আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ অনিয়ন্ত্রিত এবং ভেজাল খাদ্যাভাসে মানবদেহে দেখা দিয়েছে সুস্থতার অভাব। অনাকাক্সিক্ষতভাবে অধিকাংশ মানুষ আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন হৃদযন্ত্রের নানা অসুখে। এসব অসুখের বেশিভাগই খাবারকে কেন্দ্র করে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটু সচেতন হলেই এই হৃদযন্ত্রের অসুখ কিছুটা হলেও দূর করা সম্ভব। আর তা হলো, দৈনিক খাদ্যাভাসে ঝুঁকিপূর্ণ সয়াবিন তেলের পরিবর্তে উপকারী সূর্যমুখী তেল রান্নায় ব্যবহার করা। আশার কথা, চুনারুঘাট উপজেলায় উপকারী সূর্যমুখী তেলের বাম্পার ফলন হয়েছে। এবারের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৩ গুণ বেশী।
উপজেলার প্রত্যন্ত যে কোন গ্রামের মেঠোপথে হাঁটলেই দেখা মিলছে সূর্যমুখীর বাগান। ডানে কিংবা বায়ে ছোট কিংবা বড় ক্ষেতে চোখ জুড়ানো সূর্যমুখীর হাসিতে এখন একাকার হচ্ছেন পাড়াগায়ের মানুষও। আকর্ষণীয় ফুল আর চোখ জুড়ানোর বাগানে বিকেলে কিংবা সকালে দেখা মিলছে গ্রামের সৌখিন (গ্রামের ছেলে মেয়ে) পর্যটকদের। সেলফি আর ছবি তোলার হিড়িকে অবশ্য বিরক্ত হচ্ছেন চাষীরা। অনেকেই ক্ষেতে পাহারাও দিচ্ছেন। তবে আশার কথা বাপ দাদার সময়ের সূর্যমুখী চাষ আবার ফিরে এসেছে চুনারুঘাট উপজেলায়।
গতকাল উপজেলার সদর ইউনিয়নের নরপতি গ্রামের কৃষক ও সাংবাদিক রায়হান আহমেদ এর একটি ৪ কেয়ারের (বিঘা) বাগান সরেজমিন পরিদর্শ ন করে দেখা গেছে, তার ক্ষেতে প্রায় ৪ হাজার সূর্যমুখী ফুল পূর্ণতা নিয়ে বাতাসে দোলা খাচ্ছে। ক্ষেতের চারপাশেই উৎসুক পর্যটক সেলফি তুলছে আবার কেউ কেউ ফুল জড়িয়ে ছবি তুলছে। এ জমির কৃষক রায়হান বলেন, এই সূর্যমুখী ফসলটি আমাদের প্রদর্শনী খামার। অগ্রহায়ণ মাসের শেষে চাষ করেছি। তিনি বলেন, বিঘা প্রতি আমি উপজেলা কৃষিবিভাগ থেকে ১ কেজি করে সূর্যমুখী বীজ, কয়েক প্রকারের ৬০ কেজি সার এবং ১৫০০ টাকা করে পেয়েছি। তারপর মাটি তৈরি করে সরাসরি বীজ মাটিতে লাগিয়েছি।
চুনারুঘাটে মুলত সদ্য বিদায়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন সরকারের সময়েই সূর্যমুখী চাষের বিপ্লব ঘটে। তিনি উপজেলার প্রায় সাড়ে ৪শ কৃষককে প্রশিক্ষন দিয়ে এবং সরকারের দেওয়া সার বীজ ও প্রত্যেক নগদ প্রণোদনার প্রদান করার কারণেই পুরো উপজেলায় এখন সূর্যমুখীর বাগানে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, গত বছর উপজেলায় মাত্র ৩শ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছিল। এবার সেটা বেড়ে ১ হাজার বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। তার মধ্যে ২শ ৮০জন কৃষককে প্রদর্শনী প্লট দেওয়া হয়েছে। বাকিরা প্রনোদনা নিয়ে নিজ উদ্যোগেই এবার সূর্যমুখী চাষ করেছেন। তিনি বলেন, চলতি বছর উপজেলায় প্রায় ২শ মেঃটন তেল উৎপাদন সম্ভব হবে। পাশাপাশি পাওয়া যাবে দ্বিগুণ পরিমাণ খৈল। যা মৎস্য খামারসহ বিভিন্ন পোল্ট্রিতে ব্যবহৃত হয়। সূর্যমুখী বীজ থেকে উৎপাদিত তেলের পরিমাণ সম্পর্কে তিনি বলেন, সূর্যমুখী বীজ থেকে শতকরা ৪০ শতাংশ তেল হয়। অর্থাৎ ১০ কেজি সূর্যমুখী যদি ভাঙালে ৪ লিটার তেল আর ৬ কেজি খৈল পাওয়া যাবে। এখন প্রতিকেজি সূর্যমুখী তেলের দাম ১৫০ টাকা আর খৈলের দাম ৩০/৩৫ টাকা। এ হিসেবে ১০ কেজি সূর্যমুখী বীজের তেল ও খৈল মিলে দাম পাওয়া যাবে ৮শ টাকা।
কৃষি বিভাগের উপ পরিচালক মোঃ তমিজ উদ্দিন বলেন, আমরা যেভাবে ক্রমাগতভাবে সয়াবিন তেল বিভিন্ন খাদ্যের সঙ্গে নিয়মিত খাচ্ছি, তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। সূর্যমুখী তেল অত্যন্ত পুষ্টিসম্পন্ন এবং এতে কোলেস্টরলের মাত্রা কম। এ তেলের ভিড়ে ক্যান্সার প্রতিরোধের উপাদান আছে। সুস্থ থাকতে হলে আমাদের সূর্যমুখী তেল বা সরিষা তেল অবশ্যই খেতে হবে।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com