শায়েস্তাগঞ্জের ইতিহাস ঐতিহ্য ৪
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ যখন শায়েস্তাগঞ্জ কেবল একটি ইউনিয়ন ছিল তখনো রেলওয়ে জংশন ও এর বুক চিড়ে মহাসড়ক যাওয়ায় এই জনপদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জনপদ হিসেবে স্বীকৃত ছিল গোটা জেলায়। এরপর শায়েস্তাগঞ্জকে করা হয় পৌরসভা। তাও এটি এখন প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা। হবিগঞ্জ সদর উপজেলাধীন থাকা এই শায়েস্তাগঞ্জ এখন নিজেই একটি উপজেলা। পৌরসভা ও উপজেলা গঠিত হওয়ার পর শায়েস্তাগঞ্জের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে।
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় একটি জলমহাল রয়েছে যার আয়তন প্রায় ২০ একর। খোয়াই নদী বালু মহাল নামে একটি বালু মহালও রয়েছে। যা থেকে সরকার প্রতি বছর বিপুল রাজস্ব আয় করে থাকে। শায়েস্তাগঞ্জের উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ২টি কলেজ, ১টি কামিল মাদ্রাসা, ৬টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এছাড়াও এখানে রয়েছে হাইওয়ে থানা, ২টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস, পল্লী বিদ্যুত সমিতি, বিএডিসি গুদাম, পল্লী হাসপাতাল, রেলওয়ে জংশন, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, মৎস্য ও রেনু উৎপাদন খামার, আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পোস্ট অফিস, খাদ্য গুদাম, পশু হাসপাতাল, নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়, উপজেলা বন অফিসসহ অনেক শিল্প কারখানা। দ্রুততম সময়ে একটি শিল্পাঞ্চলে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে। দেশের প্রধান প্রধান শিল্প প্রতিষ্ঠান এ উপজেলায় স্থাপিত হয়েছে। শুধু তাই নয় যত দিন যাচ্ছে ততই নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে।
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় ৩টি আশ্রয়ন প্রকল্প রয়েছে। প্রকল্পগুলো হচ্ছে- (ক) চরহামুয়া আশ্রয়ন প্রকল্প, যার ব্যারাক সংখ্যা ২টি। এখানে ২০টি পরিবারের বসবাস। (খ) হামুয়া আবাসন প্রকল্প, যার ব্যারাক সংখ্যা ৬টি। এখানে ৬০টি পরিবারের বসবাস। (গ) খোয়াই আলাপুর আবাসন প্রকল্প, যার ব্যারাক সংখ্যা ৪টি। এখানে ৪০টি পরিবারের বসবাস।
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় ৪টি হাট-বাজার রয়েছে। এগুলো হচ্ছে কেশবপুর গরুর বাজার, শাহজি বাজার প্রকাশিত সুতাং বাজার, বাছিরগঞ্জ বাজার ও পুরাইখলা বাজার। তাছাড়া পৌরসভায় ৩টি বাজার রয়েছে। বাজারগুলো হলো- দাউদনগর বাজার, শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজার ও শায়েস্তাগঞ্জ পৌর পশুর হাট।
পৌর পরিষদ ঃ শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা ১৯৯৮ সালে গঠিত হয় এবং ২০১৩ সাল থেকে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসাবে পরিগণিত হয়। শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার আয়তন ১০.৪০ বর্গ কিলোমিটার। ওয়ার্ড সংখ্যা ০৯টি। ১নং ওয়ার্ড- শ্যামপুর, পশ্চিম বড়চর, নূরপুর আংশিক, তাপাসী, কুতুবেরচক; ২নং ওয়ার্ড- স্টেশন রোড, হাসপাতাল সড়ক, মহলুল সুনাম, দক্ষিণ বড়চর, দাউদনগর বাজার দক্ষিণ; ৩নং ওয়ার্ড- রেলওয়ে কলোনী, বিনন্দপুর, দাউদনগর বাজার পশ্চিম, চরনূর আহম্মদ (নিজগাঁও); ৪নং ওয়ার্ড- চরনূর আহম্মদ পূর্ব অংশ, চরনূর আহম্মদ পশ্চিম অংশ (দাউদনগর বাজার এরিয়া); ৫নং ওয়ার্ড- আলাপুর আংশিক, চরনূর আহম্মদ পূর্ব অংশ, পূর্ব বাগুনীপাড়া, সুদিয়াখলা; ৬নং ওয়ার্ড- লেঞ্জাপাড়া পূর্ব-পশ্চিম; ৭নং ওয়ার্ড- উবাহাটা আংশিক, কুটিরগাঁও আংশিক, পুরানবাজার; ৮নং ওয়ার্ড- সাবাসপুর, লেঞ্জাপাড়া দক্ষিণ, দাউদপুর; ৯নং ওয়ার্ড- খলাপাড়া আংশিক, জগন্নাথপুর, বিরামচর। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মোঃ ছালেক মিয়া মেয়র পদে নির্বাচিত হন। কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন ১নং ওয়ার্ডে মাখন মিয়া, ২নং ওয়ার্ডে আব্দুল জলিল, ৩নং ওয়ার্ডে মোঃ মাসুদ উজ্জামান মাসুক, ৪নং ওয়ার্ডে জালাল উদ্দিন মোহন, ৫নং ওয়ার্ডে আব্দুল গফুর, ৬নং ওয়ার্ডে মোঃ নওয়াব আলী, ৭নং ওয়ার্ডে মোঃ তাহির মিয়া খান, ৮নং ওয়ার্ডে খায়রুল আলম ও ৯নং ওয়ার্ডে সাইদুর রহমান। সংরক্ষিত ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডে মহিলা কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন আছমা আব্দুল্লাহ, ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে শিউলী বেগম এবং ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে তহুরা খাতুন লাইজু।
উপজেলা পরিষদ ঃ ২০১৯ সালের ১৯ জুন পঞ্চম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আাওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল ১৬ হাজার ৯৩৬ ভোট পেয়ে প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন গাজিউর রহমান ইমরান ও পারভিন আক্তার মুক্তা। একই বছরের ১১ জুলাই সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে তাঁরা উপজেলা পরিষদের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।