হবিগঞ্জ শহরের রয়েছে অনেক গৌরবগাঁথা। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সমৃদ্ধ ইতিহাস। একশ’ বছর আগে কেমন ছিল হবিগঞ্জ শহর, খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গের সফলতা, অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্মকথা থাকছে মঈন উদ্দিন আহমেদ এর ‘হবিগঞ্জ শহরের একশ’ বছরের ইতিকথা’ শীর্ষক ধারাবাহিক প্রতিবেদনে। কালের বিবর্তনে হবিগঞ্জ শহর সৃষ্টি করেছে অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য, থাকবে সেসব কথাও। অনেকটা সাক্ষাতকার ভিত্তিক এ প্রতিবেদনে কারো কোন সংযোজন-বিয়োজন, কিংবা পরামর্শ থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা আপনার তথ্য-উপাত্ত গুরুত্বের সাথে প্রকাশের চেষ্টা করব।

প্রাচীন আমলে হবিগঞ্জ পৌর এলাকার অধিকাংশ বাসা-বাড়ি ছিল কাঠ ও টিনের ॥ অনেক বাসগৃহ ছিল ছনের

মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ তথ্যানুসারে সুফি সাধক হযরত শাহজালাল (রঃ) এর অনুসারী সৈয়দ নাছির উদ্দিন (রঃ) এর পূণ্যস্মৃতি বিজড়িত খোয়াই, করাঙ্গী, সুতাং, বিজনা, রতœা প্রভৃতি নদী বিধৌত হবিগঞ্জ একটি ঐতিহাসিক জনপদের নাম। ঐতিহাসিক সুলতানসী হাবেলীর প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ সুলতানের অধঃস্তন পুরুষ সৈয়দ হেদায়েত উল্লাহ’র পুত্র সৈয়দ হবিব উল্লাহ খোয়াই নদীর তীরে একটি গঞ্জ বা বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর নামানুসারে হবিবগঞ্জ থেকে কালক্রমে তা হবিগঞ্জে পরিণত হয়। ইংরেজ শাসনামলে ১৮৬৭ সালে হবিগঞ্জকে মহকুমা ঘোষণা করা হয় এবং ১৮৭৮ সালে হবিগঞ্জ মহকুমা গঠন করা হয়। আসাম প্রাদেশিক সরকারের ২৭৩ নং নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ১৮৯৩ সালের ৭ এপ্রিল হবিগঞ্জ থানা গঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন) এর অফিস স্থাপিত হয় এবং সর্বশেষ ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ (১৭ ফাল্গুন ১৩৯০ বাংলা) জেলায় উন্নীত হয়। হবিগঞ্জ জেলার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান হচ্ছে হবিগঞ্জ পৌরসভা। ১৮৮১ সালে হবিগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হয়। আর ১৯৪০ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্থাপিত হয় মিউনিসিপ্যাল অফিস বিল্ডিং হবিগঞ্জ ফাউন্ডেশন। হবিগঞ্জ পৌরসভা একটি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সংগঠন। এটি ‘ক’ শ্রেণিভূক্ত অর্থাৎ প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। এর আয়তন ৯.০৫ বর্গ কিলোমিটার।
হবিগঞ্জ পৌরসভা প্রসঙ্গে হবিগঞ্জের বিশিষ্ট সাংবাদিক অ্যাডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল বলেন, জন্মসূত্রেই তিনি হবিগঞ্জ পৌরসভার নাগরিক। ১৯৪০ সালে তার পিতা অ্যাডভোকেট শাহাব উদ্দিন আহমেদ হবিগঞ্জ শহরের রাজনগরে এসে বসবাস শুরু করেন। প্রথমে এটি মিউনিসিপ্যাল অফিস বিল্ডিং হবিগঞ্জ ফাউন্ডেশন নামে পরিচালিত হতো। পরে পৌরসভা নামকরণ করা হয়। এটি আয়তনে অনেক ছোট ছিল। পৌরসভার তখনকার জনসংখ্যা ছিল ৮ থেকে ১০ হাজার। বর্তমানে যেসব এলাকা পৌরসভার অন্তর্ভূক্ত প্রথমদিকে এর অনেক এলাকাই পৌরসভায় অন্তর্ভূক্ত ছিল না। পরবর্তীতে নতুন করে অনেক এলাকা পৌরসভায় অন্তর্ভূক্ত করা হলে পৌরসভার পরিধি বৃদ্ধি পায়।
তৎকালীন সময়ে পৌরসভার অবকাঠামো অর্থাৎ বাসা-বাড়ি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পৌরসভার অধিকাংশ বাসা-বাড়ি ছিল কাঠ ও টিনের। আবার অনেক বাসগৃহ ছিল ছনের তৈরী। পাকা গৃহ ছিল না বললেই চলে। তৎকালীন সময়ে পাকা বিল্ডিং হিসেবে শহরের পুরাতন হাসপাতাল এলাকাস্থ ডাঃ তপন কুমার দাশগুপ্তের বাসভবন ‘উমেশ ভবন’ ছিল উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সম্মুখস্থ (বর্তমান জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম) লোকাল বোর্ড বিল্ডিং, এসডিও (মহকুমা প্রশাসক) এর বাসভবন, কালেক্টরেট ভবন, আলমশেঠ বিল্ডিং, রাজনগরের মতিন মিয়া কন্ডাক্টর (ঠিকাদার) এর বাসভবন ছিল তৎকালীন সময়ের উল্লেখযোগ্য পাকা ভবন। তৎকালীন সময়ে শহরে চলাচলের একমাত্র বাহন ছিল প্যাডেল চালিত রিক্সা। শহরের রাস্তা-ঘাট ছিল খুবই জরাজীর্ণ। পশ্চিম দিকের ব্যাক রোডে ছিল ইটের সুড়কি বিছানো, আধা কাঁচা রাস্তা। রাস্তা খারাপ থাকায় ওই রোড দিয়ে রিক্সা আসতে চাইতো না। পায়ে হেঁটে গিয়ে সামনের রাস্তা (বর্তমানের প্রধান সড়ক) থেকে রিক্সা আনতে হতো। আর মহিলাদের চলাচলে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করা হতো। রিক্সায় শাড়ি কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে (পেছিয়ে) মহিলাদের এক স্থান হতে অন্য স্থানে যেতে হতো, যাতে রিক্সায় চলাচলের সময় পরপুরুষ তাকে দেখতে না পারে।