বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৯ হত্যা মামলা থেকে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের রক্ষা করতে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা বিএনপির সভাপতি মুজিবুল হোসেন মারুফ ও সাধারণ সম্পাদক নকীব ফজলে রকিব মাখনের দলীয় পদ স্থগিত করা হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে ৯ জন শহীদ হওয়ার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা থেকে রক্ষা করতে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের নিকট থেকে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগে তাদের দলীয় পদ স্থগিত করা হয়। মঙ্গলবার বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) আলহাজ্ব জি কে গউছ স্বাক্ষরিত পত্রে তাদের এ পদ স্থগিত করা হয়। একই সাথে বিষয়টি তদন্ত করতে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান চৌধুরী, অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন সেলিম ও আব্বাস উদ্দিনকে দিয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। তদন্তকালীন সময়ে উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আল হাদী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহির হোসেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন।
৬ জানুয়ারি বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী অভিযুক্তদের পদ স্থগিত করে তাদের কাছে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠির অনুলিপি বিএনপি’র মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ সিলেট বিভাগের বিএনপি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বানিয়াচঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলায় ৯ ছাত্রজনতা নিহত হন। এ ঘটনায় জড়িত আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতাকর্মীর কাছ থেকে বানিয়াচং উপজেলা বিএনপির সভাপতি মুজিবুর রহমান মারুফ ও সাধারণ সম্পাদক নকীব ফজলে রকিব মাখন উৎকোচ গ্রহণ করেন। এতে হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত অনেকেই মামলা থেকে রক্ষা পেয়ে যান। শুধু তাই নয়, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বজনপ্রীতি করে হত্যাকান্ডে জড়িত তাদের আত্মীয় স্বজনদেরও মামলার আসামী করা হয়নি। এ নিয়ে বানিয়াচং উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এহেন কর্মকান্ড নিয়ে লেখালেখি শুরু করেন। এসব বিষয় জানতে চাইলে উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
এ পরিপ্রেক্ষিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ৯নং পুকড়া ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি মাওলানা লুৎফুর রহমান খান গত ২০ ডিসেম্বর স্থায়ী কমিটির সদস্য সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অধ্যাপক ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডাঃ জাহিদসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছকে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে জি কে গউছ পুকড়া বিএনপি’র সভাপতির অভিযোগ তদন্তের জন্য ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন এবং কমিটিকে আগামী ১ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। তদন্তকালীন সময়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ স্থগিত ঘোষণা করেন। এ সময়ে উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আল হাদী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহির হোসেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান চৌধুরী, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন সেলিম ও যুগ্ম আহ্বায়ক আব্বাস উদ্দিন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) আলহাজ্ব জি কে গউছ দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে বলেন, দলের ইউনিয়ন কমিটির একজন সভাপতি অভিযোগ দিয়েছেন তারা বৈষম্য বিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে ৯ জন শহীদ হওয়ার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা থেকে আসামীদের রক্ষা করার নামে উৎকোচ গ্রহণ করেছেন। যেহেতু তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হয়েছে তাই বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের দলীয় পদ স্থগিত করা হয়েছে। অভিযোগটি তদন্ত করতে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। কমিটির ৩ জনই জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। তাদেরকে আগামী এক মাসের মধ্যে তদন্ত করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।