হবিগঞ্জ শহরের রয়েছে অনেক গৌরবগাঁথা। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সমৃদ্ধ ইতিহাস। একশ’ বছর আগে কেমন ছিল হবিগঞ্জ শহর, খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গের সফলতা, অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্মকথা থাকছে মঈন উদ্দিন আহমেদ এর ‘হবিগঞ্জ শহরের একশ’ বছরের ইতিকথা’ শীর্ষক ধারাবাহিক প্রতিবেদনে। কালের বিবর্তনে হবিগঞ্জ শহর সৃষ্টি করেছে অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য, থাকবে সেসব কথাও। অনেকটা সাক্ষাতকার ভিত্তিক এ প্রতিবেদনে কারো কোন সংযোজন-বিয়োজন, কিংবা পরামর্শ থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা আপনার তথ্য-উপাত্ত গুরুত্বের সাথে প্রকাশের চেষ্টা করব।

মেয়েরা অবাধে রেস্টুরেন্টে বসে খেতে পারতো না ॥ সন্ধ্যার পর ছেলেদের বাইরে বের হওয়া নিষেধ ছিল

হবিগঞ্জ শহরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের মধ্যে মোহাম্মদ শাহ আলম (আলম শেঠ), কদ্দুছ খান, ঈশ^র পাল, শ্রীশ পাল, পান্ডব পাল, যতীন্দ্র পাল, মমতাজ উদ্দিন ছিলেন উল্লেখযোগ্য
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বৃন্দাবন কলেজ, গভঃ হাই স্কুল (হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়), যোগেন্দ্র কিশোর এন্ড হরেন্দ্র কিশোর (জে,কে এন্ড এইচ,কে) উচ্চ বিদ্যালয়, বিকেজিসি (বসন্ত কুমারী গোপাল চন্দ্র) সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, হবিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় (বর্তমান হবিগঞ্জ হাই স্কুল এন্ড কলেজ), হবিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ছিল উল্লেখযোগ্য।
হবিগঞ্জ শহরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের মধ্যে মোহাম্মদ শাহ আলম (আলম শেঠ), কুদ্দুছ খান, ঈশ^র পাল, শ্রীশ পাল, পান্ডব পাল, যতীন্দ্র পাল, মমতাজ উদ্দিন ছিলেন উল্লেখযোগ্য। হবিগঞ্জ শহরে প্রতি শুক্রবার ও মঙ্গলবার সপ্তাহে দুই দিন হাট বসতো। এই হাটে পাইকারী মালামাল বিক্রি হতো। তৎকালীন সময়ে এক ফাঁড়ি (৬ কেজি) কার্তিক শাইল, নাজির শাইল চাউল বিক্রি হতো সাড়ে তিন থেকে ৪ টাকায়। ৬০ এর দশকের পর থেকে এর দাম বাড়তে থাকে। তৎকালীন সময়ে রাস্তায় ওপেন (খোলা) দোকান-পাট ছিল না। মেয়েরা অবাধে হোটেল রেস্তোরাঁয় বসে খেতে পারতো না। সন্ধ্যার পর ছেলেদের বাইরে বের হওয়া নিষেধ ছিল। প্রয়োজনে যেতে হলে অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে বাইরে যেতে হতো। প্রত্যেকের মধ্যেই নীতি-নৈতিকতা ছিল। শ্রদ্ধা, ভক্তি ছিল। হবিগঞ্জ ছিল একটি শান্ত ও নিরিবিলি শহর। রাত ৮টার পর শহরের লোকজন তেমন একটা চলাচল করতেন না। ফলে রাত ৮টার পর শহরে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করতো। নাগরিক সুযোগ সুবিধা তেমন একটা ছিল না। বর্ষাকালে ঘন ঘন বন্যা হতো। বর্তমান সার্কিট হাউজ, এসডিও’র বাংলো (বর্তমানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়) পানিতে তলিয়ে যেতো। বর্তমান জেলা পরিষদ ভবনের স্থানে ছিল খোয়াই নদীর বিরাট ডহর। দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ এর এ প্রতিবেদকের কাছে এসব তথ্য তুলে ধরেন প্রবীণ সাংবাদিক অ্যাডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল।
তিনি জানান, হবিগঞ্জকে এক সময় পুকুরের শহর বলা হতো। কালের আবর্তে এখন আর সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না। শহরের অনেক পুকুর ভরাট করে বাসগৃহ, দালান কোটা নির্মাণ করা হয়েছে। তিন কোনা পুকুর ছিল শহরের একটি অতি পরিচিত পুকুরের নাম। এর মাঝে লাল শাপলা ফুল ফুটতো। এটি দেখতে খুবই নয়নাভিরাম ছিল। যদিও এখন এটি অনেক ছোট হয়ে গেছে। তাছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গভঃ হাই স্কুল (হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়) এর বেশ সুনাম ছিল। এই স্কুলে অনেক কৃতিমান পুরুষ লেখাপড়া করে দেশ বিদেশে নাম কুড়িয়েছেন। স্কুলে মুসলিম হোস্টেল ও হিন্দু হোস্টেল নামে আলাদা দুটি হোস্টেল ছিল। বর্তমানে স্কুলে সকলের জন্য একটি বৃহৎ হোস্টেল চালু রয়েছে। যেখানে সবাই পরস্পরে ভাই ভাই হিসেবে একত্রে বসবাস করেন। তৎকালীন সময়ে ওই হোস্টেলে থেকে মাধবপুর উপজেলার বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান সায়হাম পরিবারের ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মোহাম্মদ হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ শাহজাহান, হবিগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ ফজলুর রহমান চৌধুরীসহ উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা লেখাপড়া করেছেন। খেলাধুলার প্রাণ কেন্দ্র ছিল জালাল স্টেডিয়াম। আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রাণ কেন্দ্র ছিল শিরিষতলা। তৎকালীন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, মিলন ক্লাব, ইউএফসি ক্লাব, পইল একাদশ ছিল উল্লেখযোগ্য। ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ঢাকা থেকে জাতীয় দলের খেলোয়াড় আনা হতো। তারা এসে হবিগঞ্জের মাঠ মাতাতেন। তখন খেলায় প্রচুর দর্শক সমাগম হতো। বর্তমান নিউফিল্ড মাঠে কৃষি শিল্প মেলা হতো, তা ছিল রুচিসম্মত। ওই মেলায় পরিবার পরিজন নিয়ে যাওয়া যেতো। কিন্তু এখন আর সেই পরিবেশ নেই।