স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাছকে হাঁস-মুরগির বিষ্টা খাওয়ানোর ফলে মাছের বিভিন্ন রোগ বালাই হচ্ছে। হবিগঞ্জ জেলায় যারা মাছ চাষ করেন, তাদের অনেকেই অভিযোগ করছেন মাছ চাষ ও ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে তারা সুনির্দিষ্ট কোন পরামর্শ পান না। ফলে অনেকেই নিজেদের মতো করে হাঁস-মুরগির বিষ্টা খাওয়ানোর মাধ্যমে অনেকে মাছ চাষ করছেন। আর এ সব খেয়ে মাছগুলো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পরবর্তীতে এসব রোগাক্রান্ত মাছ বাজারে বিক্রি করায় সেগুলো মানুষও কিনে খাচ্ছেন। ফলে মানবদেহেও জটিল রোগ দানা বাঁধছে। এ ধরণের প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত মাছ মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে সতর্ক করছেন গবেষকরা। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল, নাজিরপুর, বহুলা, উমেদনগর, রাজনগর, ইনাতাবাদ, গোসাইপুর ও শ্যামলীসহ অনেক খামারেই এখনো মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয় মুরগির বিষ্ঠা ও আবর্জনা। আর এসব ট্রাক বোঝাই খাদ্য শহরে প্রবেশ করার সাথে সাথে দুর্গন্ধে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। এতে করে মানুষের মাঝে বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। এভাবে চাষের মাছ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সচেতন মহল। আর এক্ষেত্রে সরকারি কোনো নজরদারি নেই বললেই চলে। শহরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায় রুই, কাতল, মৃগেল, কৈ, পাঙ্গাশসহ বিভিন্ন ধরণের, নানান সাইজের মাছ নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। বিক্রেতাদের ভাষায় যার কোনটি নদীর মাছ আবার কোনটি চাষের। চৌধুরী বাজার থেকে নিয়মিত মাছ কেনেন শাহিন মিয়া। তিনি জানালেন, নদীর মাছ ছাড়া অন্য কোন মাছ তিনি কেনেন না। কিন্তু কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, নদীর মাছে যে স্বাদ, চাষের মাছে সেটা পাই না। চাষের মাছে সবসময়ই কেমন যেন একটা গন্ধ থাকে। অনেকটা ঘাসের মতো।’ তবে চাষের মাছ কেনেন এরকম ক্রেতারও অভাব নেই। এর বড় একটা কারণ চাষের মাছের দাম কম।
একজন নারী ক্রেতা বলেন, ”অনেক সময় নদীর রুই বা কাতল মাছের যে দাম চায়, তার অর্ধেক দামে চাষের রুই বা কাতল মাছ কিনতে পারি। কিন্তু চাষের মাছ কিনলেও মনে সবসময়ই একটা সন্দেহ থাকে যে এই মাছ কিভাবে, কোথায় চাষ হচ্ছে, মাছকে কি খাওয়াচ্ছে, এসব মাছ খেলে আমাদের কোন ক্ষতি হবে কি-না তা নিয়ে একটা ভয় থাকে।” এতেই বোঝা যায়, মাছ চাষ নিয়ে একটা সন্দেহ-সংশয় রয়েছে অনেকের মধ্যেই।
এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহজাদা খসরু জানান, হাঁস-মুরগীর বিষ্টা খুবই ক্ষতিকর। এসব মাছ খেলে ক্যান্সারসহ হরমোন জনিত অনেক রোগ বালাই হতে পারে। এ ছাড়া যে পানিতে এসব বিষ্টা ছড়ানো হবে সেই পানি যারা ব্যবহার করবে তাদেরও ক্ষতি হবে। মৎস্য অধিদপ্তর থেকে সম্পূর্ণ নিষেধ আছে এসব বিষ্টা ফিসারীতে না দেয়ার। বিশেষ করে পাঙাস, কাতলা, ঘাসকাপ, তেলাপিয়া, কার্পোকে মোটা তাজা করতে বিষ্টা খাওয়ানো হয়। এসব খেয়ে বিভিন্ন রোগ বালাই হতে পারে। মৎস্য অধিদপ্তর থেকে মনিটরিং করা হবে এবং অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।