এক সময় হবিগঞ্জ শহরবাসী দৈনন্দিন কাজে পুকুরের পানি ব্যবহার করতেন
স্বাধীনতা পরবর্তী হবিগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে ক্ষিতিশ চন্দ্র দেব চৌধুরী ও ফকির তালিব হোসেন চৌধুরীর আইনী লড়াই চলাকালে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী প্রায় আড়াই বছর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ হবিগঞ্জ শহরের দীর্ঘকালের সাক্ষী হবিগঞ্জ পৌরসভার এক সময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় চেয়ারম্যান শহীদ উদ্দিন চৌধুরী। শহরের শত বছরের ইতিহাস সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন- কথিত আছে, সুলতানশী সৈয়দ বংশের অধঃস্তন পুরুষ সৈয়দ হেদায়েত উল্লাহর পুত্র সৈয়দ হবিব উল্লা খোয়াই নদীর তীরে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন- যার নামকরণ করা হয়েছিল ‘হবিবগঞ্জ’। কালক্রমে ‘হবিবগঞ্জ’ পরবর্তীতে ‘হবিগঞ্জ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। একটি বাজার থেকে গড়ে উঠা এই হবিগঞ্জ শহর ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম প্রশাসনিক এলাকা হিসেবে সাবডিভিশনের মর্যাদা লাভ করে।
১৯৭৩ সালে স্বাধীনতা পরবর্তী হবিগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ক্ষিতিশ চন্দ্র দেব চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট ফকির তালিব হোসেন চৌধুরী। ওই নির্বাচনে তালিব হোসেন চৌধুরী বিজয়ী হলে ক্ষিতিশ চন্দ্র দেব চৌধুরী আদালতের স্মরণাপন্ন হন। এ প্রেক্ষিতে আদালত থেকে দুই জনের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ফলে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিনি দীর্ঘ আড়াই বছর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তখনকার সময়ে শহরের প্রায় ৯০ ভাগ বাসা-বাড়িতে কাঁচা লেট্রিন ছিল। পাইপ লাইনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের কোন ব্যবস্থা ছিল না। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ছিল খুবই নড়বড়ে। কিছু কাঠের খুঁটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু থাকলেও শহরের অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। শহরে বসবাসকারী লোকজনের বিশুদ্ধ পানি পানের মাধ্যম ছিল বিভিন্ন পাড়ার টিউবওয়েল। গুটি কয়েক টিউবওয়েল থেকে পাড়ার সকলেই পানি সংগ্রহ করতেন।
তখনকার সময়ে শহরে অনেক ছোট বড় পুকুর ছিল। দৈনন্দিন কাজে ওইসব পুকুরের পানি ব্যবহার করা হতো। তাছাড়া শহরের রাস্তা-ঘাটের অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। শহরের মাস্টার কোয়ার্টার, রাজনগর, চিড়াকান্দি, নোয়াবাদ এলাকার অধিকাংশ লোক বর্ষার সময় বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতেন। যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল খুবই নাজুক। মাস্টার কোয়ার্টার এলাকায় একটি বড় পুকুর ছিল। তার পাশেই ছিল বড় বাঁশের সাঁকো। তা দিয়ে পাড়ার লোকজন চলাচল করতেন। তাছাড়া শহরের চিড়াকান্দি (বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম জুয়েলের বাসা সংলগ্ন) পুকুর পাড়ে বিশাল বাঁশের সাঁকো ছিল। ওই এলাকার লোকজন এই সাঁকো দিয়ে চলাচল করতেন।
তৎকালীন সময়ে শহরের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল কাঁচা ঘর। এই বিদ্যালয়গুলো ছিল পৌরসভার অধীন। বিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারিদের বেতন পরিশোধ করতো হবিগঞ্জ পৌরসভা। বেতন ছিল খুবই কম। স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব স্কুল জাতীয়করণ করলে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি পায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নতি হয়। তখনকার সময়ে বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ বা বৈদ্যুতিক পাখা ছিল না।