স্টাফ রিপোর্টার ॥ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পাঁচজন জেনারেল ম্যানেজারকে চাকরিচ্যুত এবং সমিতির ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ব্ল্যাক আউট কর্মসূচির অংশ হিসেবে হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন এলাকায় হঠাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রাখার কারণে গোটা জেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন এলাকাসমূহ ছিল বিদ্যুৎবিহীন। এ পরিস্থিতিতে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে অনির্দিষ্টকাল বিদ্যুৎ থাকবে। এ খবরে মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে উঠেন। অবশেষে প্রধান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের অনুরোধে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত করলে মানুষ হাফ ছেড়ে বাঁচেন।
সূত্র জানায়, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) ২০ জন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত এবং ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন জেলায় সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয় পবিস। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আরইবি চেয়ারম্যানের অপসারণ এবং দুই দফা দাবি বাস্তবায়নে ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের হুঁশিয়ারি দেয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন জেলায় ৬১টি সমিতিতে পুরোপুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে প্রতিবাদ জানায় সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এতে ভোগান্তিতে পড়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লাখ লাখ গ্রাহক। তবে বিকেলের দিকে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক প্রকৌশলী রাজন কুমার দাস (এজিএম), প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া (ডিজিএম) দীপক কুমার সিংহসহ (ডিজিএম) দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সমিতির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে আটক করা হয়। এর প্রেক্ষিতে সন্ধ্যায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীদের সমস্যা সমাধান এবং আটকদের ছেড়ে দেওয়া আশ্বাস দিলে রোববার পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হাকিম (এজিএম) গণমাধ্যমকে জানান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমাদের দাবি দেওয়া বিষয়ে আলোচনার জন্য সময় চেয়েছেন, মামলা প্রত্যাহার এবং আটকদের ছেড়ে দেওয়াসহ কোনো প্রকার হয়রানি না করার আশ্বাস দেওয়ায় আমরা কর্মসূচি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
শায়েস্তাগঞ্জ থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানান, ব্ল্যাক আউট কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন এলাকায় হঠাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি হবিগঞ্জ এর সদর দপ্তর শায়েস্তাঞ্জে জড়ো হন সমিতির কর্মচারীরা। সেখানে অবস্থান করে বিক্ষোভ করেন তারা। হঠাৎ ব্ল্যাক আউট হলে স্থানীয় লোকজন পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের গেইটে উপস্থিত হয়ে বিদ্যুৎ চালু করার দাবি তুলেন। খবর পেয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন হাজির হন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- সেনাবাহিনীর ক্যাম্প কমান্ডার মেজর মোঃ শাহিন আলম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা আক্তার মিতা, থানার ওসি দিলীপ কান্ত নাথ, সাবেক পৌর কাউন্সিলর ফাহিন হোসেন, মোহাম্মদ আলী আহাদ, শায়েস্তাগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি মঈনুল হাসান রতনসহ অন্যান্যরা। তারা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজারকে নিয়ে আলোচনায় বসেন।
মেজর মোঃ শাহিন আলম বলেন, দেশের কল্যাণে কাজ করে যেতে হবে। এখানে জনসাধারণের দুর্ভোগ হয় এমন কিছু করা যাবে না। দাবি থাকলে গঠনমূলকভাবে উপস্থাপন করতে হবে। এভাবে বিদ্যুৎ বন্ধ না করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।
এদিকে হঠাৎ জেলাজুড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন এলাকার বাসিন্দারা ভোগান্তিতে পড়েন। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় বিপাকে পড়েন লাখ লাখ মানুষ। রাত ৮টার দিকে জেলার অনেক স্থানে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
উল্লেখ্য, অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন ও অনিয়মিত কর্মীদের নিয়মিতকরণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে সারা দেশের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী।