মোঃ মামুন চৌধুরী ॥ বাহুবল উপজেলার ভুলকোট গ্রামের কৃষক সানু মিয়া। মাত্র ১০ শতক জমিতে স্কোয়াশ চাষ করেছেন। তার মতো অন্যরাও স্কোয়াশ চাষ করেছেন। তবে তার ক্ষেত অন্যদের চেয়ে আলাদা। একবার তাকালেই নজর আটকে যায়। এ নিয়ে ৫ বার স্কোয়াশ চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন তিনি।
সানু মিয়া স্থানীয় কৃষিভাগের পরামর্শ গ্রহণ করে চলতি বছর এ সবজি চাষ করেন। এতে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮ হাজার টাকা। বিক্রি হবে অন্তত ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকা বলে জানান তিনি।
কৃষক সানু মিয়া বলেন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম স্যারের কাছ থেকে পরামর্শ পেয়ে শ্রম দিয়েছি। ক্ষেতে সবুজ ও হলুদ রঙের স্কোয়াশের ভাল ফলন হয়েছে। মালচিং পদ্ধতিতে চাষে ব্যবহার করা হয়েছে ফেরোমন ও হলুদ ফাঁদ। স্কোয়াশ বিক্রি শুরু করেছেন তিনি। তিনি জানান, শীতকালে চাষের জন্য অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে বীজ বপন করতে হয়। বীজের আকারের দ্বিগুণ পরিমাণ গভীরতায় বীজ পুঁতে দিতে হয়। চারা লাগানো থেকে শুরু করে ফল সংগ্রহ পর্যন্ত জমি সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হয়। পরাগায়নের ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। তখনও ফলে সবুজ ও হলুদ রঙ থাকবে এবং ফল মসৃণ ও উজ্জ্বল দেখাবে। নখ দিয়ে ফলের গায়ে চাপ দিলে নখ সহজেই ভেতরে ঢুকে যাবে।
সানু মিয়ার ছেলে কৃষক জসিম উদ্দিন বলেন, বাম্পার ফলন দেখে এলাকার অন্যান্য চাষিরা স্কোয়াশ চাষে আগ্রহী হয়েছেন। ক্ষেত ভরা স্কোয়াশ দেখলে মনটা আনন্দে ভরে ওঠে।
উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম বলেন, পরামর্শ দিয়ে সার্বিকভাবে সহায়তা করেছি। কৃষক সানু মিয়া ক্ষেতে স্কোয়াশ চাষ করে লাভবান। তার ন্যায় অন্য কৃষকরাও স্কোয়াশ চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
তিনি বলেন, স্কোয়াশ একটি সুস্বাদু ও জনপ্রিয় সবজি হিসেবে বিদেশিদের কাছে অনেক আগে থেকেই পরিচিত। বর্তমানে দেশে স্কোয়াশ একটি উচ্চমূল্যের ফসল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ সবজির চাষাবাদ বাড়ছে। তুলনামূলকভাবে কম উর্বর জমি এবং চরাঞ্চলে স্কোয়াশের চাষাবাদ সম্প্রসারিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, স্কোয়াশ দ্রুত বর্ধনশীল। সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার ফল সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করা যায়। সবজিটির পাইকারি দাম ৫০ টাকা কেজি। তবে এটি খুচরা ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
পুষ্টিগুণ সম্পর্কে তিনি বলেন, স্কোয়াশ সাধারণ কুমড়ার মতো সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এর খাদ্য ও পুষ্টিগুণ কুমড়ার চেয়ে অনেক বেশি। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ও হার্টের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। স্কোয়াশে একই সঙ্গে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই ও ভিটামিন বি-৬ এবং নায়াসিন, থায়ামিন, প্যানথোটোমিন এসিড ও ফলিড। এছাড়া স্কোয়াশ ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, খনিজ, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ক্যারোটিনয়েড এবং অন্যান্য অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানে ভরপুর। নিয়মিত স্কোয়াশ খেলে ফ্রি রেডিকেলসের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করা সম্ভব।
জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার কৃষিবিদ মোঃ আশেক পারভেজ বলেন, স্কোয়াশ চাষে কৃষকদের উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে। এ সবজি চাষে প্রচুর লাভবান হওয়া সম্ভব। ভুলকোটে স্কোয়াশ চাষে কৃষক সানু মিয়ার সাফল্য এসেছে। তিনি আরও বলেন, স্কোয়াশ শরীরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও বিটা ক্যারোটিন সরবরাহ করে। যা আমাদের চোখের জন্য খুবই উপকারী। এটি হাড়ের গঠন, হাড়ের শক্তি ও ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। এছাড়া হাইপার টেনশনের রোগীদের জন্য স্কোয়াশ খুবই উপকারী। স্কোয়াশ রক্ত চাপকে কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। বর্তমানে অনেকেই বাড়ির ছাদে, ফুলের টবে সবজি কিংবা ফল গাছ লাগান। সেক্ষেত্রে ছাদ, ফুলের টব বা পতিত জায়গায় স্কোয়াশও লাগাতে পারেন। কারণ এতে জায়গা খুবই কম লাগে। ফলন আসে প্রচুর।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com