নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ ॥ মামলার প্রস্তুতি

মতিউর রহমান মুন্না, নবীগঞ্জ থেকে ॥ প্রেমিকের ডাকে সাড়া দিতে গভীর রাতে মৌলভীবাজারের বড়লেখায় লন্ডন প্রবাসীর বাগানবাড়ি গিয়ে অবশেষে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলো নবীগঞ্জের সাহিদা বেগম নামের এক তরুণী। গত শুক্রবার লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস সিটির সাবেক কাউন্সিলর জয়নাল চৌধুরীর বড়লেখার বাগান বাড়ির দোতলা থেকে সাহিদা বেগমের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সাহিদা বেগম নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নরে রাইয়াপুর গ্রামের রব্বার মিয়ার কন্যা। শনিবার সকালে নিহতের বাড়িতে গেলে সাহিদার পরিবারের অভিযোগ করে বলেন, প্রেমের ফাঁদে পেলে তাকে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করেছে জয়নাল। এসময় তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের আহাজারিতে এলাকার আকাশ বাতাশ ভাড়ি হয়ে উঠে। তবে অপর একটি সূত্র বলছে- জয়নাল ও সাহিদা কোর্ট ম্যারেজ করে ঘর সংসার করছিলেন।
সূত্রে জানা গেছে, বড়লেখা পৌরশহরের আল আমিন মার্কেট ও ফাতেমা হাউজের সত্ত্বাধিকারী জয়নাল চৌধুরী একজন ব্রিটিশ নাগরিক। দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি লন্ডনে বসবাস করছেন। দেশে আসলে উপজেলার দাসেরবাজার ইউনিয়নের ধর্মদেহী গ্রামের বিলাসবহুল বাড়ি এবং পাশেই পানিশাইল গ্রামে তার নির্মিত অত্যাধুনিক দোতলা বাগান বাড়িতে থাকেন। এ বাড়িতে দুজন কেয়ারটেকার সপরিবারে বসবাস করে।
মনোরঞ্জন বিশ্বাস নামে পানিসাইল গ্রামের এক ব্যক্তি গত বৃহস্পতিবার সকালে জয়নাল চৌধুরীর বাগান বাড়িতে ঘাস কাটতে গিয়ে সদর দরজার ডান পাশের গ্লাস লাগানো রুমে ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। তরুণীর রহস্যজনক লাশ দেখে তিনি লোকজনকে জানান। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় থানার এসআই শরীফ উদ্দিন ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে গেইট ও দরজা তালাবদ্ধ দেখতে পান। স্থানীয় ইউপি সদস্যকে নিয়ে তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে দোতলার পশ্চিম দক্ষিণের বেডরুমে মেঝের উপর চিত অবস্থায় এক তরুণীর লাশ দেখেন। রাত ১টায় পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
স্থানীয় লোকজন জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় জয়নাল চৌধুরীকে বাগান বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেছেন। মনোরঞ্জন ওই সকাল ৮ টায় ঘাস কাটতে গিয়ে বাড়ির নিচ তলার কক্ষে তরুণীর ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায়। কিন্তু সন্ধ্যায় লাশটি দোতলায় কিভাবে গেল এ নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়।
বড়লেখা থানার ওসি মোঃ ইয়াছিনুল হক জানান, লন্ডন প্রবাসীর বাড়ির ভেতর থেকে এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ওই নারীর গলায় চন্দ্রাকৃতির চিহ্ন (দাগ) রয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে নিহতের পরিবারের কাছে লাশটি হস্তান্তর করা হয়েছে। গত শুক্রবার বিকেলে লাশটি দাফন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে শনিবার সকালে সাহিদা বেগমের নিজ বাড়ি নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নরে রাইয়াপুর গ্রামে গেলে তার পিতা রব্বান মিয়া জানান- প্রায় ২০/২৫ দিন পূর্বে বড়লেখার জয়নাল চৌধুরীর সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচয় হয় সাহিদার। এক পর্যায়ে তারা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় ৭/৮ দিন পূর্বে লন্ডন প্রবাসী জয়নাল চৌধুরী সাহিদাকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব নিয়ে বাড়িতে আসেন। কিন্তু জয়নাল চৌধুরী বয়স্ক লোক ও একাধিক বিয়ের করায় তারা এই প্রস্তাবে রাজি হননি। কিন্তু প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি লন্ডনী জয়নাল। সাহিদাকে কাছে পেতে তৈরি করে নীলনকশা। একপর্যায়ে সাহিদাকে ফুসঁলিয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে বাড়ি থেকে নিয়ে যায় জয়নাল। এরপর থেকে খোঁজ মিলছিল না সাহিদার। পরে মোবাইল ফোনে সাহিদা তার পরিবারকে জানায় সে জয়নালের সাথে তার বাড়িতে আছে।
তবে অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, সাহিদা ও জয়নাল কোর্ট ম্যারেজ করেছেন। এ সংক্রান্ত একটি ছবিও প্রতিবেদকের কাছে এসেছে।
সাহিদার পিতা রব্বান মিয়ার অভিযোগ- তার মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে জয়নাল ও তার লোকজন। এ ঘটনায় তিনি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।