হবিগঞ্জ শহরে নির্মল বিনোদন ও শিক্ষা কেন্দ্র ঐতিহ্যবাহী পাবলিক লাইব্রেরিটি পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে

বন্যার সময় শহরের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত খোয়াই নদীর পানি উপচিয়ে অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো

মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ হবিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পাবলিক লাইব্রেরিটি পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হবিগঞ্জের বিশিষ্ট আইনজীবী ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন। হবিগঞ্জ সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন- হবিগঞ্জের একটি ঐতিহ্যবাহী ও অন্যতম স্থান ছিল শহরের টাউন হল এলাকাস্থ মিউনিসিপ্যাল পাবলিক লাইব্রেরি। এর সৌন্দর্য্য বর্ধন, পার্ক স্থাপনসহ এই লাইব্রেরিতে প্রাণ ফিরিয়ে আনেন শহরের বাসিন্দা বদিউজ্জামান খান ওরফে খোকা। তৎকালীন সময়ে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারসহ যারাই হবিগঞ্জ এসেছেন সকলেই পাবলিক লাইব্রেরি দেখতে আসতেন। শহরের পাঠকরা লাইন ধরে এসে লাইব্রেরির সামনে ভিড় করতেন। এটি সব সময় লোকে লোকারণ্য থাকতো। লাইব্রেরিতে প্রচুর বইপত্র ছিল। এটি ছিল শহরের একটি নির্মল বিনোদনের জায়গা। কিন্তু কেন কার ঈশারায় বা কার স্বার্থে এটি শহরের অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে সেটি বোধগম্য নয়। এটি অন্যত্র স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন- যারা এটি করেছে তারা হবিগঞ্জের শত্রু। তারা পরিকল্পিতভাবেই এটি করেছে। তারা পরিকল্পিতভাবে শহরের একটি নির্মল বিনোদন ও শিক্ষা কেন্দ্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি আরও বলেন- তৎকালীন সময়ে হবিগঞ্জ শহরে বিদ্যুৎ ছিল না। হবিগঞ্জ শহরে প্রথম বিদ্যুৎ আসে ১৯৬২ সালে। ওই সময় শহরের বাণিজ্যিক এলাকার চৌধুরী ভিলার স্বত্ত্বাধিকারী আসাম প্রদেশের গভর্ণর গুপেন্দ্র লাল দাস চৌধুরী (প্রয়াত কানু চৌধুরীর জেঠা) জেনারেটরের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সংখ্যক গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতেন। ওই সময়ে শহরে দোকানপাটের তেমন আধিক্য ছিল না। তখনকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ছিলেন চক্রবর্তী বাবু, আলম শেঠ, যতীন্দ্র চক্রবর্তীসহ হাতে গোনা গুটি কয়েক ব্যক্তি। যতীন্দ্র চক্রবর্তীর ছিল গ্রোসারী সপ, কদ্দুছ খানের কাপড়ের দোকান, আলম শেঠ এর ডিলারশীপ ব্যবসা। শহরের রাস্তাঘাট তেমন ভাল ছিল না। শহরে তখন প্যাডেল চালিত রিক্সা চলাচল করতো। তবে শায়েস্তাগঞ্জ যাওয়ার জন্য বর্তমান বেবীস্ট্যান্ড এলাকা থেকে বেবীট্যাক্সি (বর্তমানে বিলুপ্ত) চলাচল করতো। এছাড়া অল্প কয়েকটি মোটর সাইকেল চলাচল করতে দেখা যেতো। শহরের মাঝখান দিয়ে খোয়াই নদী প্রবাহিত ছিল। বন্যার সময় পানি উপচিয়ে শহরে প্রবেশ করতো। তখন শহরের অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো। রাস্তার পূর্ব পাশের বাসিন্দারা এতে আক্রান্ত হতো বেশি। তাছাড়া শহরের শ্যামলী, গোসাইনগর, অনন্তপুর, এনাতাবাদ, জঙ্গল বহুলা, মোহনপুরসহ বেশ কিছু এলাকা তৎকালীন সময়ে শহরের অন্তর্ভূক্ত ছিল না। পরে পর্যায়ক্রমে তা শহরের অন্তর্ভূক্ত করা হয়।