আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ টানা প্রায় এক মাসের তীব্র তাপদাহে পুড়ছে চুনারুঘাট উপজেলার লস্করপুর ভ্যালীর ২৪টি চা বাগান। তাপদাহে ইতোমধ্যে চা বাগানের অনেক গাছ পুড়ে যাচ্ছে। এতে মওসুমের শুরুতেই উৎপাদনে মারাত্বক ক্ষতির মধ্যে পড়েছে চা শিল্প। নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে চা বাগানগুলো। অপরদিকে তীব্র তাপদাহে কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেক চা শ্রমিক। নিরিখ এবং মজুরি বাড়াতে গিয়ে সারাদিন কাজ করছেন শ্রমিকরা। তীব্র তাপদাহেও তাদের ছুটি না থাকায় এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চা শ্রমিক নেতারা।
উপজেলার লস্করপুর ভ্যালীর ছোটবড় ২৪টি চা বাগান রয়েছে। দেশীয় এবং বিদেশী কোম্পানীর এসব চা বাগানে চলতি বছরের মার্চ মাসে চা পাতা চয়নের শুরু থেকেই পড়ে খরার কবলে। একই সময়ে চায়ের মওসুমও শুরু হয়। চলতি বছরের ৮ মার্চ থেকে দেশে তাপদাহ শুরু হয়। সাধারণত চা গাছ সর্বোচ্চ ২৯ ডিগ্রী পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। এর উপরে হলেই চা গাছ খরায় পুড়বে। গাছে গাছে সবুজ পাতায় ভরে উঠতেই তাপদাহের কবলে পড়ে চা গাছগুলো বিবর্ণ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় হাতে গোনা কয়েকটি চা বাগান কৃত্রিম ভাবে পানি ছিটিয়ে গাছগুলো সতেজ রাখার চেষ্ঠা করেও ব্যর্থ হয়। অধিকাংশ চা বাগানের চা গাছ এখন জ¦লে মরছে। ফলে চা চয়ন করতে গিয়েও বাগান কর্তৃপক্ষ বেকায়দায় পড়েছে। একদিকে গাছে পাতা নেই, অন্যদিকে তাপদাহে পুড়ে পুড়ে পাতা সংগ্রহ করছেন শ্রমিকরা। তারা তাদের দৈনিক পাতা উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা ২১ কেজি করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। তাছাড়া ২১ কেজির বাইরে অতিরিক্ত চা চয়নের জন্য কাজ করতে গিয়ে চা শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
সরজমিনে চান্দপুর চা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, প্রচন্ড গরমের মধ্যে চা শ্রমিকরা চা পাতা চয়ন করছেন। নির্ধারিত হাজিরা ১৭০ টাকা পেতে হলে শ্রমিকদের ২১ কেজি পাতা তুলতে হবে। তাছাড়া অনেকেই অতিরিক্ত হাজিরার জন্য পাতা তুলে থাকেন। এ অবস্থায় অনেক চা শ্রমিক অসুস্থ হয়ে কাজে যেতে পারছেন না। চান্দপুর চা বাগানের সন্ধ্যা রানী ভৌমিক জানান, রোদ গরম চিন্তা করলে আমাদের পেটে ভাত পড়বে না। আমাদের ২১ কেজি পাতা তুলতেই হবে। এত গরমে কাজ করতে গিয়ে আমাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তারপরও অতিরিক্ত হাজিরার কাজ করতে হয়।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল জানান, একদিকে তাপদাহে চা পাতা নেই, অন্যদিকে নিরিখের চা পাতা না তুললে মজুরি কমে যাবে তাই শ্রমিকরা বাধ্য হয়েই তীব্র গরমের মধ্যে কাজ করছে। এতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তিনি গরমের কারণে চা শ্রমিকদের নিরিখ ২১ কেজি থেকে কমিয়ে ১৫ কেজি করার দাবি জানান।
চা শ্রমিক নেতা কাঞ্চন পাত্র বলেন, এই গরমে কাজ করতে গিয়ে অনেকেই অসুস্থ হচ্ছে, অথচ বাগান থেকে সেই চিকিৎসাটুকুও তারা পাচ্ছে না। তিনি চা শ্রমিকদের তাপদাহের মধ্যে কয়েকদিন ছুটির দাবি জানান।
এ ব্যাপারে চন্ডিছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক সেলিমুর রহমান বলেন, তীব্র তাপদাহের কারণে মওসুমের শুরুতেই চা উৎপাদন মুখ থুবড়ে পড়েছে। চা পাতা নির্ধারিত সময়ে না তুললে নষ্ঠ হয়ে যাবে। তাই যা পাওয়া যায় তুলতে হচ্ছে। এছাড়া এবার মওসুমের শুরুতেই তীব্র খরার কবলে পড়েছে ভ্যালীর চা বাগানগুলো। এমনিতেই এবার বাগানগুলোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।