পাঠকের কলাম…
এস এম রাকিব
বাঙালী জাতীর গৌরবর্জিত বিজয়ের প্রিয় নিদর্শন স্মৃতিসৌধ। যার সাথে মিশে আছে বাঙালীর আবেগ আর শ্রদ্ধা। তাইত শ্রদ্ধার এ জায়গায় স্মৃতিসৌধের পবিত্রতা রক্ষার শর্তে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকার কথা থাকলেও মাধবপুরের তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ করেছে বাগান কর্তৃপক্ষ। দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ থাকায় আবেগ আর শ্রদ্ধার এ জায়গাটি এখন মাদকসেবীদের নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠেছে। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার জন্য দর্শনার্থীদের আনাগোনা থাকার কথা ছিলো সেখানে এখন কেবল ফেনসিডিলের খালি বোতলের ছড়াছড়ি। দেখে সহজ ভাবেই বুঝা যায় এখানকার আসল পরিবেশ।
সরেজমিনে স্মৃতিসৌধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায় স্মৃতিসৌধ এলাকায় অসংখ্য ফেনসিডিলের খালি বোতল পড়ে আছে। ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়ক থেকে তেলিয়াপাড়া চা বাগান ও বিজিবি ক্যাম্পে যাওয়ার রাস্তায় প্রবেশের পর রাস্তার দুই পাশে চা বাগানে অসংখ্য ফেনসিডিলের খালি বোতল পড়ে থাকতেও দেখা গেছে। এসময় কথা হয় এক পর্যটকের সাথে। সুনামগঞ্জ থেকে আসা কাওসার নামের ওই পর্যটক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন- এটি বাঙালীর আবেগ আর গৌরবের নিদর্শন। এর মাঝেই আছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। তাই ঐতিহাসিক এ জায়গায় ঘুরতে আসা। স্মৃতিস্তম্ভটি বাচ্চাদের দেখাতে নিয়ে আসাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু এখানে এসে দেখি পর্যটক প্রবেশে বাধা, যা খুবই দুঃখজনক। ঐতিহাসিক স্থানগুলোকে যদি এভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে ইতিহাস থমকে যাবে। আগামী প্রজন্ম প্রেরণা বিমূখ হবে। তাই আমার অনুরোধ থাকবে সার্বজনীন এই জায়গাটিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক।
জানা যায়- ১৯৭১ সালে সারা দেশে যখন বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিরোধ যুদ্ধ চলছিল ঠিক সে-ই মূহূর্তে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাঙালি সেনা কর্মকর্তারা একটি সুসংগঠিত সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ৪ এপ্রিল সকাল ১০ টায় তেলিয়াপাড়া চা বাগানের বড় বাংলোতে মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের এক ঐতিহাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সামরিক সভা। এই সভায় মুক্তিযুদ্ধের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তীতে ১০ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় সামরিক সভাটিও এখানে অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল এখানে। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হলে ৩ ও ৪ নম্বর সেক্টরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত হয় স্মৃতিস্তম্ভ। আর মুক্তিযুদ্ধের গৌরবর্জিত ইতিহাসের নিদর্শন এ স্মৃতিস্তম্ভ দেখতে প্রতিদিন শত শত পর্যটক ভিড় করেন এখানে। কিন্তু তেলিয়াপাড়া চা বাগান কর্তৃপক্ষের বাধার কারণে নিরাশ হয়েই ফিরতে হয় তাদের।
এদিকে পর্যটক প্রবেশে বাধা থাকায় নিরিবিলি থাকার সুযোগ নিচ্ছেন মাদকসেবীরা। বিভিন্ন কৌশলে স্মৃতিসৌধ এলাকায় তারা প্রবেশ করে মাদক সেবন করেন।
এ ব্যাপারে চা বাগানের নিরাপত্তা কর্মী জানান- করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা কাউকে প্রবেশ করতে দেই না। তবে অনেক সময় মাদকসেবীরা অন্য রাস্তা দিয়ে লুকিয়ে প্রবেশ করে মাদক সেবন করে থাকে।
এ ব্যাপারে কথা বলতে তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ম্যানেজার এমদাদুল হক মিঠু’র ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।