মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ হবিগঞ্জে স্থানীয় উন্নয়ন কমিটিতে দলিতদের অংশগ্রহণ আশাব্যঞ্জক হলেও দেশের অন্যান্য স্থানে তা আদৌ সুখকর নয়। স্থানীয় উন্নয়ন কমিটিতে দলিত জনগোষ্ঠীকে স্থান না দিলে এবং তাদের সঠিক মূল্যায়ন করা না হলে দেশের কাক্সিক্ষত অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে চুনারুঘাট শ্রীবাড়ি চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি রঞ্জিত ভূইয়া বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থানীয় উন্নয়ন কমিটিতে দলিতদের অংশগ্রহণ আদৌ সম্ভব হবে কি-না সে ব্যাপারে আমি যথেষ্ট সন্দিহান। কারণ আমাদের দেশে যে কোন কমিটিতে স্থান পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। বিশেষ করে দলীয় নেতাকর্মীরা যেভাবে তদবির প্রয়োজনে শক্তি প্রদর্শন করে থাকেন, অর্থ ব্যয় করে থাকেন অর্থাৎ সবকিছু করে হলেও কমিটিতে স্থান পাওয়ার জন্য যে প্রতিযোগিতা চলে সেই ক্ষেত্রে দলিত জনগোষ্ঠীর পক্ষে সেই স্থানে যাওয়া খুবই কঠিন। মূলত যে কোন উন্নয়ন কমিটি গঠনকালে উপচেপড়া ভিড় থাকে। পরবর্তীতে দেখা যায় মিটিং করার সময় কোরাম সংকট শুরু হয়। আমাদের বাস্তবতা কাজের জন্য কমিটি নয়, কমিটিতে নাম থাকাটা বড় বিষয়। সেই কারণে দলিত জনগোষ্ঠীর পক্ষে এইসব কমিটিতে স্থান পাওয়া মোটেই সহজ নয়। যদিও কখনো আলংকারিকভাবে কোন দলিতকে কমিটিতে স্থান দেয়া হয়, বাস্তবে তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হয় কিন্তু কমিটিতে কথা বলতে দেয়া হয় না। সেই ক্ষেত্রে দলিতকে কমিটিতে নিয়ে হয়তোবা বাহাবা কুড়ানো যাবে, কিন্তু বাস্তবে দলিত দলিতদের অবস্থানেই থাকবে। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন এবং মানুষকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করার মনোভাব যতদিন সৃষ্টি না হবে ততদিন পর্যন্ত দলিত জনগোষ্ঠীকে কোন উন্নয়ন কমিটিতে স্থান দেয়া হবে লোক দেখানো মাত্র।
শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামী একাডেমী এন্ড হাই স্কুলের সহকারি শিক্ষক মোঃ আব্দুর রকিব বলেন, স্থানীয় উন্নয়ন কমিটিতে দলিত জনগোষ্ঠীকে স্থান না দিলে এবং তাদের সঠিক মূল্যায়ন করা না হলে দেশের কাক্সিক্ষত অগ্রযাত্রা সম্ভব নয়। কিছু কিছু দলিত জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করলেও তাকে আমরা শিক্ষিত মনে না করে শ্রেণি দিয়ে আমরা তাকে বিচার করি। যে কারণে সে শিক্ষিত হলেও তার শিক্ষার মূল্যায়ন পায় না। দলিত জনগোষ্ঠীর মাঝে সব সময় একটি মানসিকতা থাকে যে আমি সভাতে বা কমিটিতে আর দশজনের মতো সমান নয়। সেটি তার পূর্ব পুরুষের কাছ থেকেই এবং সমাজ থেকে শিক্ষা নেয়। সেই ক্ষেত্রে তাদেরকে কাছে টানার দায়িত্ব আমাদের। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আমরা সমাজের সুবিধাভোগী শ্রেণি আমাদের তথাকথিত আত্মসম্মান ও সামাজিক মর্যাদা চিন্তা করে তাদেরকে কাছে টানি না। পাছে কেউ ভাবে আমি আমার সামাজিক অবস্থান হারিয়ে দলিতদের পর্যায়ে যাচ্ছি নাতো? তাই প্রথম শর্ত হলো কমিটিতে স্থান পাওয়ার প্রতিযোগিতার মধ্যে দলিতদের টেনে আনা যাবে না। তাদেরকে শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। যারা শিক্ষিত তাদের অন্য দশজন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে একই কাতারের ভাবতে হবে। অর্থাৎ দলিতদের সঠিক মূল্যায়ন করা হলে তারা সমমর্যাদা লাভের পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। নিয়মতান্ত্রিকভাবেই তাকে উন্নয়ন কমিটিতে স্থান দিলে হয়তোবা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দলিত শ্রেণি মূল সমাজের সাথে পার্থক্য গুছানো যাবে। এক্ষেত্রে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের মুকুটে আরেকটি পালক যুক্ত হবে।