স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার হবিগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে এলডিডিপি (প্রাণিসম্পদ ও দুগ্ধ উন্নয়ন প্রকল্প) এর ১১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ওই প্রকল্পের আওতায় ৪০০ জন পিজি ও নন-পিজি খামারীদের জন্য ‘বিজনেস প্ল্যান প্রশিক্ষণ’ এর আয়োজনের কথা ছিল। এ জন্য ২০২২ থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এলডিডিপি প্রকল্প থেকে বিজনেস প্ল্যান বিষয়ক ট্রেনিং দেয়ার জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান প্রকৃত খামারীদের প্রশিক্ষণ না দিয়ে, ভুয়া মাস্টাররোল, জাল স্বাক্ষর তৈরী করে ১১ লাখ টাকা আত্মসাত করে হিসাব দেখিয়েছেন।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বহুলা গ্রামের পিজি খামারী আজিজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন- ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমরা কোন সরকারি বরাদ্দ পাইনি। শুধু বরাদ্দই নয়, আমরা কোন প্রশিক্ষণও পাইনি। আমাদের প্রতি মাসে যে ট্রেনিং দেওয়া হতো তাও ৫ মাস ধরে বন্ধ। মাসিক ট্রেনিংয়ে আমাদের নগদ ২শ টাকাসহ খাবার দেওয়া হতো। আর আমরা খামারীরা ৩শ টাকা করে জমা দিতাম। কিন্তু এগুলো মোস্তাফিজুর রহমান বন্ধ করে দিয়েছেন। তার মাধ্যমে আমরা পিজি খামারীরা কোন বরাদ্দ পাইনি। বিনামূল্যে কোন প্রকার ঔধষও দেননি তিনি। বরং আমরা যখন তাকে খামারে গরু দেখাতে নেই, উপযুক্ত টাকা তাকে দিতে হয়। সরকার যেহেতু আমাদের বরাদ্দ দেন। আমাদের বরাদ্দ যারা তছনছ করেন, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দাবি জানান তিনি। উচাইল শান্তিসাহ-দৌলতপুর এর গরু’র খামারী আলমগীর হোসেন জানান, আমি ৭/৮ বছর ধরে গরুর খামার করে আসছি। কিন্তু আমাদের যেমন খামারী হিসেবে সরকারিভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তেমনি কোন ধরণের প্রশিক্ষণ ও সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। সরকার খামারীদের জন্য বিভিন্ন ধরণের ঔষধ দেয়। কিন্তু ওই সরকারি ঔষধ ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান তার মনোনীতদের দিয়ে দেন। আমাদের এলাকায় সেলিম মিয়া নামের একজন খামারী রয়েছেন, তিনি সেলিম মিয়ার মাধ্যমে আমাদের এলাকায় কাজ করেন। সেলিম যাকে বলবেন তিনি তাকে সরকারি ঔষধসহ সুযোগ সুবিধা দেবেন। অন্যথায় কাউকে তিনি কোন প্রকার সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেননি। উচাইল গ্রামের জমির আলী জানান, করোনার সময় থেকে গরুর খামার প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারি কোন সুযোগ-সুবিধা পাইনি। অথচ আমাদের এলাকায় সেলিম নামের একজন ব্যক্তি রয়েছেন, তার কোন খামার নেই, তার সাথে ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান যোগাযোগ করেন। বেটনারী চিকিৎসক হিসেবে সেলিম প্রশিক্ষিত নন, কিন্তু তাকে মোস্তাফিজুর রহমান সরকারি ঔষধ দেন। এ ঔষধগুলো বিভিন্ন খামারে বিক্রিও হয়। আমার কথা হলো প্রকৃত খামারীদের জন্য সরকার বরাদ্দ দেয়। যেহেতু প্রকৃত খামারীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। তাহলে কেন প্রকৃত খামারীদের সরকারি বরাদ্দ, প্রশিক্ষণ পাবেন না। ওই সরকারি বরাদ্দ ও টাকা যারা আত্মসাত করেছেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
খামারীদের দাবি ২০২২-২০২৫ সাল পর্যন্ত এলডিডিপি প্রকল্পে কত টাকা বরাদ্দ এসেছে, তার পূর্ণ হিসাব, কীভাবে কোন খাতে সেই অর্থ ব্যয় হয়েছে, তার স্বচ্ছ প্রতিবেদন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান দিতে পারবেন না। আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত এবং প্রকৃত খামারীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও প্রাপ্য ভাতা প্রদান করতে হবে। দ্রুত এসব দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে খামারীরা গণস্বাক্ষর দিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন। খামারীরা জানান, যদি দুর্নীতির বিচার না হয়, তাহলে সাধারণ খামারী ও কৃষকের উন্নয়ন শুধুই কাগজে থাকবে। এ ব্যাপারে তারা দ্রুত তদন্ত করে প্রকল্প বাজেটের পুরো ব্যয়ের খতিয়ান প্রকাশ করা দাবি জানান এবং ডা. মোস্তাফিজুর রহমানকে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের দৃষ্টি কামনা করেন।