বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্ট ও বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডে পানি ঢুকার আশঙ্কা
এম এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ থেকে থেকে ॥ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কুশিয়ারা ডাইক গতকাল রবিবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে ভেঙ্গে গেছে। ডাইকের জামারগাঁও রাধাপুর জামে মসজিদের কাছে ডাইক ভেঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলার ৫০টি গ্রাম এবং তিনটি হাওরের কয়েক হাজার একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এই ডাইকটি ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে হবিগঞ্জের তিনটি উপজেলা নবীগঞ্জ, বাহুবল, বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জের ভাটি এলাকা আক্রান্ত হবে। রাতের মধ্যে কয়েক হাজার বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁধ মেরামতের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বন্যার পানি বাড়তে থাকায় এ বাঁধ মেরামত করা সম্ভব নয় বলে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে বন্যার অবনতি হয়ে নবীগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এখনো কোন সরকারী কোন ত্রাণ এলাকায় পৌছেনি। পানিবন্দী মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এছাড়া ইনাতগঞ্জ ও দীঘলবাকের বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাইমারী স্কুলে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
বর্র্তমানে নবীগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা, বিজনা ও বরাক নদীর পানি বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করছে। বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে হবিগঞ্জ জেলার সর্বত্র তিব্র আতংক উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তৌহিদ বিন হাসান তাঁর কার্যালয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ কন্ট্রোলরুম খুলেছেন। তিনি বলেন ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ মেরামতের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। পানির প্রবল ¯্রােত থাকায় বাঁধ মেরামত করা যাচ্ছে না।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, রবিবার বিকাল ৪টা থেকে কুশিয়ারা ডাইকে মেরামতের কাজ পুনরায় শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কুশিয়ারা ডাইক ভেঙে যাওয়ার ফলে বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্ট ও বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড পানি প্রবেশ করে বৃহৎ ক্ষতির আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
দীঘলবাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সাইদ এওলা বলেন, আমরা সারারাত পাহারা দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রক্ষায় থাকলেও বিকালে হঠাৎ করে বিকট শব্দ হয়ে প্রায় ১০০ হাত জায়গা নিয়ে ভেঙ্গে যায়। ভাঙ্গন বৃদ্ধি পাচ্ছে রাতের মধ্যে ভাঙ্গন বিশাল আকার ধারণ করবে। আমার মনে হয় বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বাঁধ মেরামত করা সম্ভব নয়। আমার ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রাম বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়েছে।
আউশকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান হারুন জানান, কুশিয়ারা ডাইক ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে তার ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। জোয়াল ভাঙ্গা হাওর, বেলী বিলের হাওরে কয়েক হাজার একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। রাতের বেলা পানি বৃদ্ধি পেয়ে কি হবে আল্লাহ ভাল জানেন। এখনো সরকারী ত্রাণ সামগ্রী তার এলাকায় পৌছেনি বলে জানান তিনি।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ-বিন হাসান জানান, প্রতি ঘন্টায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলায় একটি কন্ট্রোল রুম খুলেছি। জরুরী প্রয়োজনে সার্বক্ষণিক হট লাইন নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারবেন পানিবন্দি লোকজন। তিনি আরো বলেন, কুশিয়ারা ডাইক হঠাৎ করে ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে কয়েকটি হাওরের কয়েক হাজার একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহীদুল ইসলাম ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী এম, এল সৈকত বলেন, বিকাল সাড়ে ৪টায় কুশিয়ারা নদীর পানি বর্তমানে বিপদসীমার ৫৩ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভেঙ্গে যাওয়া কুশিয়ারা ডাইকে মেরামতের জন্য আমাদের লোকজন কাজ করছে। ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে আমরা বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকাতে জোরালোভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, সময় যত যাচ্ছে পানি বাড়ছে, আজ পানি কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে বিবিয়ানা পাওয়ার ও বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডের নিচু এলাকায় পানি প্রবেশ করলেও মুল যন্ত্রপাতি নিরাপদে, কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।