ডেস্ক রিপোর্ট ॥ ৩০ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করে ওই পদ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিয়েছেন গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ড. কামাল হোসেন। তিনি এখন থেকে গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি থাকবেন। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরামের বিশেষ জাতীয় কাউন্সিলে বয়স এবং শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় ড. কামাল হোসেন নিজেই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। কাউন্সিলে গণফোরামের নতুন সভাপতি করা হয় মফিজুল ইসলাম খানকে। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আবারো দায়িত্ব পান মোঃ মিজানুর রহমান। বিশেষ এই কাউন্সিলে দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ইমেরিটাস সভাপতি পদ সৃষ্টি করা হয়, সহযোগী সংগঠন করার সুযোগ তৈরি করা হয় এবং ১০ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির বিধান যোগ করা হয়।
বর্ষীয়ান নেতা ড. কামাল হোসেন সভাপতি হিসেবে দেওয়া শেষ বক্তব্যে বলেন, আমি বিদায় নিচ্ছি। আনুষ্ঠানিকভাবে সভাপতির পদে থাকছি না। গণফোরামকে গণমানুষের আরও কাছে নিয়ে যেতে কাজ করার জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে ড. কামাল হোসেনের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান দলটির নেতা নুরুজ্জামান। লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমার বয়স এবং শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় এখন আর সক্রিয়ভাবে সভাপতির দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায় আমি সমস্ত রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে তথা গণফোরামের সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছি।
ড. কামাল হোসেন বলেন, তিনি ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে দেশ ও জাতির জন্য সাধ্য মোতাবেক অবদান রাখার চেষ্টা করবেন। দলের প্রতি সহযোগিতা ও পরামর্শ সব সময়ই থাকবে।
ড. কামাল হোসেন বাংলাদেশের সংবিধানের প্রণেতা হিসেবেই অধিক পরিচিত। রাজনীতিতে তিনি সবসময়ই আলোচনায় থেকেছেন। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে আইনমন্ত্রী এবং ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ এ সহচর।
১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন ঢাকা-১৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
কামাল হোসেন আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে ১৯৯২ সালে গণফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন। গণফোরাম ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিএনপিসহ বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে কামাল হোসেনের দলটি। ওই নির্বাচনে গণফোরাম থেকে দুজন সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন।