বিপুল ভোটে ৪র্থ বারের মতো এমপি হতে যাচ্ছেন আবু জাহির
এসএম সুরুজ আলী ॥ আজ রবিবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনে হবিগঞ্জের ৪টি আসনে ৩১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। প্রার্থীদের মধ্যে হবিগঞ্জ-১ আসনে ৫ জন, হবিগঞ্জ-২ আসনে ৯ জন, হবিগঞ্জ-৩ আসনে ৯ জন এবং হবিগঞ্জ-৪ আসনে ৮ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন হবিগঞ্জ-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী মোহাম্মদ শাহেদ (ট্রাক) ও হবিগঞ্জ-২ আসনে জাপা মনোনীত প্রার্থী শংকর পাল (লাঙ্গল)। তবে ব্যালটে তাদের নাম ও মার্কা থাকছে। সকাল ৮টা থেকে ৪টি আসনের ৬৩৫টি ভোটকেন্দ্রে ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহন করা হবে। কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ৬১টি কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে।
হবিগঞ্জের চারটি আসনের বিভিন্ন স্থান ঘুরে বেড়িয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিগণ। বিভিন্ন আড্ডায় আলোচনায় উঠে এসেছে নির্বাচনী হালচাল। অধিকাংশ মানুষের আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে কোন আসনে কার সাথে কার লড়াই হবে। অধিকাংশ মানুষের মতে হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ) আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির (নৌকা) এর সাথে ভোটের লড়াই করার মতো শক্তিশালী কোন প্রার্থী না থাকায় তিনি টানা ৪র্থ বারের মতো বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু (লাঙ্গল) বনাম স্বতন্ত্র প্রার্থী আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর (ঈগল) লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল (নৌকা) বনাম স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল মজিদ খান (ঈগল) এর মধ্যেও ভোটের লড়াই হবে তীব্র। হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. মাহবুব আলী (নৌকা) বনাম স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন (ঈগল) এর মধ্যে নির্বাচনী লড়াই সারা দেশে ঝড় তুলেছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আলোচিত ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন প্রার্থী হওয়ায় এ আসনটি আলোচনায় আসে। দেশ-বিদেশের মানুষ অনেক অপেক্ষায় আছেন কে এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হবেন। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বিএনপি বিহীন এই নির্বাচনে হবিগঞ্জে ১৩টি দল অংশ নিয়েছে। হবিগঞ্জের ৪টি আসনে প্রার্থীরা হলেন- হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী (ঈগল), স্বতন্ত্র গাজী মোহাম্মদ শাহেদ (ট্রাক), ইসলামী ঐক্যজোটের মোস্তাক আহমেদ ফারকানী (মিনার) ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মোঃ নুরুল হক (গামছা)। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৩১ হাজার ৪২২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ১৭ হাজার ৮৭৬ ও মহিলা ২ লাখ ১৩ হাজার ৫৪৪ জন। ভোট কেন্দ্র ১৭৭টি।
হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল (নৌকা), স্বতন্ত্র বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল মজিদ খান (ঈগল), জাতীয় পার্টির শংকর পাল (লাঙ্গল), বিএনএম এর এস এ এম সোহাগ (নোঙ্গর), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের অ্যাডভোকেট মনমোহন দেবনাথ (গামছা), তৃণমূল বিএনপি’র খায়রুল আলম (সোনালী আশ), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ (চেয়ার), বাংলাদেশ কংগ্রেস মোঃ জিয়াউর রশিদ (ডাব) ও ইসলামী ঐক্যজোটের শেখ হিফজুর রহমান (মিনার)। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৩৩৪জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৮৬ হাজার ১৪৬ জন ও মহিলা ১ লাখ ৮২ হাজার ১৮৮ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ১৫০টি।
হবিগঞ্জ-৩ (হবিগঞ্জ সদর-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ) আসনে আওয়ামীলীগের অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির (নৌকা), জাতীয় পার্টির এমএ মুমিন চৌধুরী বুলবুল (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির মোঃ আব্দুল কাদির (আম), বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন এর মোঃ আদম আলী (ফুলের মালা), জাকের পার্টির মোঃ আনছারুল হক (গোলাপ ফুল), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর মোঃ আব্দুল ওয়াহেদ (চেয়ার), বাংলাদেশ কংগ্রেস এর মোঃ নোমান হাছান (ডাব), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) এর মোঃ বদরুল আলম সিদ্দিকী (নোঙ্গর) ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মোঃ শাহীনুর রহমান (ছড়ি)। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৬৮১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬১৬ জন ও মহিলা ১ লাখ ৯২ হাজার ৫৫ জন। ভোট কেন্দ্র ১৩১টি।
হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. মাহবুব আলী (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন (ঈগল), জাতীয় পার্টির প্রার্থী আহাদ উদ্দিন চৌধুরী (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আল আমিন (ডাব), ইসলামি ঐক্যজোট বাংলাদেশের আবু ছালেহ (মিনার), বিএনএম এর মো. মুখলেছুর রহমান (নোঙ্গর), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মো. আব্দুল মুমিন (চেয়ার) ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক ঐক্যজোটের মো. রাশেদুল ইসলাম খোকন (ছড়ি)। এ আসনে মোট ভোটার ৫ লাখ ১২ হাজার ৩০৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৪ জন ও মহিলা ২ লাখ ৫৪ হাজার ৪২৩ জন।
নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেট র্যাব, পুলিশ, আনসার ভিডিপি দায়িত্ব পালন করবেন। ৪টি আসনে ২৯জন ম্যাজিস্ট্রেট, ১ হাজার ৮৭৫জন পুলিশ দায়িত্ব পালন করবেন। ১৭ প্লাটুন বিজিবি ও প্রতিটি আসনে র্যাবের ২টি টিম, আনসার ৯টি টিম ও র্যাবের টহলের ৮টি টিম দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়াও পুলিশের ৮টি তদারকি টিম, ৯টি স্পেশাল স্ট্রাইকিং ফোর্স নির্বাচনে সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী। জেলার ৪টি আসনে মোট ভোটার ১৭ লাখ ১ হাজার ৭৪৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫২২ জন ও মহিলা ৮ লাখ ৪২ হাজার ২১০ জন।