মতিউর রহমান মুন্না ॥ হবু স্ত্রীকে আংটি পরাতে যাওয়ার পথে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জ উপজেলায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বরসহ নিহত ১০ জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় গতকাল শনিবার সকালে জানাজা শেষে নিহতদের মধ্যে সাতজনকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। অন্য তিনজনের মরদেহ তাদের নিজ এলাকা বরিশালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ মরদেহগুলো হস্তান্তর করে। ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ গ্রহণ করতে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করেন নিহতদের স্বজনরা। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাদের আবেদন গ্রহণ করলে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হয়। এরপর নিহত ১০ জনের মরদেহ নিয়ে স্বজনরা নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগলা মুসলিমপাড়া ও চিতাশাল নিয়ে পৌছেন ভোরে। পরে সকাল সাড়ে ৮টায় ১০ জনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সকাল ৯টায় পাগলা শাহি মহল্লা কবরস্থানে পাঁচজন ও দেলপাড়া কবরস্থানে দুজনকে দাফন করা হয়। বাকি তিনজনের মরদেহ বরিশালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে নিহতদের মরদেহ বাড়ি নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। মরদেহ বাড়িতে আসার সংবাদে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ তাদের বাড়িতে ছুটে যান। একসঙ্গে ১০ জনের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু ও প্যানেল চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন হাওলাদার নিহতদের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সান্ত¡না দেন। নিহতের স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করে এ তথ্যগুলো পাওয়া গেছে।
নিহতরা হলেন- নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পাগলা কুসুমপাড়া এলাকার হবু বর ইমন খান (২৬), তার বাবা ব্যাংক কর্মচারি আব্বাস উদ্দিন খান (৫৫), তার ভাই রাব্বি খান (২৩), মামাতো ভাই রাজিব আহমেদ (২৭), খালাতো ভাইয়ের বউ আসমা বেগম (২৮), চাচাতো ভাই খলিল (২৫), হাজি মহসীন (৭০), ইমরান মিয়া (২৪), সুমনা বেগম (২৮) ও নিহত সুমনা বেগমের শিশুসন্তান খাদিজা আক্তার (৪)। ইমনের স্থায়ী ঠিকানা বরিশালে। কিন্তু থাকতেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। সেখান থেকে স্বজনদের নিয়ে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে হবু কনেকে আংটি পরাতে যাচ্ছিলেন।
নিহতদের মধ্যে আব্বাস উদ্দিন, ইমন, রাব্বী, রাজিব ও হাজী মহসীনের মরদেহ দাফন করা হয় পাগলা শাহি মহল্লা কবরস্থানে। সুমনা ও তার শিশুসন্তান খাদিজার মরদেহ দাফন করা হয় দেলপাড়া কবরস্থানে। অন্যদিকে ইমরান, খলিল ও আসমার মরদেহ বরিশালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও পাগলা শাহি মহল্লা কবরস্থান কমিটির সভাপতি আলাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, আব্বাস উদ্দিন আমার প্রতিবেশী। তিনি একটি ব্যাংকে চাকরি করতেন। তার ছেলে ইমন কাতার থাকতো। ইমনের বিয়ে ঠিক করতে বৃহস্পতিবার রাতে আব্বাস তার ছেলেসহ আত্মীয়-স্বজন নিয়ে সুনামগঞ্জে পাত্রী দেখতে রওনা হন। কিন্তু পথে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কবলে বাবা-ছেলেসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার ভোরে তাদের মরদেহ বাড়ি আনা হয়। তিনি বলেন, আমি একসঙ্গে এতো লোকের জানাজায় কখনও অংশগ্রহণ করিনি। তাদের জানাজায় শরিক হয়ে নিজের আবেগকে সামলাতে পারিনি।
উল্লেখ্য- গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জে উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের কান্দিগাঁও নামক স্থানে প্রাইভেট হাইএস মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা লেগে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত হন।