রেল গেইটের পাশে বধ্যভূমি আজও অরক্ষিত
কামরুল হাসান ॥ আজ ৮ ডিসেম্বর শায়েস্তাগঞ্জ মুক্ত দিবস। এই উপজেলায় মহান মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। তন্মধ্যে রেলওয়ে গেইটের পাশে ১১ জন চা-শ্রমিক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও সংরক্ষণ করা হয়নি। কেবল মাত্র একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে রাখা হয়েছে। যেটিতে লেখা রয়েছে ‘বধ্যভূমি’। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি গণকবরটিকে বধ্যভূমিতে পরিণত করে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা টানিয়ে রাখা।
সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে হানাদার বাহিনীর হাতে হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন উপজেলার পার্শ্ববর্তী লালচান চা বাগানের ১১ শ্রমিক। তারা হলেন- অনু মিয়া, কৃষ্ণ বাউরী, রাজ কুমার, ভুবন বাউরী, সুশীল বাউরী, নেপু বাউরী, লাল সাধু, রাজেন্দ্র রায়, গফুর রায়, মহাদেব বাউরী ও দীপক বাউরী।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে পাকিস্তান বাহিনী লালচান চা-বাগানসহ আশপাশের এলাকা ঘিরে ফেলে। পরে বাগানের কিছু শ্রমিককে হানাদাররা নানা প্রলোভন দেখিয়ে শায়েস্তাগঞ্জে নিয়ে যায় এবং ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মিনহাজুল ইসলাম বলেন, বধ্যভূমিটি সংরক্ষণ করে একটি স্মৃতিসৌধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে একটি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য শীঘ্রই মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করব।
শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. ছালেক মিয়া বলেন, বধ্যভূমিটি সংরক্ষণের জন্য পৌরসভা থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আলী জানান, চা বাগানের সহজ সরল প্রকৃতির লোকদের হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে এলাকার লোকজন তাদেরকে রেলওয়ের পরিত্যক্ত ভূমিতে গণকবর দেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী জানান, তিনি ৩নং সেক্টরে যুদ্ধে ছিলেন। দেশ স্বাধীনের পর বাড়ি ফিরে জানতে পারেন পাঞ্জাবিরা চা-বাগানের ১১ শ্রমিককে হত্যা করেছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী গোলাম মর্তুজা জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের একটি টিম ৮ ডিসেম্বর চুনারুঘাট থেকে পায়ে হেঁটে শায়েস্তাগঞ্জ দুইটি ক্যাম্প করেন। একটি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আরেকটি খাদ্যগুদাম এলাকায়। ওইদিনই পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয় শায়েস্তাগঞ্জ।