তাহমিনা বেগম গিনি
ক’দিন ধরেই প্রায় প্রতিদিন ফেসবুকে দেখছি “শেয়ার করুন এই বাচ্চাটিকে ওমুক জায়গায় পাওয়া গিয়েছে”। কেউ কিছুই বলতে পারে না শিশুটি শুধু মা অথবা বাবার নাম বলতে পারে। প্রথম প্রশ্ন হলো এত বাচ্চা প্রায় রোজই হারায় কেমন করে? এরাতো খুব ছোট নয়। মা-বাবা কি খেয়াল করেন না? আবার অনেকে কিছুই বলতে পারে না। এখন আমাদের ছোটবেলার কথা বলতে হয়। আমরা যখন কথা বলতে শিখেছি তখনই আমাদেরকে মুখে মুখে মা, বাবা, নানা, দাদার নাম, কোথায় থাকি এসব আমাদের মা-বাবারা শিখিয়ে দিতেন। তখন তো আমরা ৫-৬ বছর বয়সে সরাসরি প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হতাম। এখনকার বাচ্চারাতো কয়েকটি শ্রেণি পার হয়ে প্রথম শ্রেণিতে উঠে। তাহলে তারা এসব জানবে না কেন? যদিও কাজটি পারিবারিক। তখন আমাদের মা-চাচিরা সু-গৃহিনী ছিলেন। এখনকার মায়েদের সময় কই? স্কুলে নামিয়ে দিয়ে অথবা মোবাইল হাতে দিয়ে চাকুরির ক্ষেত্রে দৌঁড়। তারপর এখন আবার শুনছি তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা হবে না। শিশুরা তাদের নিজের নাম লেখাটা শিখবেতো? যাদের সন্তান হারিয়ে যায় তাদের দুঃখ শুধু তারাই বুঝে। দয়া করে আপনার শিশুকে তার নাম, বাবার নাম, কোথায় থাকে এইটুকু শিক্ষা দিন। শিশুকে স্বযতেœ সুরক্ষিত রাখুন। এই ছবিগুলো ফেসবুকে দেখে খুব কষ্ট হয়। পানিতে পড়ে শিশু মৃত্যুতো অহরহ ঘটছে। গত একটি সপ্তাহ দেশের উপর দিয়ে অনেক অঘটন ঘটে চলছে। কিন্তু কেন? এমনিতেই বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষার অবস্থা খুবই নাজুক। আজ এই দাবী, কাল ওমুক দাবী লেগেই আছে। রাস্তাঘাট বন্ধ করে চলে এইসব আন্দোলন। এর মাঝে তিনটি কলেজ কিভাবে শেষ হয়ে গেল বিশেষ করে মাহবুবুর মোল্লা কলেজ। এই তিনটি কলেজের অবকাঠামো ঠিক না হওয়া পর্যন্ত পাঠদান শুরু করা যাবে না। তাহলে এই কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের কি উপায় হবে? এতদিন এত দাবী কোথায় ছিল। আরো দেখলাম মিথ্যে কথা বলে মানুষদের জড়ো করে শাহবাগ দখলের পায়তারাও নাকি চলছিল। কিন্তু কেন? এর মাঝে গার্মেন্টেস এ শ্রমিক অসন্তোষতো আছেই। আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি এদেশ সোনালী আঁশ (পাট), আখ (চিনি) নিউজপ্রিন্টের জন্য বিখ্যাত ছিল। এগুলো হারিয়ে গিয়েছে। তারপর এলো গার্মেন্টস, চা বাগান, চামড়া শিল্প এসব হারিয়ে যাওয়ার পথে। এসব যে ষড়যন্ত্র এই বিষয়টি মেনে নিতেই হবে। দেশে বিদেশে সবাই মিলে ষড়যন্ত্র করে।
দেশটাকে ছোবড়া করতে চাচ্ছে। শেষ ঘটনা ঘটলো ইসকনের জনৈক নেতাকে নিয়ে। ইসকন নিয়ে আমার ব্যক্তিগত তেমন কোন জ্ঞান ছিল না। এখন গুগল, ফেসবুকের কল্যাণে যা জানছি তাতেই আশ্চর্য হচ্ছি। এই নেতা আবার সনাতন ধর্মের নেতাদের দ্বারা বহিস্কৃত। এই বহিস্কৃত নেতার জন্য এত জন সমাগম কিভাবে হলো? এই ভাবনা এসেই যায়। এবং শেষ পর্যন্ত একজন আইনজীবীকে কি নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কি কোন দায়িত্ব নেই? সেনাবাহিনীও তো এখন মাঠে। কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য পাগল। নির্বাচন দিলে কি সব ঠিক হয়ে যাবে? জানিনা, বুঝিনা। শুধু দেশটার কথাই ভাবি। সেই সিরাজউদ্দৌল্লার আমল থেকে শুরু করে এ দেশে অনেক মিরজাফরের আগমন ঘটেছে। যাদের বা যাকে দেশপ্রেমিক ভাবতাম এখন সবার সবকিছু যখন সামনে এসেছে, তখন আর কিছু বলতে ইচ্ছে করে না। এই দেশ সকল ধর্মের লোকের জন্য। ডিসেম্বর মাস কি আমি বা আমার মতো বয়স যাদের তারা কি ভুলতে পারবে? কিন্তু আমরা আসল দেশপ্রেমিকদের চিনতে ভুল করেছি। ধর্মের নামে দেশ একটি বড় গুলমালের হাত থেকে বেঁচেছে। আমরা অনেকেই এখন ভুলতে বসেছি ১৯৭১ সালে একটি যুদ্ধ হয়েছিল। যাদের জন্ম ৭১ এর পরে, তারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। ফলে তারা সে যুদ্ধের কারণ, মহিমা, গুরুত্ব অনুধাবন নাও করতে পারে। এটা তাদের অপরাধ নয়। আজকালকার অনেক ছেলে মেয়েরা বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসই জানেনা। আর বিগত দিনগুলিতে আমাদের বাচ্চাদের যা শেখানো বোঝানো হয়েছে তার সবটাই যে সত্যিকারের ইতিহাস সেটাও বলা যাবে না। কথায় ছাই দিয়ে আগুন চাপা দিয়ে রাখা যায় না। বিগত আগস্ট মাসে সেই ছাই উড়ে গিয়েছে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে নতুন নতুন ইতিহাস প্রকাশ পেয়েছে। বৃটিশ, পাকিস্তানী ছিল ভিনদেশী লুটেরা। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে স্বদেশী লুটেরারা দেশপ্রেমিকের নেকাবের আড়ালো ঘুষ, দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় অর্থ সম্পদ লুন্ঠন ও বিদেশে পাচার করে আমাদের দেশকে সত্যিকার অর্থেই সৃষ্টি করেছে ফুটো কলসিতে। সমাজ পরিণত হয়েছে দুর্বৃত্তকারীদের অভয়ারণ্যে। যে অরণ্যে শান্তিপ্রিয় লোকেরা অসহায়। আসলে এই দুনিয়া বিচিত্র জায়গা। সবার প্রত্যাশা ধরা দেয় না। জীবন থেকে হারিয়ে যায় হাসি আনন্দ। কবে এ আঁধার কাটবে জানিনা। তবুও আমরা স্বপ্ন নিয়েই বাঁচতে ভালবাসি। সেই ছোটবেলা ভাব সম্প্রাসারণের লেখাটা এখন কেন যেন মনে হয় বড় বেশী অকার্যকর হয়ে পড়েছে-
“পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও।
তার মত সুখ কোথাও কি আছে
আপনার কথা ভুলিয়া যাও”।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com