
মতিউর রহমান মুন্না ॥ সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল গ্রামের তরুণী জেরিন তালুকদারের সঙ্গে কাতার থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার ইমনের। অতঃপর মন দেয়া-নেয়া। সম্প্রতি প্রেমিকা জেরিনকে বিয়ে করার জন্য দেশে আসে ইমন। বিয়ে অনেকটা ঠিকটাকও হয়েছিল। বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করতেই আত্মীয় স্বজন নিয়ে মাইক্রোবাসে করে কনের বাড়ি যাচ্ছিলেন ইমন। কিন্তু হবু স্ত্রীকে আংটি পরানো হলো না ইমনের। বিয়ের বাদ্য বাজার আগেই নবীগঞ্জের কান্দিগাঁও এলাকায় তাঁদের সেই ‘শুভযাত্রা’ থেমে যায়; থমকে যায় সব; রূপ নেয় বিভীষিকায়। চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুমড়েমুচড়ে যায় মাইক্রোবাসটি। হবু শ্বশুরবাড়ি পৌঁছানোর আগেই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলেন ইমন খাঁনসহ ১০ জন।
এক মাস আগে দেশে ফিরে জেরিনের বাড়িতে বাবাকে দিয়ে দুই বার বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় ইমন। কিন্তু কিছুতেই ইমনের সঙ্গে জেরিনের বিয়ে দিতে তার বাবা মা রাজি হননি। অবশেষে অনেক মিনতির পর রাজি হয় জেরিনের বাবা মা। এতে অনেক আনন্দে বাবা, মেঝ ভাই, বন্ধু ও আত্মীয় স্বজন নিয়ে এক মাইক্রোবাসে চড়ে বিয়ের দিন তারিখ নির্ধারণ করতেই রওনা হয় ইমন। হবু স্ত্রী জেরিন তালুকদারের সাথে বাগদানের জন্য সঙ্গে নিয়ে আসেন একটি স্বর্ণের আংটি। কিন্তু বিধি বাম পথিমধ্যে গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জ উপজেলার কান্দিগাঁও নামক স্থানে পৌঁছালে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ইমন তার মেঝ ভাই রাব্বি তাদের বাবা আইএফআইসি ব্যাংক মতিঝিল শাখার পিয়ন আব্বাস উদ্দিন, ইমনের চাচাতো ভাই খলিলুর রহমান, মামী সুমনা আক্তার, মামাতো ভাই রাজিব, খালাতো ভাইয়ের স্ত্রী আসমা আক্তার, প্রতিবেশি ইমরান ও মহসীন মিয়া মারা যান। এসময় আহত হয় নিহত সুমনা আক্তারের শিশু কন্যা খাদিজা (৪), নিহত রাজিবের বাবা আবুল হোসেন, মামাতো ভগ্নিপতি রফিক ও গাড়ি চালক নাদিম। পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় খাদিজাও। নিহত আব্বাস উদ্দিনের পকেট থেকে সেই আংটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। খবর পেয়ে ইমনের পরিবার আত্মীয় স্বজনদের কান্নায় এলাকার পরিবেশ ভাড়ি হয়ে উঠে। শোকে পাথর ইমনের মা মমতাজ বেগম কিছুই বলতে পারেনি।
ইমনের ছোট ভাই হাফেজ আব্দুল্লাহ বলেন, ইমন কাতার প্রবাসী ছিলেন। এক মাস হয় দেশে ফিরেছেন। এরপর প্রায় সময় বাবা মাকে বলতেন ফেসবুকে সিলেটের সুনামগঞ্জের এক মেয়ের সঙ্গে তার প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক হয়েছে। সেই মেয়ে তাকে বিয়ে করবে এজন্য সে দেশে ফিরেছে। সেই মেয়ের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতে বাবা মাকে তাগিদ দেয় ইমন। এতে বাবা দুই দফা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ওই মেয়ের বাড়ি গিয়ে ফেরত আসেন। তারা ইমনের সঙ্গে জেরিনের বিয়ে দিবে না বলে জানায়। এরপর জেরিনের বাবা মাকে অনেক মিনতির পর বিয়েতে রাজি করান ইমন। এতে অনেক হাশি খুশিতে আত্মীয় স্বজনকে আমন্ত্রণ করেন নিজেই। কথা ছিলো ইমন নিজ হাতে জেরিনের আঙ্গুলে আংটি পরাবে এবং যত দ্রুত সম্ভব বিয়ের দিন তারিখ নির্ধারণ করবে। কিন্তু ইমনের সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। প্রেমের জন্য এখন শুধু আমার পরিবার নয় আত্মীয় স্বজনসহ প্রতিবেশিদেরও দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে পরপারে চলে গেলেন ইমন।