নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুর কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ’র গণ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুলের উপস্থিতি নিয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। যদিও অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি মঞ্চে স্থান পাননি। অনুষ্ঠানকে দোসরমুক্ত করতে স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু তার পরও অনুষ্ঠান স্থলে আওয়ামী লীগ নেতাদের উপস্থিতি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।
জেলা প্রশাসক বরাবর দেয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, দিনারপুর কলেজে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া অতিদ্রুত বন্ধ, দিনারপুর ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে স্বৈরাচারের অনুসারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুলের নাম সম্বলিত প্রস্তাবিত তালিকা দ্রুত বাতিল, তালিকা প্রেরণকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, ১৬ জানুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনুষ্ঠানে ইমদাদুর রহমান মুকুলের নিমন্ত্রণ বাতিল নিশ্চিত করা। এছাড়াও ইমদাদুর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক তদন্তে প্রমাণিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে আবেদন করা হয়।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়- জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার প্রাণের বিনিময় নতুন স্বাধীন বাংলাদেশে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুর কলেজ ইতিমধ্যে ডিগ্রি কলেজে রূপান্তরিত হওয়ার প্রাথমিক অনুমতি পেয়েছে। দিনারপুর ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি-বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনোনয়নের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর একটি তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। অতি পরিতাপের বিষয় এডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুলের নাম প্রস্তাব করে দিনারপুর কলেজের অধ্যক্ষ তনুজ রায় স্বাক্ষরিত একটি তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক ঘটনা।
এছাড়া ১৬ জানুয়ারি দিনারপুর কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহকে গণ সংবর্ধনা ও সুধি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। উক্ত সমাবেশে অতিথি হিসেবে ইমদাদুর হমান মুকুলকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। মুকুলকে অতিথি হিসেবে নিমন্ত্রণ করা মানে জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার তাজা রক্ত এবং প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের চেতনার পরিপন্থি এবং আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার সু-পরিকল্পিত প্রক্রিয়া বলে মনে করছেন ছাত্র নেতারা।
জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেয়ার পরও গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বীরদর্পে হাজির হন পতিত স্বৈরাচারের অনুসারী ইমদাদুর রহমান মুকুল। তাকে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে যান শিক্ষার্থী ও অতিথিবৃন্দ। অনুষ্ঠানে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা জানান- তোপের মুখে মুকুলকে মঞ্চে উঠতে দেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। অবশেষে মঞ্চের পেছনে গাছ তলায় তিনি একটি চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের অভিযোগ- কোনো আওয়ামী লীগ নেতাকে যাতে অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেয়া হয় এ ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ নিজে কলেজ অধ্যক্ষ তনুজ রায়কে নির্দেশনা দেন। তারপরও অনুষ্ঠানে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার উপস্থিতি নিয়ে এলাকায় নানা আলোচনা চলছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তেব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ এস এম আমানুল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- রাজনীতির নামে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীভুক্ত কলেজ ক্যাম্পাসে রাজনীতি গ্রহণ করা হবে না। তিনি আরও বলেন- স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও রাজনীতির কারণে আকাশ থেকে গুলি করে ছাত্রদের হত্যা করা হয়। যা গ্রহণ যোগ্য নয়। ২০ কোটি মানুষের মাঝে ৫ কোটি মানুষকে মানবসম্পদে গড়ে তুলতে পারলে দেশ এগিয়ে যাবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা সমাজে বৈষম্য গ্রহণ করা হবে না। সবার প্রচেষ্টায় বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।
কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম দাশ অনুপের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন উপজেলা জামাতের আমীর মাওলানা আশরাফ আলী, গজনাইপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সফিউল আলম, কলেজের অধ্যক্ষ তনুজ রায়। অনুষ্ঠানে উপাচার্যকে কলেজের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক ও মানপত্র প্রদান করা হয়।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com