আলাউদ্দিন আল রনি, মাধবপুর থেকে ॥ এক সময়ের লাভজনক সরকারের ৫১ শতাংশ মালিকাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানি এখন মারাত্মক অর্থ সংকটে পড়েছে। কোম্পানির তহবিলে কোন টাকা না থাকায় এনটিসির ১২টি চা বাগান ১৩ দিন ধরে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বেতন আদায়ের দাবিতে বাগানের শ্রমিকরা প্রতিদিন সংশ্লিষ্টদের কাছে এলেও টাকা না থাকায় শ্রমিকদের বকেয়া তলব রেশন প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। কোন উপায়ন্তর না পেয়ে শ্রমিকদের দাবির মুখে কোম্পানি বাগান বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। চা পাতা সংগ্রহের সময় এক নাগাড়ে বাগান বন্ধ থাকায় আগামী অর্থ বছরে আরো বেশি লোকসান হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছ।
এদিকে এনটিসির ১২টি বাগান বন্ধ হয়ে পড়ায় বাগানের ১৭ হাজার নিয়মিত শ্রমিক সহ ৫০ হাজার শ্রমিক পরিবারে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা। এর কারণ হচ্ছে এত সংখ্যক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়লে তারা দুর্বিসহ কষ্টের মধ্যে পড়বে। এনটিসির ১২টি বাগান হচ্ছে মাধবপুরে তেলিয়াপাড়া চা বাগান, জগদীশপুর চা বাগান, চুনারুঘাটের চন্ডিছড়া, পারকুল, মৌলভীবাজারের বিজয়া, প্রেমনগর, খুরমা, চাম্পারায়, মদনমোহনপুর, পাত্রখোলা, মাধবপুর ও সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগান। কোম্পানির দাবি চায়ের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছ। কিন্তু নিলাম বাজারে চায়ের বিক্রয় দর বাড়েনি। এ কারণে এখন প্রতি বছর লোকসান হচ্ছে। লোকসান বেশি হওয়ায় কৃষি ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে না।
জগদীশপুর চা বাগানের শ্রমিক নেতা সন্তোষ মুন্ডা জানান, চা বাগানে শ্রমিক নিম্ন মুজুরির কাজ করে দারিদ্রের সাথে লড়াই করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কিন্তু টাকার অজুহাত দেখিয়ে ১৩ দিন ধরে বাগান বন্ধ থাকায় সাধারণ শ্রমিক পরিবারে এখন তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। এত সংখ্যক শ্রমিক বেকার হয়ে গেলে তাদের মধ্যে মানবিক বিপর্যয় দেখা দেবে। কারণ বাগানের সাধারণ শ্রমিকরা বাইরে গিয়ে সবাই কাজ যোগাড় করতে পারবে না। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভোজন কৈরি বলেন, লোকসান ও ঋণের অজুহাত দেখিয়ে ১২টি চা বাগানে কোম্পানির লোকজন মজুরি ও রেশন দিতে পারছে না। এটি তাদের ঘাপলা থাকতে পারে। কিন্তু সাধারণ শ্রমিকরা সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে তারা মজুরি রেশন পাচ্ছে না। সাধারণ শ্রমিকদের কোন দোষ নেই। বাগানগুলোর প্রতি সরকারের নজর দেওয়া দরকার। কারণ আর কদিন বাগান বন্ধ থাকলে বাগানে শ্রমিকরা না খেয়ে মারা যাবে।
এনটিসির মহাব্যবস্থাপক এমদাদুল হক মিঠু জানান, প্রতি বছর আগস্ট মাসে কৃষি ব্যাংক বাগানের ঋণ মঞ্জুর করে থাকে। এ বছর দেশে চলমান পরিস্থিতির কারণে কৃষি ব্যাংক ঋণ অনুমোদন ও ছাড় দিচ্ছে না। টাকা ছাড় করিয়ে আনতে কোম্পানি পরিচালনা পর্ষদ চেষ্টা করছে। ঋণের টাকা পেলেই শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হবে।