স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাহুবল উপজেলা সদরে স্বামীর বাড়িতে মৃতদেহ উদ্ধার হওয়া গৃহবধূ ফাতেমা বেগমের লাশের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে নিহতের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। পরিবারের সদস্য ফাতেমার লাশ বাবনাকান্দি গ্রামে নিয়ে যায়। মাগরিবের আযানের পর লাশের দাফন সম্পন্ন করা হয়।
পারিবারিক সূত্র জানায়, বাবনাকান্দি গ্রামের দিনমজুর আয়াত আলীর কন্যা ফাতেমা আক্তারকে ২ বছর পূর্বে বক্তারপুর গ্রামের রাসেল মিয়া নামে এক ব্যবসায়ীর কাছে বিয়ে দেন। রাসেল মিয়া পরিবার নিয়ে বাহুবল উপজেলা সদরে বসবাস করেন। রাসেল মিয়া ১২ বছর পূর্বে ১ম বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু তার স্ত্রী গর্ভে সন্তান না হওয়ায় স্ত্রীসহ পরিবারের মতামত নিয়ে সন্তান লাভের আশায় নিহত ফাতেমাকে ২য় বিয়ে করেন রাসেল মিয়া। বিয়ের পর তাদের দাম্পত্য জীবন সুখেই চলছিল। এর মধ্যে ফাতেমার গর্ভে আতিয়া আক্তার নামে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। আতিয়ার বয়স এখন ১৩ মাস। আবারও ফাতেমা অন্তঃস্বত্ত্বা। ফাতেমার সন্তান জন্মদান করা ও আবার সন্তান হওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারছিলো না সতিন তাসলিমা আক্তার। পরিবারের তূচ্ছ বিষয় নিয়ে প্রায় সময়ই তাসলিমা ফাতেমার সাথে ঝগড়া করতেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাসেল মিয়া তাসলিমার পক্ষ নিয়ে ফাতেমাকে মারধোর করতো। রবিবার দুপুরে ফাতেমা তার শিশু কন্যা আতিয়াকে নিয়ে সতীন তাসলিমার সাথে বাকবিতন্ডা ও ঝগড়া হয়। এরপর ফাতেমা ঘরের দরজা বন্ধ করে গলায় দঁড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন ফাতেমা। স্বামীসহ স্থানীয় লোকজন এ দৃশ্য দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে বাহুবল থানার এসআই মুকসেদ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। গতকাল ফাতেমার লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে পুলিশ তার পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে। সন্ধ্যায় বাবনাকান্দি গ্রামে ফাতেমার লাশের দাফন সম্পন্ন করা হয়। তবে ফাতেমার পরিবারের অভিযোগ তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে তার স্বামীর বাড়ির লোকজন। এ ব্যাপারে নিহত ফাতেমার বড় বোন শিল্পী আক্তার জানান, আমরা দরিদ্র পরিবারের জন্মগ্রহন করেছি। দরিদ্র হওয়ার কারণে বিবাহিত রাসেল মিয়ার কাছে আমার ছোট বোন ফাতেমাকে বিয়ে দিয়েছি। কিন্তু ফাতেমার সতিন তাসলিমা মন থেকে ফাতেমাকে মেনে নিতে পারেনি। প্রায় সময়ই তূচ্ছ বিষয় নিয়ে ফাতেমার সাথে ঝগড়া করতো। সন্তান হওয়ার আরো বেশি ঝগড়া করতো তাসলিমা। এ নিয়ে প্রায় সময় ফাতেমাকে মারপিট করতো রাসেল। এ বিষয়গুলো ফাতেমা আমাদেরকে ফোন করে জানাতো। আমি বলতাম সহ্য করে সংসার করার জন্য। কয়েকবার বিচারও করা হয়েছে। তাতেও ক্ষ্যান্ত হয়নি রাসেল ও তার পরিবার। রবিবার তারা পরিকল্পিতভাবে আমার বোনটা হত্যা করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে। আমি আমার বোন হত্যার বিচার চাই। নিহত ফাতেমার বাবা আয়াত আলী জানান, পরিকল্পিতভাবে রাসেল, তাসলিমাসহ পরিবারের লোকজন আমার মেয়েটাকে হত্যা করেছে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। নিহত ফাতেমার মা রাহেনা বেগম জানান, আমার মেয়েটা অন্তঃস্বত্ত্বা ছিল। আমার মেয়েকে তার স্বামী রাসেল ও পরিবারের লোকজন হত্যা করে নিজেরা বাঁচার জন্য গলায় ফাঁস লাগিয়েছে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
এ ব্যাপারে বাহুবল থানার ওসি জাহেদুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ফাতেমা আত্মহত্যা করেছে। তবে ময়না তদন্তের প্রতিবেদন আসলেই মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com