মাধবপুর প্রতিনিধি ॥ কয়েকদিন পরেই ৪২ একর পুকুর দিঘির মাছ ধরে বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েছিলেন খামারিরা। কিন্তু ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে সোনাই নদীর পাড় ভেঙ্গে মৎস্য খামার ডুবে কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ঘিলাতলী এলাকায় এবারের বন্যায় এ ঘটনা ঘটেছে। কোটি টাকার মাছ চোখের সামনে দিয়ে ভেসে চলে যেতে দেখে খামারের লোকজন ও মালিকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। মাছ আটক করার পূর্ব কোন প্রস্তুতি থাকলে হয়তো এত ক্ষতি হতো না বলে খামারের লোকজন জানিয়েছেন। খামারের কর্মচারী আবুল খায়ের সহ স্থানীয় লোকজন জানান, গত ২০ আগস্ট থেকে মাধবপুরে ভারতের পশ্চিম ত্রিপুরায় ভারি বর্ষণ হয়। অতি বর্ষণে বহরা ইউনিয়নের ঘুনাপাড়া জোলেখা সফি উদ্দিন ৪২ একর মৎস্য প্রকল্পের বড় কয়েকটি দিঘী পানিতে ডুবু অবস্থা। কিন্তু ২১ আগস্ট রাতে সোনাই নদীর পাড় ভেঙ্গে মুহূর্তের মধ্যে সবকটি দিঘী ডুবে যায়। আর এতেই সর্বনাশ নেমে আসে। রাতের মধ্যেই বিক্রয় উপযোগী প্রায় আড়াই কোটি টাকার মাছ ভেসে যায়। সোনাই নদীর পাড় ভেঙ্গে পানি না ঢুকলে এত ক্ষতি হতো না। সর্বনাশা নদীর বান সবকিছু কেড়ে নিয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান জানান, গেল বন্যায় কমবেশি সব মৎস্য খামারির পুকুর দিঘী ডুবেছে। তবে জোলেখা সফি উদ্দিন মৎস্য প্রকল্পের ৪২ একর পুকুর দিঘী ডুবে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। সোনাই নদীর বাধ ভেঙ্গে এমন সর্বনাশ হয়েছে আমরা এলাকাবাসি এমন ক্ষতি দেখে হতাশ হয়েছি। সোনাই নদী থেকে বালু তোলায় পাড় ভেঙ্গে এখন লোকালয় প্লাবিত হয়ে পুকুর দিঘী ডুবে মৎস্য খামারিরা লোকসানের মধ্যে পড়েছেন।
খামারির মালিক কাজী জালাল উদ্দিন আহমেদ জানান, দীর্ঘ ৩০ বছর মাছের খামার পরিচালনা করে আসছি। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আগে কখনো পড়িনি। এবার পাহাড়ি ঢল ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সোনাই নদীর পাড় ভেঙ্গে প্রায় দুই কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। এখন আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আবার খামার চালু করতে পারব কি-না চিন্তার মধ্যে পড়েছি। অপর খামারি মোর্শেদ কামাল জানান, আন্দিউড়া গ্রামের বন্যার পানিতে কমপক্ষে ২০ জন খামারির ৫০টি বড় পুকুর ডুবে ৫০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। এখন খামারিরা নতুন করে কিভাবে মৎস্য চাষ করবেন এ নিয়ে চিন্তার মধ্যে আছেন।
মাধবপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু আসাদ ফরিদুল হক জানান, মাধবপুরে দুদফা বন্যায় মৎস্য খামার পানিতে ডুবে মাছ ভেসে গেছে। সর্বশেষ গেল বন্যায় ৪শ অধিক পুকুর বন্যার পানিতে ডুবে ফলন্ত মাছ ভেসে গেছে। এখনো সঠিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করা যায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে খামারিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে ক্ষতির পরিমাণ ৬ কোটি টাকার ওপরে হবে।