আমিনুর রশীদ এমরান
একটি নক্ষত্রের পতন
কামাল এম মোস্তফা
(দুই)

এনেছিলে সাথে করে মৃত্যু হীন প্রাণ
মরণে তাই তুমি করে গেলে দান।

আমি আগেই বলেছি তার সাথে আমার তেমন পরিচয় বা ঘনিষ্ঠ তা ছিল না। এমরান আমেরিকায় এসেছে যখন জানলাম তখন সে নিউইয়র্কে বসবাস করতো। এবং রাজনীতির জন্য প্রায়ই দেশে আসা যাওয়া করতো। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর এ বিষয়ে অনেক কড়াকড়ি আরোপ করে। তাকে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বলে গ্রীণ কার্ড রাখতে হলে আমেরিকায় থাকতে হবে। নতুবা বাংলাদেশ একে বারে চলে যাও। তখনই মুলত এমরান থেকে যায়। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই আটকে যায়। তার উপর দুটো মাসুম ফুটফুটে বাচ্চার মায়াও তাকে আটকে রাখাতে সাহায্য করে। ইতোপূর্বে বার বার কারান্তরীণ থাকার পরও সে দেশের জন্য ছিল উদগ্রীব। তার তৃষিত আত্মার আকুতি ফেসবুকে এখনও জ্বল জ্বল করছে। তার লেখার হাতও ছিল অনেক শক্তিশালী। ভাষা প্রয়োগে তার অগাধ জ্ঞান ছিল। বক্তব্য প্রদানে সে ছিল ঈর্ষণীয় মেধাবী। বিভিন্ন কারণেই হবিগঞ্জের স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনৈতিক অঙ্গনে সে ছিল এক ধ্রুবতারা।
মিশিগান থেকে প্রকাশিত ও চিন্ময় আচার্যি দেবু সম্পাদিত সুপ্রভাত মিশিগান লিখেছে- হবিগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক আলোচিত নাম আমিনুর রশীদ এমরান। তুখোড় এক ছাত্রনেতার নাম এমরান। স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে ছিলেন জনপ্রিয় নেতা। যার বক্তব্যে উত্তপ্ত হয়ে ওঠতো হবিগঞ্জ জেলার রাজনৈতিক মাঠ। তিনি ছিলেন সজ্জন ব্যক্তি, সদা হাস্যোজ্জ্বল“”।
নিউইয়র্ক থেকে মিশিগান আসার পর তার সাথে আমার পরিচয় হয় ব্যাকিগত পর্যায়ে। তার পর আন্তরিকতা বাড়তে থাকে। তার আচার আচরণ কথা বলার ধরনে আমি স্তম্ভিত হয়ে যেতাম। জেলা শহরে বড়ো হওয়া সারাজীবন রাজনীতি করা মানুষ এতো সহজ ও সরল। চেনা রাজনীতি বিদদের চেয়ে সে ভিন্ন। রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্রে একটু ভিন্নতা থাকে। ভিতরে এক বাহিরে এক। নাহলে নাকি রাজনীতি করা যায়না। কিন্তু এমরানকে দেখেছি ভিতরে বাহিরে এক। তার কোন অহঙ্কার নেই। কর্মব্যস্ত থাকার কারণে তার সাথে তেমন দেখা সাক্ষাৎ হতো না। কিন্তু যখন ই দোকান পাটে দেখা হতো সে খুব দরদ মাখা মাখা কন্ঠে বলতো “ কামাল ভাই আপনার কোন চিন্তা নাই, আপনার শেষ আমাদের শুরু “
আমার বার বার মনে পড়ে তার কথাগুলো। আর চোখ দিয়ে ছল ছল করে পানি পড়ে। বয়সে সে আমার দু একবছরের ছোটো হবে। কিন্তু আমার আগেই চলে গেছে। অথচ সে হবিগঞ্জবাসিকে অনেক কিছু দিতে পারতো। তার ভীতরে ছিল এক অমিত সম্ভাবনার বীজ। মিশিগান মুভ করার পর এমরান অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায়, নিজেকে গুটিয়ে নেয়। যার শরীরে মনে সদা সর্বদা রাজনীতির চিন্তা ভাবনা ছটফট করার কথা, সেই মানুষটি হঠাৎ নিরব হয়ে যায়। তার এ নিরবতা ছিল অভিমানের, স্বেচ্ছা নির্বাসনের।
হবিগঞ্জের বহুল প্রচলিত দৈনিক খোয়াই পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক রোটারিয়ান শামীম আহছান বলেন- আমিনুর রশীদ এমরান আপাদমস্তক একজন ভদ্র মানুষ। যার আচার আচরণ ছিল খুবই শিষ্টাচার সম্মত। তার হাসি মাখা মুখের ছবি আমার চোখে গেঁথে আছে’। আমি জানি না তার অকাল মৃত্যুতে হবিগঞ্জবাসির প্রতিক্রিয়া। কিন্তু মিশিগানে বসবাসরত দল মত নির্বিশেষে বাংলাদেশীরা গভীরভাবে শোকাহত। তার মৃত্যুতে অনেকেই অঝোর ধারায় কেঁদেছেন। বিজয় দিবস উপলক্ষে হবিগঞ্জবাসির এক ভার্চুয়াল আলোচনায় সভাপতির সদয় আমন্ত্রণে আমার থাকার সৌভাগ্য হয়। সেখানেও দেখেছি অনেক প্রতিভাবান শিক্ষাবিদ, প্রথিতযশা রাজনৈতিক নেতারা তাঁর অকাল মৃত্যুতে শোক প্রকাশ ও দোয়া করেছেন। আমি পরম শ্রদ্ধেয় উনাদের নাম উল্লেখ করতে পারছি না রাজনৈতিক ভিন্নমতের কারণে যদি উনারা বিব্রত বোধ করেন। কারণ আমাদের রাজনীতিতে ভিন্ন মতের প্রতি সহনশীল ও সহানুভূতি এখন আর নেই।
কবির ভাষায় বলতে হয়
এমন জীবন করিবে গঠন
মরিলে হাসিবে তুমি
কাঁদিবে ভূবন।
-কামাল এম মোস্তফা
মিশিগান যুক্তরাষ্ট