
আক্তার হোসেন আলহাদী ॥ হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে অবস্থিত বাংলাদেশের বৃহত্তম মিঠা পানির জলাবন সোয়াম ফরেস্ট খ্যাত লক্ষ্মীবাউর হড়তির জঙ্গল (স্থানীয়রা হড়তির জঙ্গলা বলে ডাকেন)।
প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা হাওর বেষ্টিত প্রায় ৫ শত একর আয়তনের উপর শত বছর ধরে কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে এই জলাবন। জলাবনটি দেখতে প্রতিদিন দেশী বিদেশী নানা শ্রেণি পেশার মানুষ ঘুরতে আসেন। ঘুরতে আসা ভ্রমণ পিপাসুরা জলাবনটির সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হন।
এলো মেলো-সারি সারি দাড়িয়ে থাকা নানান প্রজাতির দেশীয় বৃক্ষ ও লতাগুল্মে আচ্ছাদিত জলাবনটি, যা একেক ঋতুতে, একেক রূপ ধারণ করে সৌন্দর্য বিলিয়ে যাচ্ছে শত বছর ধরে। দেশীয় বৃক্ষের মধ্যে রয়েছে হিজল, বরুণ, করস, বনো-গোলাফ ফুল, নল-খাগড়া সহ নাম না জানা হরেক রকমের গাছ।
শীতের অতিথি পাখিদের আশ্রয়স্থল হল এই বন (নিষেধাজ্ঞা আছে পাখি শিকারের)। হাজার-হাজার দেশি-বিদেশি নানান প্রজাতির পাখিদের কলকাকলিতে সকাল-বিকাল মুখরিত করে রাখে চারদিক। এই বনে বাস করে মেছো বাঘ, শিয়ালসহ বিভিন্ন প্রাণি। কোবরা, দাড়াশ, কেউটে, লাউডুগা সাপ সহ আছে নানান প্রজাতির সরীসৃপ।
শুকনো মৌসুমে ভ্রমণ পিপাসুরা ঘুরে আসুন প্রকৃতির একটি নতুন জায়গায়। হাওরের মাঝখান দিয়ে আরসিসি ঢালাই করা পাকা রাস্তা আপনাকে নিয়ে যাবে নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর এই হরতি জঙ্গলে। বানিয়াচং উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিঃমিঃ দূরত্বে এই জলাবনের অবস্থান। খড়তি জঙ্গলে যাওয়ার সময় (রুচি অনুযায়ী) খাবার সাথে নিয়ে যতে পারেন অথবা সেখানে রান্না করেও খেতে পারেন।
বর্ষাকালে অন্যরকম রূপধারণ করে এই বন। বিশাল জল-রাশির মাঝে দাড়িয়ে থাকে দৃষ্টিনন্দন জলাবন। বর্ষাকালে আরো বাড়তি আনন্দ দিবে বর্ষার বিশাল জলরাশি, চারদিকে জল আর জল। জলের নীচে নাম না উদ্ভিদ ও মাছেদের চলাচল মুগ্ধ করবে ভ্রমণপিয়াসীদের। নিজের চোখে না দেখলে এই বনের বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যাবে না। সঙ্গী, পরিবার, বন্ধ-বান্ধবসহ দলবেঁধে ঘুরে আসতে পারেন। আনন্দময় হয়ে উঠবে আপনার ভ্রমণ।
অবসর সময়ে বা ছুটির দিনে ঘুরে আসতে পারেন এই বনে। যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই ভাল। মোটর বাইক, সিএজি, অটোরিকসা অথবা প্রাইভেট গাড়ি নিয়েও যেতে পারেন এই বনে। রাত্রি যাপন বা রেস্ট করার জন্য এই বনের প্রবেশ মুখের কাছেই রয়েছে একটি রেস্ট হাউজ। বানিয়াচং উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ মিনিট সময়ে পৌঁছে যাবেন প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যঘেরা কাঙ্খিত লক্ষ্মীবাউর খড়তির জঙ্গলে।
সৈদ্দারঠুলা সাত মহল্লা ছান্দ সর্দার ও আবু ইউছুফ খান ওয়াক্ফ এস্টেট এর মোতাওয়াল্লী অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান বলেন, ঐতিহ্যবাহী হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার লক্ষ্মীবাউর জলাবন এর স্বত্বাধিকারী সৈদ্দারঠুলা সাত মহল্লা ছান্দবাসী। আমরা প্রতি বছর এই জলাবনকে সংরক্ষণের জন্য, জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য নানান উদ্যোগ গ্রহণ করি।