স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে হবিগঞ্জের সদ্য বিদায়ী দুদক কর্মকর্তা মলয় সাহার স্ত্রী প্রিয়া সাহার বক্তব্যে সর্বত্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও চলছে নানামুখি আলোচনা সমালোচনার ঝড়।
গত ১৬ জুলাই ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার ২৭ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে ১৬টি দেশের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহাও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে কথা বলার সুযোগ পান।
সাক্ষাৎকালে প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেন, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের লোকজনকে সহায়তা করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই। এরপর তিনি বলেন, এখন সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। আমরা আমাদের বাড়িঘর খুইয়েছি। তারা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি। বক্তব্যের এক পর্যায়ে ট্রাম্প নিজেই সহানুভূতিশীলতা স্বরূপ প্রিয়া সাহার সাথে হাত মেলান। কারা এমন নিপীড়ন চালাচ্ছে? ট্রাম্পের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘দেশটির মৌলবাদীরা এসব করছে। তারা সবসময় রাজনৈতিক আশ্রয় পাচ্ছে।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য মুহূর্তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে। তার এ ধরণের বাংলাদেশ বিরোধি বক্তব্যে বাংলাদেশের সর্বত্র শুরু হয় সমালোচনা ও নিন্দার ঝড়। এর প্রতিক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেনি। ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের বিপক্ষে নালিশ চক্রান্ত ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রিয়া সাহার বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর তার বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় বইছে। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, প্রিয়া সাহার দেয়া সমস্ত বক্তব্য মিথ্যা ও বানোয়াট। বিষয়টি অসাম্প্রায়িকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উপস্থাপনকারী বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন করেছে। এ প্রসঙ্গে বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির বহু উদাহরণ তুলে ধরছেন নেটিজেনরা। ৭১ এর চেতনায় গঠিত যে দেশে সব ধর্মের নাগরিক সমান অধিকারে সহাবস্থান করে বিশ্বে অসাম্প্রদায়িকতার মডেল হিসেবে পরিণত হয়েছে সেই দেশ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে প্রিয়া সাহার এমন বক্তব্য কখনই মেনে নেয়ার মতো নয় বলেও অভিমত দিচ্ছেন সচেতনরা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেনি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের বিপক্ষে নালিশ চক্রান্ত ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
কে এই প্রিয়া সাহা ঃ দুদক হবিগঞ্জের সদ্য বিদায়ী উপ-পরিচালক মলয় সাহার স্ত্রী প্রিয়া সাহা মহিলা ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন, থাকতেন রোকেয়া হলে। এখন একটি এনজিও আছে তার। বিভ্রান্তিমূলক কর্মকান্ডের জন্য গত বছর তাকে মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিস্কার করা হয়। বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার নাটক করে প্রচুর বিদেশি ফান্ড সংগ্রহ করেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি চরবানিরী, মাটিভাঙ্গা, নাজিরপুর, পিরোজপুর। প্রিয়ার স্বামী মলয় সাহা সহকারী পরিচালক দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের দুই মেয়ে কয়েক বছর ধরে আমেরিকায় বসবাস করছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায় আগামী রবিবার প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করবেন হবিগঞ্জের কৃতি সন্তান ব্যারিস্টার সুমন।
আরেকজন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, পরিকল্পিত! যারা খুব আদরে ছিল বাংলাদেশকে তারাই আজ জঙ্গি রাষ্ট্র বানাতে চায়? বাংলাদেশে রাজার হালে থাকার পরেও ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নালিশ! রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ!! বাংলাদেশে নাকি ৩৭ মিলিয়ন অর্থাৎ ৩ কোটি ৭০ লক্ষ হিন্দু বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান গুম হয়ে গেছে। বাংলাদেশের মুসলিম মৌলবাদীরা নাকি তার জায়গা-জমি দখল ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। বিচার দিয়ে এসেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে এবং ট্রাম্পের সাহায্য কামনা করছে। আসলে মহিলাটি হলো রানা দাস গুপ্ত ও পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোগী! আমার প্রশ্ন: এই মহিলা কি রাষ্ট্রদ্রোহী নয়?
সুমী আক্তার নামে একজন লিখেন, এই মিথ্যাবাদীকে আইনের আওতায় আনতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে।
দেওয়ান ফুয়াদ নামে একজন তার ফেসবুকে পোস্ট দেন,
প্রিয় শাহা,
তোমাকে বলার ছিলো অনেক কিছু। কিন্তু তার আগে আমার চোখে ভেসে উঠে আমার সনাতন ধর্মীয় বন্ধুদের মুখ। হ্যা,আমরা এমনটিই এদেশের মুসলিমরা। আমরা তোমাদের কিছু বলতে গেলেও চিন্তা করি হাজার বার কিছু করাতো দুরের কথা। হ্যাঁ আমরা এমনটিই। অথচ পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে নির্যাতিত হচ্ছে হাজারো মুসলিম, তাদের চোখে কিন্তু কখনো ভেসে উঠে না আমাদের মতো তাদের কোন বন্ধুর মুখ। প্রিয় শাহা তোমার মতো অনেকেই কিন্তু ভারতে বৃষ্টি হলে এদেশে বসে ভারতে ছাতা ধরে। প্রিয় শাহা, আমরা বাংলাদেশী মুসলিমরা সাম্প্রদায়িক নই, যদি হতো বাংলাদেশ আজ গুজরাট হয়ে যেতো। তোমার পাপে অনেক নিস্পাপরা ঝরে যেতো।
জালাল উদ্দিন লস্কর শাহীন নামে একজন লিখেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে মার্কিন নাগরের প্রিয়ভাজন হতে যাওয়া প্রিয়া সাহাকে তার বক্তব্যের পক্ষে তথ্য-উপাত্ত দিতে হাইকোর্টে তলব করা হউক।
বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ আসনের সাবেক এমপি মরহুম শরীফ উদ্দিনের পুত্র ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল তার ফেসবুকে লেখেন, প্রিয়া সাহা মহিলা ঐক্য পরিষদর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন, রোকেয়া হলে থাকতেন। এখন একটি এনজিও আছে ওনার। বিভ্রান্তিমূলক কর্মকান্ডর জন্য গত বছর তাকে মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার নাটক করে প্রচুর বিদেশি ফান্ড কালেক্ট করেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি চরবানিরী, মাটিভাঙ্গা, নাজিরপুর, পিরোজপুর।
প্রিয়ার স্বামী মলয় সাহা সহকারী পরিচালক দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের দুই মেয়ে কয়েক বছর ধরে মলয় সাহার দুর্নীতির টাকায় আমেরিকায় বসবাস করছেন। কিছুদিন পূর্বে প্রিয়া সাহাকে দুদকের অফিসিয়াল গাড়ি ব্যবহার করে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেন তার স্বামী, দুদকের সহকারী পরিচালক মলয় সাহা। সকালে এয়ারপোর্ট পৌঁছে ফ্লাইট মিস করেন প্রিয়া। তারপর সেদিন রাতেই আরেকটি ফ্লাইটে তিনি আমেরিকায় রওনা হন। তার বিদায় মুহূর্তে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী আকবর কবিরের কন্যা তথাকথিত মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির।
প্রিয়া সাহার এই দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের সঙ্গী হওয়ায় তার স্বামী মলয় সাহাকে অতিদ্রুত চাকুরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক; ভুলে গেলে চলবে না তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে অলরেডি অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলেছেন বাংলাদেশের।
দিবাকর জুটন নামে একজন তার ফেসবুকে লিখেন, প্রিয়া সাহার “বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র ৩ কোটি ৭০ লাখ সংখ্যালঘু নিখোঁজ”। এর প্রমাণ না দিলে, প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহি মামলা দেয়া হোক এবং বাংলাদেশে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হোক। হিন্দু মুসলিম বুঝি না বাংলাদেশকে যে ই অবমাননা করবে তার বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধও করবো।
অ্যাডভোকেট শাহ ফখরুজ্জামান লিখেন, এই সেই মলয় বাবু। কিছুদিন পূর্বেও যিনি হবিগঞ্জের দুদকের প্রধান ছিলেন। আমাদের অনেক লোকের সাথে তার সখ্যতা ছিল। তার স্ত্রী প্রিয়া সাহা যেভাবে দেশের সম্মান ডোবানোর চেষ্টা করল তারপরও কেউ ঠিকমত আওয়াজ দিচ্ছেন না। দুইদিন আগে দুদকের চেয়ারম্যান সরল মনের থিওরি দিলেন আর এখন দুদক কর্মকর্তার স্ত্রী দেশকে ডোবালেন। একজন দুদক কর্মকর্তা হয়ে কিভাবে দুই মেয়েকে আমেরিকায় লেখাপড়া করাচ্ছেন তাও দেখা উচিত নয়কি। এদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহা সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়ে যে তথ্য দিয়েছেন তা সঠিক বলে মনে করেন না ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঢাকার মেরুল বাড্ডায় বৌদ্ধ মন্দিরে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় একে অপরকে শ্রদ্ধা করে। আমার প্রথম ৮ মাসের দায়িত্ব পালনকালে আমি বাংলাদেশের আটটি বিভাগেই ঘুরেছি। মসজিদ, মন্দির ও চার্চে গিয়ে ইমাম পুরোহিতদের সঙ্গে কথা বলেছি। এখন আমি এসেছি একটি বৌদ্ধ মন্দিরে, আমার কাছে যেমনটা মনে হয়েছে, এখানকার ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাসের লোকজন একে অপরকে শ্রদ্ধা করে। তাই আমি মনে করি, তার অভিযোগ সঠিক নয়, বরং ধর্মীয় সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি উল্লেখযোগ্য নাম। তিনি আরো বলেন, ‘এ অঞ্চলের প্রধান ইস্যুগুলো কী তা যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবেই জানে।’
হবিগঞ্জের সদ্য বিদায়ী দুদক কর্মকর্তার স্ত্রী প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বলেন দয়া করে আমাদের লোকজনকে সহায়তা করুন। আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। কারা নিপীড়ন চালাচ্ছে? ট্রাম্পের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রিয়া সাহা বলেন, দেশটির মৌলবাদীরা এসব করছে ॥ বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি সঠিক বলে মনে করেন না ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com