রিবন রূপা দাশ সুদে আনা টাকায় ঋণগ্রস্ত ছিলেন। সুদখোরদের যন্ত্রণায় তিনি অতিষ্ঠ ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে- সুদখোরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি বিষপানে মারা গেছেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার ভবানীপুরের হাওর এলাকা ঝনঝনিয়া ব্রীজের নিকট থেকে ভরপূর্ণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রিবন রূপা দাশ (৪০) এর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার বিকেলে বিষাক্রান্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি লাখাই মুক্তিযোদ্ধা কলেজের শিক্ষক অজয় চন্দ্র দাশের স্ত্রী। তার শিশুবয়সী দুটি সন্তান রয়েছে। তিনি সপরিবারে হবিগঞ্জ শহরের পুরান মুন্সেফী এলাকায় বসবাস করতেন।
লাখাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল খায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ঝনঝনিয়া ব্রীজের নিকট থেকে তার মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ আড়াইশ শয্যা জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। তার শরীরে কোথাও কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তার সাথে থাকা ভ্যানেটি ব্যাগ, মোবাইল ফোন, চেক বইয়ের পাতা ও ব্যাংকের এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহের কাছে দু’টি বিষের বোতল পাওয়া গেছে। একটি ব্যবহৃত এবং অপরটি অব্যবহৃত।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, রিবন রূপা দাশ সুদে আনা টাকায় ঋণগ্রস্ত ছিলেন। তিনি সুদখোরদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ ছিলেন। এ পরিস্থিতিতে ধারণা করা হচ্ছে- সুদখোরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি বিষপানে মারা গেছেন। বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে মৃত্যুর আগে রিবন রূপা দাশ একটি সুইসাইড নোট লিখে গেছেন। সেই সুইসাইড নোট পুলিশ পেয়েছে।
ফেসবুকে জীবনের শেষ স্ট্যাটাস ঃ শিক্ষিকা রিবন রূপা দাশ তার ফেসবুক আইডিতে মৃত্যুর দুদিন আগে জীবনের শেষ স্ট্যাটাসে নিজের মৃত্যুর আভাস দিয়ে গেছেন। ওই স্ট্যাটাসে স্বামী ও সন্তানদের সাথে মোট ৪টি ছবি দেন। তার স্ট্যাটাসটি নি¤েœ হুবহু তুলে ধরা হলো-

“দেখো আলোয় আলো আকাশ
দেখো আকাশ তারায় ভরা,
দেখো যাওয়ার পথের পাশে
ছোটে হাওয়া পাগল পারা।
এত আনন্দ আয়োজন সবই বৃথা আমায় ছাড়া…
ভরে থাকুক আমার মুঠো
থাকুক দুই চোখে ধারা,
এলো সময় রাজার মতো
হলো কাজের হিসেব সারা…।
এত আনন্দ আয়োজন সবই বৃথা আমায় ছাড়া।”

দেশসেরা কন্টেন্ট নির্মাতার স্বীকৃতি ঃ দেশসেরা কন্টেন্ট নির্মাতার স্বীকৃতি পাবার পর রিবন রূপা দাশ ফেসবুকে নিজের আনন্দময় অনুভূতি ব্যক্ত করেন। তার অনুভূতি নি¤œরূপ-
রাত সাড়ে আটটা তখন। আমি তখন রান্না করছিলাম হঠাৎ খঁশু ইরংধিং এর ফোন, দিদি মিষ্টি কই? কিসের মিষ্টি গো। ওপাশ থেকেই আপনি চলতি পাক্ষিক সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা হয়েছেন। আনন্দে চোখে জল চলে আসলো। সাথে সাথে আমার পেছনের মূল চালিকাশক্তি সুবর্না রায় লিপা ফোন দিলেন, কই থাকেন আপনি? ফেসবুক দেখেন তো একটু। ততক্ষণে মাছ ভাজা পুড়ে একাকার।
দেশসেরা কন্টেন্ট নির্মাতার স্বীকৃতি পাবার জন্য তিনি অনেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বিশেষ করে নিজের স্বামী অজয় কুমার দাশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এতে তিনি লিখেন- উনার সর্বাঙ্গীন সহযোগিতা সারা রাতভর জেগে বাতায়নে কাজ করেছি, নাওয়া-খাওয়ার খবর নেই, কতো বিনিদ্র রজনী কেটেছে বাতায়নে আকাশে একবার উড়বো বলে।
তার এই প্রাপ্তির জন্য হবিগঞ্জের তৎকালীন জেলা জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। জেলা প্রশাসকের উৎসাহে তার কর্মস্পৃহা চতুর্গুণ বাড়িয়ে দেয় বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রিবন রূপা দাশ।
শিক্ষিকা রিবন রূপা দাশ নিজেকে ভবানীপুর বড়বাড়ির বড় বৌ হিসেবে পরিচয় দিয়ে গর্ববোধ করতেন। তিনি মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে এমএ (মাস্টার্স) বাংলায় অধ্যয়ন করেন।
সফলতায় ভরপুর ভরপূর্ণি প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা রিবন রূপা দাশের কর্মকাল ঃ রিবন রূপ দাশ মাইক্রোসফ্ট শিক্ষাবিদ এ এমআইই বিশেষজ্ঞ। তিনি মাস্টার ট্রেইনার, বিষয়ভিত্তিক বাংলা, শিক্ষক বাতায়নে দেশ সেরা উদ্ভাবক ২০২২, জেলা প্রশাসন হবিগঞ্জ থেকে শিক্ষক সম্মাননা ২০২২ শ্রেষ্ঠ পুরস্কার অর্জন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে করোনাযোদ্ধা শিক্ষক সম্মাননা ২০২১ অর্জন, ১৫১তম কাব স্কিল কোর্স সম্পন্নকারী, অনলাইন ক্লাস গ্রহণকারী সেরা শিক্ষক প্রথম স্থান অধিকারী ২০২০, প্রাথমিক পর্যায়ে হবিগঞ্জ জেলায় ৪৪২তম কাব স্কাউট ইউনিট লিডার, ওয়াকেলেট কমিউনিটি লিডারে কাজের অভিজ্ঞতা, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ শিক্ষক ঐক্য পরিষদ, হবিগঞ্জ জেলা, সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা, ২০২১, উদ্ভাবক ২০২১ জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচিত, দুর্বার এ্যাম্বাসেডর মডার্ণ প্র্যাকটিস ট্রেণিং এ সরকারি সফরে ভিয়েতনাম সফর ২৩ জুলাই ২০১৯, এটুআইতে তথ্য অ্যাক্সেস করার জন্য আইসিটিফোরই ডিস্ট্রিক্ট অ্যাম্বাসেডরে কাজ করেন, লাখাই উপজেলার শ্রেষ্ঠ নারী জয়িতা, হবিগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা ২০১৮, গহীন অরণ্যে, আত্মশুদ্ধি ও সম্পর্কের সমীকরণ গল্প ও কবিতার বইয়ের লেখিকা।