সেহরির ফাযাইল ও মাসাইল
॥ সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহীম ॥
সেহরির ফাযাইল ও মাসাইল ঃ মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের বিধি-বিধান বড় আশ্চর্যময়। তাঁর কাছে সবকিছুর ভান্ডার রয়েছে। তিনি প্রত্যেকটি বস্তুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ তায়ালার রহমত উছিলা তালাশ করে। সেহরি খাওয়ার কথাই ধরুন। সেহরিতে বান্দার স্বীয় চাহিদা নিবারণ হয়। অথচ এর মধ্যেও সওয়াব রয়েছে। সেহরি খাওয়া সুন্নাত। হাদিস শরীফে এর অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন- রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন- ‘আল্লাহ্ ও তাঁর ফিরিশতাগণ সেহরি ভক্ষণকারীদের উপর রহমত বর্ষণ করেন। রাসুল (সাঃ) আরও বলেন, ‘সেহরি খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে’। সেহরির মধ্যে বিলম্ব করা মুস্তাহাব। সেহরি রাতের শেষ ষষ্ঠাংশ খাওয়া মুস্তাহাব। ঘুম না ভাঙ্গার দরুণ সেহরি না খেলেও রোজা রাখতে হবে এবং এতে রোজার কোন সমস্যা নেই। সেহরি খাওয়ার পর সুবহে সাদিকের পূর্বে স্ত্রী সহবাস করা জায়েজ আছে। আর গোসল সুবহে সাদিক বা আজানের পরে করলেও রোজার কোন ক্ষতি হবে না। (ফাতঃ দারুল উঃ)।
ইফতারের ফাযাইল ও মাসাইল ঃ ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা উত্তম। হাদিসে সুদ্সীতে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন- আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় ওই বান্দাগণ যারা বিলম্ব না করে ইফতার করে। রোজাদারকে ইফতার করানো অনেক সওয়াব। রাসুল (সাঃ) বলেন- যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ করবে এবং ওই রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে। তবে ওই রোজাদারের সওয়াবে কোন কম করা হবে না। রাসুল (সাঃ) আরও বলেন, যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে পরিতৃপ্তভাবে খানা খাওয়াবে আল্লাহ্ তায়ালা তাকে আমার হাউয (হাউজে কাউসার) হতে এমন পানীয় পান করাবেন, যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশের পূর্বে তৃষ্ণার্থ হবে না।
খেজুর দ্বারা ইফতার করা উত্তম। পরিমাণের চেয়ে অধিক ইফতার করা উচিত নয়। এতে রোজার উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। ইফতারের কারণে মাগরিবের নামাজে কিছুক্ষণ দেরি করা জায়েজ আছে।
ইফতারের দোয়া ঃ আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিয্ক্বিকা আফতারতু।
তারাবির গুরুত্ব, ফাযাইল ও মাসাইল ঃ তারাবির নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। মুমিন রোজাদারদের জন্য গুরুত্বের সাথে তারাবীহ নামাজ আদায় করা অপরিহার্য। রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের নিয়তে রমজানে কিয়াম (তারাবিহ আদায়) করবে, তার অতীত গোনাহ্ সমূহ মাফ হয়ে যাবে। তারাবির নামাজ বিশ রাকাত। হানাফী, শাফী, মালিকী, হাম্বলী, সমস্ত মুহাদ্দিসীন ও ফুকাহায়ে কেরামের মতে তারাবির নামাজ বিশ রাকাত। নবী করিম (সাঃ)-এর সাহাবা, খোলাফায়ে রাশেদীন, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ী সহ সকল মাযহাবের ইমামগণের মতে তারাবিহ বিশ রাকাত। এছাড়া সকল ফাত্ওয়ার কিতাবসমূহের ভাষ্যমতেও তারাবি বিশ রাকাত প্রমাণিত। বর্তমান সময়ে কিছু লোকমুখে বা কোন কোন মিডিয়ার মাধ্যমে তারাবি আট রাকাত বলে উম্মতে মুহাম্মাদীর মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সেই সাথে উম্মতের সর্বসম্মত বিষয়ের বিরোধীতা করছে। উম্মতের মধ্যে ফিৎনা, বিচ্ছিনাত সৃষ্টি করছে। সুতরাং, সাবধান! এ সকল ফিৎনাবাজদের থেকে সতর্ক থেকে স্বীয় (বিশ রাকাতের) আমলের উপর দৃঢ় ও মজবুত থাকুন।
তারাবির মাধ্যমে একবার পূর্ণ কুরআন শরীফ খতম করা সুন্নাত। তারাবির নামাজে প্রতি চার রাকাত পর কিছু সময় বসা মুস্তাহাব। সে সময় দোয়া-দুরূদ, তাসবীহ্ ইত্যাদি আদায় করা যায়। কোন দোয়া নির্ধারিত নেই।
আল্লাহ্ পাক আমাদের নামাজ, রোজা, সেহরি, ইফতার, তারাবি, তাহাজ্জুদসহ সকল আমল কবুল করুন। আমীন