ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস দিলেন সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এমরান হোসেন
লিটন পাঠান, মাধবপুর থেকে ॥ মাধবপুর উপজেলার ৯৫৫ একর আয়তনের বিশাল বৈকন্ঠপুর চা বাগান। চা বাগানের জন্য জমি লিজ নিয়ে অল্প জমিতে চা বাগান সৃজন করে বাকি অংশে বেআইনি ভাবে সাবলিজ দিয়ে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে গড়ে তোলা হয়েছে মৎস্য প্রকল্প এবং কৃষি প্রকল্প। ফলে বাগানের এক-তৃতীয়াংশ ভূমি চা চাষের পরিবর্তে মাছ ও সব্জি চাষ হচ্ছে। মাধবপুরে নতুন এবং পুরাতন দুই ধরনের চা বাগান রয়েছে সরকারের। ১৯৫০ সালের আগের চা বাগানগুলোকে পুরাতন এবং ১৯৫০ সালের পরের চা বাগানগুলোকে নতুন চা বাগান হিসেবে ধরা হয়। পাহাড়ি জমি, কৃষি ও অকৃষি জমি, টিলা, খাস জমি এবং চা চাষ করা যাবে এমন জায়গাকে চা বাগানের জমি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেশের বেশির ভাগ চা বাগান ১৯৫০ সালের আগের জমিদারি, রায়তি ও প্রজা সম্পত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। সেই হিসাবে ১৯১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বৈকন্ঠপুর চা বাগান পুরাতন বাগান হিসাবে স্বীকৃত। বাগানটির ইজারা গ্রহীতা কোম্পানী বাংলাদেশ প্ল্যান্টেশন লিঃ। ব্যবস্থাপনায় রয়েছে আমানত শাহ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ফার্ম টু ফার্ম ম্যানেজমেন্ট লিঃ। এর লিজের মেয়াদ শেষ হবে ২০৪০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। বতর্মানে বাগানটিতে ৪০০ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছে। সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী, পুরাতন চা বাগানের জমি যিনি ইজারা নেবেন, তাকে ভূমি উন্নয়ন কর হিসেবে সরকারকে বাৎসরিক একর প্রতি (এক একরে তিন বিঘা) ৩০০ টাকা মূল্য পরিশোধ করতে হবে এবং কোন ভাবেই শ্রেণি পরির্তন করা ও সাবলিজ দেয়া যাবে না। তবে কোন কিছু করতে হলে অবশ্যই সরকারের পূর্ব অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু বাগান কর্তৃপক্ষ কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই বাগানের ভিতরে বিশাল বিশাল ৪-৫টি পুকুর খনন করে স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীর কাছে একর প্রতি ৩ হাজার করে বাৎসরিক লিজ দিয়ে দিয়েছেন। এভাবে শত শত একর সমতল, টিলা ভূমি স্থানীয় লোকদের বাৎসরিক ৩ হাজার টাকা করে সাবলিজ দেয়া হয়েছে। সাবলিজ নিয়ে এক্সকাভেটর দিয়া পাহাড়ী টিলা কেটে সমতল করে সবজি চাষের উপযোগী করে সীম, আলু, শশা, মূলা, বেগুন, টমেটো সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করছে সাবলিজ গ্রহিতারা। সরেজমিনে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
আনিছ নামে এক কর্মচারী নিজেকে বাগানের মালিকের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বলেন- ‘এই এলাকার শরীফ ভাই বাগান কর্তৃপক্ষ থেকে সব পরিত্যাক্ত জায়গা ও পুকুর সহ একর প্রতি (বাৎসরিক) ৩ হাজার টাকা করে লিজ নিয়েছেন। পরে শরীফ ভাই আবার অন্য লোকের কাছে সাবলিজ দিয়েছেন।’ কত টাকা করে লিজ নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- একর প্রতি বাৎসরিক ৩ হাজার টাকা করে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাগান ব্যবস্থাপক সামসুল হক ভূইয়া লিজ দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি নামমাত্র টাকা দিয়ে স্থানীয় বেকারদের কাজে লাগিয়েছি। আমার বাগানে উৎপাদিত সবজি দিয়ে আশ পাশের এলাকার সবজির চাহিদা মিটচ্ছে। চা বাগানের ভূমিতে অন্য কোন কিছু চাষ করা যায় কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- ‘দেখেন বিষয়টি এভাবে না দেখে অন্যভাবে দেখেন। ভাই আসলে আমার বাগানের মোট আয়তন ৯৫০ একর। এর মধ্যে মাত্র ৩০০ একরে আমরা চা চাষ করছি। প্রতি বছর আমাদের কোম্পানীর দেড় কোটি টাকা লস হচ্ছে। এর জন্য আমাদের পতিত জায়গাগুলো স্থানীয় লোকদের দিচ্ছি। তারা জায়গাগুলো পরিস্কার করে চাষাবাদ করছে। তাদের পরিস্কার করা জায়গায় পরবর্তীতে আমরা সহজেই চা গাছ লাগাতে পারব। এটি আমাদের একটি কৌশল।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন- আমাদের চা বাগানের যে নীতিমালা বা আইন আছে সেখানে কোন ভাবেই চা বাগানের ভূমি অন্য কোন কাজে ব্যবহার করতে পারবে না এবং কোন ভাবেই পাহাড়ের টিলা কেটে সমতল করতে পারবে না বা সাবলিজও দিতে পারবে না। যদি কেউ সাবলিজ দেয় তাহলে তার লিজ বাতিল বলে গণ্য হবে। আর পাহাড়ের টিলা কাটার ফলে এক সময় বড় ধরণের পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকে এবং আমাদের জীব বৈচিত্র হুমকির সম্মুখীন হবে। বাগান কর্তৃপক্ষকে আইনের আওতায় এনে তাদের লিজ বাতিল করার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
চা বাগান বার্ষিক কার্যক্রম মূল্যায়ন কমিটি সদস্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুর হাসান বলেন- আমি বিষয়টি জানি না। কেউ এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছু বলেনি। আমি খোঁজ নিয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন- পাহাড়ের টিলা কাটা অবশ্যই অন্যায়। আমি অতি তাড়াতাড়ি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিব।