
হত্যা মামলায় ব্যারিস্টার সুমনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
সুমনের সমর্থকদের মারপিট ॥ শ্লোগানে শ্লোগানে উত্তপ্ত আদালত প্রাঙ্গণ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা মামলার আসামী হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের রিমান্ড শুনানির জন্য আদালতে হাজির করা হলে হবিগঞ্জের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ উত্তপ্ত হয়ে উঠে। দুপুরে তাকে হবিগঞ্জের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্ত্বরে নিয়ে আসামাত্র তাকে বহনকারী পুলিশের গাড়ি বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার রোষানলে পড়ে। বিপুল সংখ্যক পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়। আদালতে হাজির করা শেষে তাকে কারাগারে নেয়ার সময় পুনরায় পুলিশের সামনেই ছা
ত্র-জনতার আক্রমণের শিকার হন ব্যারিস্টার সুমন। এ সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতার তাকে উদ্দেশ্য করে আক্রমণাত্মক শ্লোগান দেন এবং তাঁর ফাঁসি দাবি করেন। পুলিশের ভূমিকায় বড় ধরণের অঘটন থেকে রক্ষা পান ব্যারিস্টার সুমন। আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার সুমনের স্বজনরা।
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে কড়া নিরাপত্তায় সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যানে করে হবিগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে আদালতে নেওয়া হয়। তাকে ভ্যান থেকে নামিয়ে আদালত ভবনে প্রবেশ করানোর সময় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তার শাস্তি চেয়ে শ্লোগান দেন। শত শত লোকের ভিড় থেকে কয়েকজন ব্যারিস্টার সুমনকে উদ্দেশ্য করে ডিম নিক্ষেপ করেন। তবে আগে থেকেই আদালতে পুলিশের অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার ছিল।
আদালতে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, চুনারুঘাট থানার এসআই লিটন রায় ব্যারিস্টার সুমনের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। বিজ্ঞ বিচারক শুনানি শেষে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ব্যারিস্টার সুমন যখন আদালতের কাঁঠগড়ায় তখন আদালত প্রাঙ্গণে একদল লোক তাঁর মুক্তি চেয়ে তার পক্ষে শ্লোগান দেয়। এ নিয়ে তারা বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতার আক্রমণের শিকার হন। এক পর্যায়ে কয়েক যুবককে গণপিটুনি দেয়া হয়।
আদালতে রিমান্ড মঞ্জুরের পর পুলিশ যখন ব্যারিস্টার সুমনকে কারাগারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছিল তখন তিনি উপস্থিত সাংবাদিকসহ লোকজনকে লক্ষ্য করে বলেন- ‘আমি কারাগারে রয়েছি, এতে আমার কোন দুঃখ নেই। আমি চাই বাংলাদেশ ভাল থাকুক, হবিগঞ্জ ভাল থাকুক’।
অপরদিকে আদালত চত্ত্বরে উপস্থিত ছাত্র-জনতা সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন- ব্যারিস্টার সুমন ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনার দোসর। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনার তৈনি করা যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে ব্যারিস্টার সুমনের দায়িত্ব পালনকালে মিথ্যা মামলায় কত নিরপরাধ রাজনীতিবিদের ফাঁসি হয়েছে। এর দায় তাকেই বহন করতে হবে। এ সময় ছাত্র-জনতা ব্যারিস্টার সুমনের ফাঁসি দাবি করেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ গোলচত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে ১১ সেপ্টেম্বর সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনসহ ৯৭ আসামির নাম উল্লেখ করে প্রায় ২০০ জনের বিরুদ্ধে চুনারুঘাট থানায় মামলা হয়। এছাড়া, হবিগঞ্জের মাধবপুরে সরকারি ডাকবাংলোয় হামলা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ এবং রাজধানী ঢাকার বনশ্রীতে আন্দোলনের হামলা মামলায়ও তিনি আসামি। গত ২২ অক্টোবর ঢাকার মিরপুর থেকে ব্যারিস্টার সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার (২০ নভেম্বর) তাকে ঢাকার কারাগার থেকে হবিগঞ্জ জেলা কারাগারে আনা হয়।
এর আগে তাকে কারাগার থেকে আদালতে নেওয়ার খবর পেয়ে চুনারুঘাট উপজেলার ২৫ থেকে ৩০ জন মধ্যবয়সী নারী ও যুবক সেখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন।