মেয়র নির্বাচিত হলে পৌর এলাকার অন্তত দেড় হাজার পরিবারকে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করব
দুর্নীতিমুক্ত মাদকমুক্ত টেন্ডারবাজি মুক্ত পৌরসভা গড়তে চাই ॥ মেয়রের ভাতা ও তেল খরচের বরাদ্দকৃত টাকা আমি নিব না, উক্ত টাকা পৌরসভার দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করে দিব
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে তরুণ মেয়রপ্রার্থী সারোয়ার আলম শাকিল। তিনি কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী নন। নেই কোন পদ পদবী। তবে তিনি বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সমর্থন করেন। তার ভাল লাগে বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শ। তাই তিনি দুর্নীতিমুক্ত, মাদক মুক্ত, টেন্ডারবাজি মুক্ত পৌরসভা বিনির্মাণে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চান। তাঁর পিতা এম.এ মোক্তাদির মুকুল ছিলেন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি শায়েস্তাগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে অত্যন্ত সুনামের সাথে ব্যবসা পরিচালনা করেন। ১৯৭৯ সালে শায়েস্তাগঞ্জ প্রেসক্লাব স্থাপনে তিনি প্রথম অনুদান হিসেবে টিন প্রদান করেন। সে হিসেবে তাকে একজন সাংবাদিক বান্ধব ব্যক্তিও বলা যায়। জীবদ্দশায় তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে বিশেষ অবদান রাখেন। ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পিতার পথ অনুসরণ করে মেয়র প্রার্থী সারোয়ার আলম শাকিলও শায়েস্তাগঞ্জের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।
মেয়র প্রার্থী সারোয়ার আলম শাকিল দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে জানান- তিনি প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। দুর্নীতিমুক্ত, টেন্ডারবাজ মুক্ত পৌরসভা বিনির্মাণে তিনি মেয়র পদে নির্বাচন করতে চান। চান পৌরসভার পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করতে।
তিনি বলেন, শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার যে এলাকায় ভোটার কম সে এলাকায় উন্নয়ন হয়েছে কম। এটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ভোটার সংখ্যা কম থাকায় পৌর এলাকার আলাপুরসহ নানা এলাকায় উন্নয়নে বৈষম্য করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৌরবাসীর সমর্থনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে পৌর এলাকার অন্তত ১ হাজার ৫শ’ পরিবারকে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করবেন। যাতে ওই পরিবারগুলোকে পেছনে ফিরে তাকাতে না হয়, কারও কাছে হাত পাততে না হয়।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ২ কন্যা সন্তানের জনক। তার মা রওশন আরা ছিলেন একজন আদর্শ গৃহিণী। আর স্ত্রী শায়েস্তাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি প্রভাষক।
পিতার আদর্শে যার পথচলা শুরু মানুষের দুর্দিনে তিনিতো বসে থাকতে পারেন না। তাইতো করোনা মহামারির সময় অসহায়দের সহযোগিতায় তিনি সাহায্যের হাত প্রসারিত করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ন্যায্যমূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ, লবণ বিক্রি করেছেন অসহায়দের মাঝে। করোনাকালীন সময়ে অন্তত ১৫ দিন পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে অসহায়দের ঘরে উপহারসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। ঈদের সময় ঈদসামগ্রী বিতরণ করেন। পৌর এলাকার সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করেন সহযোগিতা করার। তিনি একটি আধুনিক পরিচ্ছন্ন পৌরসভা গড়ে তুলতে ঘোষণা করেছেন নির্বাচনী ইশতেহার। নি¤েœ তার নির্বাচনী ইশতেহার দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র প্রার্থী সারোয়ার আলম শাকিল এর নির্বাচনী ইশতেহার ঃ ১. শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মধ্যে আধুনিক সুবিধার সম্প্রসারণ ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হবে। ২. তরুণ যুবসমাজের পাশে দাঁড়ানো ও দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। ৩. দুর্নীতির ব্যাপারে কঠোর নীতি প্রণয়ন করা হবে, কারণ আমি কখনোই দুনীতি প্রশ্রয় দেব না। ৪. বাজারের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে। ৫. মাদকমুক্ত শায়েস্তাগঞ্জ গড়তে সবসময় সচেষ্ট থাকব, মাদক ব্যবসায়ীদের ছাড় দেওয়া হবে না। ৬. সব ধরনের উন্নয়ন প্রজেক্ট মানসম্মত বাস্তবায়ন ও পৌরসভার প্রত্যেক গলিতে পাকা রাস্তা ও ড্রেনের পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হবে। ৭. সর্বস্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধিকল্পে পৌরসভার সকল শিক্ষাঙ্গনের মান উন্নয়ন করা হবে। যদিও জেলার মধ্যে সবচেয়ে ভাল স্কুল শায়েস্তাগঞ্জে। তারপরও এটা পর্যাপ্ত নয়, সীমিত আসনের কারণে অনেকেই সুযোগ পায় না। তাই সকল শিক্ষাঙ্গনের মান উন্নয়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। ৮. সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা এবং একটি হাসপাতাল নির্মাণ নিশ্চিত করব এবং প্রয়োজনে নিজ খরচে দাতব্য চিকিৎসালয় খোলা হবে। ৯. পৌরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি পয়েন্টে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন এবং গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা হবে। ১০. আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা ও কৃষকের ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা হবে। ১১. সরকারি ভাতা যোগ্য সকলের ভাতাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা হবে। ১২. মেয়রের ভাতা ও তেল খরচের বরাদ্দ আমার প্রয়োজন নেই। উক্ত টাকা পৌরসভার দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হবে। ১৩. পৌরকর সরকারি বিধি মোতাবেক সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। কারও উপর ভৌতিক কর প্রয়োগ করা হবে না। যেহেতু কর আদায়ের সাথে নগরের উন্নয়ন জড়িত তাই ব্যবসায়ী ও মুরুব্বিয়ানদের সাথে আলোচনা করেই কর ধার্য্য করা হবে। ১৪. পৌরসভার প্রত্যেক রাস্তায় স্ট্রিট লাইটের ব্যবস্থা করা হবে। ১৫. পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ২২ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও নিজস্ব পৌরভবন হয়নি, তাই নির্বাচিত হলে প্রথমেই পৌর ভবনের ব্যবস্থা করা হবে। ১৬. পৌরসভার শিশু-কিশোরদের জন্য একটি আধুনিক পরিবেশবান্ধব পার্ক করা হবে। ১৭. পৌরসভার গণ মানুষের দাবি হিসেবে একটি পৌর ঈদগাহ ও একটি পৌর শ্মশানের প্রতিষ্ঠা করা হবে। ১৮. পৌরসভার অন্তর্গত সকল উন্নয়নমূলক কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। ১৯.আমাদের পৌরসভা, আমাদের অহংকার, তাই প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে পৌরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে যেন কোনভাবেই চুরি-ডাকাতি অথবা বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য না হয়। ২০. পৌরসভার অফিসে একটি অভিযোগ বাক্স থাকবে যার সম্পূর্ণ তত্ত্ব¡াবধান শুধু মেয়রের হাতে থাকবে এবং বিশেষ প্রয়োজনে অভিযোগকারী নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হবে।