প্রতি হাটে আদায় করা লাখ লাখ টাকা যাচ্ছে কয়েকজনের পকেটে ॥ সরকার রাজস্ব বঞ্চিত
নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে গতকাল শনিবারও পশুর হাট বসিয়েছে নবীগঞ্জ জনতার বাজার পরিচালনা কমিটি। গজনাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপের নেতৃত্বে এই বাজার পরিচালিত হচ্ছে। তিনি জেলা প্রশাসন কর্তৃক বন্ধ করে দেয়া এ বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি। ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেন তাঁর নেতৃত্বে এ বাজারে অবৈধভাবে বেচাকেনা হচ্ছে গরু-ছাগল। আর টাকার বিনিময়ে ক্রেতাদের দেয়া হচ্ছে প্রত্যয়নপত্র। আদায়কৃত টাকা যাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খায়ের গোলাপসহ দায়িত্বশীল কয়েকজনের পকেটে। পশুরহাটের কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সৃষ্টি হয় যানজটের। শনিবার (১৯ এপ্রিল) দিনভর ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ঘেঁষা নবীগঞ্জ উপজেলার জনতার বাজারে অসংখ্য গরু-ছাগল বেচাকেনা হয়েছে।
সূত্র জানায়- কয়েকমাস পূর্বে জনতার বাজার অপসারণে জেলা প্রশাসনের নিদের্শনার কথা উল্লেখ করে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তির সাইনবোর্ড টানানো হয়। টানানো সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- কোনো ব্যক্তি সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো হাট পরিচালনা করলে বা অবৈধভাবে হাট পরিচালনায় সহযোগিতা করলে অথবা মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে হাট-বাজার আইন ২০২৩ ও মহাসড়ক আইন ২০২১ অনুসারে দন্ডনীয় অপরাধ হবে। আইন অমান্যকারীকে সংশ্লিষ্ট আইন মোতাবেক কারাদন্ড এবং অর্থদন্ড প্রদান করা হবে। গত ২৮ জানুয়ারি দিবাগত রাতে জনতার বাজার পশুরহাট অপসারণে প্রশাসন কর্তৃক টানানো সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তির সাইনবোর্ড ছিঁড়ে ফেলে বাজার থেকে সুবিধা ভোগকারীরা। মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় ইজারা দিতে না পারা জনতার বাজারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আদায় করা হতো হাসিল। রশিদের মাধ্যমে ওঠা টাকা জমা হতো সরকারি কোষাগারে। সিলেটের বৃহত্তম পশুর হাট নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুরের জনতার বাজারে প্রতি বছর কোটি টাকার গরু-ছাগল বিক্রির রশিদ কাটা হয়। তবে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রশিদ ছাড়াও হাসিল আদায়ের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গত ৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মো. ফরিদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জনতার বাজার অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়- জনতার বাজার পশুরহাটে কয়েক হাজার গরু ছাগল নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। পশুরহাটকে কেন্দ্র করে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে বাজারে আসেন ক্রেতারা। বাজারের একটি অংশে জনতার বাজার পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে টাকার বিনিময়ে গরু-ছাগল সনাক্তের প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয় ক্রেতা-বিক্রেতাকে। প্রতিটি গরু-ছাগল বিক্রির প্রত্যয়নপত্রের জন্য পরিচালনা কমিটিকে ৫শ’ টাকা করে দিতে হয়েছে ক্রেতাদেরকে। বাজার অপসারণে প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে অবৈধভাবে টাকার বিনিময়ে গরু-ছাগল বিক্রির প্রত্যয়নপত্র দেয়ার ঘটনায় তাদের খুঁটির জোর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।