মো. মামুন চৌধুরী ॥ ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয়েছিল শায়েস্তাগঞ্জ শহর। সেই সময়ে মুক্তিকামী জনতা আকাশে উড়িয়েছিল বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজ পতাকা। চারদিকে মুখে মুখে ধ্বনিত হচ্ছিল শ্লোগান। এরমধ্যে অতিবাহিত হয়েছে ৫৩টি বছর। ৬ ডিসেম্বর শায়েস্তাগঞ্জ মুক্ত দিবস নিশ্চিত করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব সফিকুর রহমান।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যা শুরুর পর গড়ে তোলা হয় প্রতিরোধ। বৃহত্তর সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে মুক্তিবাহিনী উড়িয়ে দেয় শায়েস্তাগঞ্জ খোয়াই ব্রিজটি। স্থানে স্থানে রেললাইনেও প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ২৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই পাক-হানাদার বাহিনী শায়েস্তাগঞ্জ শহরে এসে উপস্থিত হয়। এখানে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানীরা সাধারণ মানুষের ওপর চালাতে থাকে নির্মম অত্যাচার। যোগাযোগের জন্য খোয়াই নদীতে ফেরী চালু করে। স্থাপন করে ক্যাম্প। তারা মেরামত করে ব্রিজটি। অসংখ্য মানুষকে চোখ বেঁধে বিধ্বস্ত খোয়াই ব্রিজের ওপর থেকে কখনো গুলি করে, আবার কখনো হাত-পা বেঁধে জীবন্ত অবস্থায়ই নদীতে ফেলে দিতো হায়েনার দল।
সিলেটের সর্বত্র যুদ্ধে হেরে পাকিস্তানী বাহিনী সড়ক ও রেলপথে শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে পালাতে থাকে। একই সঙ্গে শায়েস্তাগঞ্জ থেকেও ছটকে পড়ে হায়েনার দল। দীর্ঘ নয় মাস পর এলাকার সর্বস্তরের মানুষ বিজয় পতাকা হাতে বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। গগণ বিদারী শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে শায়েস্তাগঞ্জ শহর।
শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডস্থ পূর্ববড়চর স্কুল প্রাঙ্গণে রয়েছে সিলেট বিভাগের প্রথম দুই শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফিজ উদ্দিন শহীদ ও মহফিল হোসেনের কবর। দাউদনগরবাজার রেলওয়ে গেইট সংলগ্নে রয়েছে বধ্যভূমি। এ বধ্যভূমিতে ১১ জন চা শ্রমিককে পাকরা গণহত্যা করে মাটি চাপা দিয়ে রাখে। পুরানবাজার রেলওয়ে ব্রিজে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে পাকিস্তানীরা।