দেখতে তাঁকে প্রণাম করতে, আশীর্বাদ পুস্প নিতে হাজারো নরনারীর ছিল বাঁধ ভাঙা জোয়ার।
সংবর্ধনা সভায় বক্তব্য রাখেন বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ নিখিল রঞ্জন ভট্টাচার্য্য, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল কাদির চৌধুরী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হাই, সাংস্কৃতিক সংগঠক দীপুল কুমার রায়, সাংবাদিক টিপু চৌধুরী, শিক্ষক জ্যোতির্ময় পাল, মাওলানা মোঃ আনোয়ার হোসাইন ও হরিতলার মেম্বার তাজুল ইসলাম প্রমুখ।
সভায় বক্তাগণ বলেন, স্বামী শিবানন্দ’জীর আগমনে এই গ্রাম ও গ্রামবাসী আজ ধন্য। এমন নিস্কাম কর্ম যোগী দীর্ঘজীবী মানব হিতৈষী বৈষ্ণব সাধক বিশ্বে বিরল। বক্তাগণ জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মানুষের সেবার মাধ্যমে ঈশ্বরের সেবা করা শিবানন্দ’জীর এই অসাম্প্রদায়িক আদর্শকে গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দেবার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাহুবলের বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ জনপ্রতিনিধি মিলিতভাবে ড. স্বামী শিবানন্দ’জীকে ফুলেল শুভেচছা জানান। ভক্তিপত্র পাঠ করেন আলমগীর কবীর। স্বামী শিবানন্দ’জী কে শ্রদ্ধাঞ্জলী ক্রেস্ট তুলে দেন চেয়ারম্যান আজমল হোসেন চৌধুরী। এ ছাড়াও তিনি গ্রামের বিশ্বজয়ী পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত ড. শিবানন্দ’জীকে শ্বেতবস্ত্র উপহার দেন।
প্রধান অতিথির ভাষণে স্বামী শিবানন্দ’জী বলেন আনন্দময় জীবন পেতে হলে আমাদের নিস্কাম কর্ম করতে হবে। নীরোগ হতে হবে। মানুষের মাঝে ভগবান আছেন এই জ্ঞানে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সেবা করতে হবে।
১২৮ বছর বয়সী সন্তান ভাঙা ভাঙা কন্ঠে তার প্রিয় জন্মস্থানের মানুষকে যখন মাইকে প্রাণভরে আশীর্বাদ করছিলেন তখন সবার হৃদয় আবেগে ভরে উঠে। আনন্দ অশ্রুতে সিক্ত হয় সবার নয়ন। সংবর্ধনা সভায় যোগদানের পূর্বে যোগী সাধক ড. স্বামী শিবানন্দ’জীর নামে মৌড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি পাঠাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং বাল্য স্মৃতি বিজড়িত হরিবল আখড়ার নতুন ভবনেরও উদ্বোধন করেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে স্বামী শিবানন্দ’জীর কাছ থেকে দীক্ষা নেন আগ্রহী নরনারী। দুপুরে কয়েক হাজার মানুষ অষ্টব্যঞ্জন নিরামিষ আহার গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে সমবেত গীতা পাঠ করেন মন্দির ভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা।
উল্লেখ্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভারত ও বাংলাদেশের প্রায় ৫০ জন বিশিষ্ট নাগরিক স্বামী শিবানন্দ’জীর সাথে যোগ দিয়ে অনুষ্ঠানকে মহিমান্বিত করেন।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com