স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২০১৫ সালে হবিগঞ্জ জেলা কারাগারে বসে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও হবিগঞ্জ-লাখাই আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহিরকে হত্যার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করার মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জি কে গউছের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে তাঁকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর ওই মামলায় বর্ণিত অভিযোগের মূল রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য তার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন ডিবি পুলিশের এসআই আফতাবুল ইসলাম। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ জি কে গউছের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গত ২৭ আগস্ট সদর থানার ওসি (তদন্ত) বদিউজ্জামান উল্লেখিত মামলার এজাহারভুক্ত পলাতক আসামি জি কে গউছ দীর্ঘদিন যাবত ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, তাকে গ্রেফতারে সহযোগিতা চেয়ে অতিরিক্ত কমিশনার ডিবি বরাবরে একটি আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ডিবি পুলিশ কাকরাইল এলাকা থেকে তাকে আটক করে মিন্টু রোডের ডিবি অফিসে নিয়ে যায়।
জিডির অভিযোগে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ‘জি কে গউছ পরস্পর যোগসাজশে তৎকালীন হবিগঞ্জ সদর ও লাখাই আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির এবং তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে হত্যার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করে। এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৮ আগস্ট হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। ঘটনার পর থেকে জি কে গউছ ঢাকা ও তার আশপাশ এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার পক্ষ থেকে বার্তা পাঠানো হয়। হত্যার ষড়যন্ত্রের মূল রহস্য উদ্ঘাটন এবং ওই মামলার অপর পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে জি কে গউছকে পুলিশ হেফাজতে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত শুনানী শেষে তার ২ দিনের রিমা- মঞ্জুর করেন।
গত ১৯ আগস্ট হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি আয়োজিত পদযাত্রায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ২১ আগস্ট পুলিশ বাদী হয়ে জি কে গউছকে প্রধান আসামি করে ৭শ’ মতো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করে। ওই মামলায় মঙ্গলবার জি কে গউছসহ হবিগঞ্জের ১৮৩ জন নেতাকর্মী হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিকালে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এমডি আমিনুল ইসলামের দ্বৈত বেঞ্চ তাদের ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। জামিন লাভের পর সন্ধ্যায় তিনি হাইকোর্ট থেকে বের হন। এরপরই কাকরাইল এলাকা থেকে তাকে আটক করে ডিবি পুলিশ।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই পবিত্র ঈদ উল ফিতরের দিন হবিগঞ্জ কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় জি কে গউছকে ছুরিকাঘাত করে ইলিয়াছ নামে এক হাজতি। এ ঘটনায় হবিগঞ্জ কারাগারের তৎকালীন জেইলার মো. শামীম ইকবাল বাদি হয়ে হামলাকারী ইলিয়াছকে একমাত্র আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর মডেল থানার তৎকালীন এসআই সাহিদ মিয়া। ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবদুল আলীম আসামী ইলিয়াছকে দেড় বছরের কারাদন্ড দেন। ইলিয়াছ শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার দাউদনগর গ্রামের সালেহ আহাম্মদ কনার ছেলে। ওই সময়ে হবিগঞ্জ সদর থানার এসআই সানা উল্লাহ বাদি হয়ে জি কে গউছকে প্রধান আসামী করে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তার বিরুদ্ধে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মোহিত এবং হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আবু জাহিরকে হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়।